সাডেন ডেথ

চিন দূর অস্ত্, পুণেই এখন আমাদের প্রথম এভারেস্ট

সাত দিনে তিনটে ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। তার মধ্যে একটা এশিয়ার সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টের ম্যাচ। আরও আছে। এক শহর থেকে আর এক শহর লম্বা বাস জার্নি। রাত জেগে আট-ন’ঘণ্টার ফ্লাইটে বিদেশ পৌঁছনো।

Advertisement

সঞ্জয় সেন

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪২
Share:

সাত দিনে তিনটে ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। তার মধ্যে একটা এশিয়ার সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টের ম্যাচ।

Advertisement

আরও আছে। এক শহর থেকে আর এক শহর লম্বা বাস জার্নি। রাত জেগে আট-ন’ঘণ্টার ফ্লাইটে বিদেশ পৌঁছনো।

গোটা কোচিং জীবনে কখনও এ রকম সমস্যায় পড়িনি। সত্যি বলতে, রাতের ঘুম চলে যাওয়ার জোগাড়। আই লিগ জিততে হবে। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জিততে হবে। কী করব জানি না। তবু চেষ্টা তো একটা করতেই হবে।

Advertisement

ভরসা একটাই। আমার কোচিং জীবনে কখনও কোনও বিদেশি দলের কাছে হারিনি। বোটাফোগোকে হারিয়েছিলাম। শেখ জামাল ধানমন্ডিকে হারিয়েছি। সে দিন সিঙ্গাপুরের টাম্পাইন্স রোভার্সকেও হারালাম। রেকর্ডটা অক্ষত রাখার জন্য মনের মধ্যে অদ্ভূত একটা জেদ কিন্তু রয়েছে। সে জন্য চিনের ম্যাচটা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মজার ব্যাপার, শেনডং সম্পর্কে আমি পুরো অন্ধকারে। উইকিপিডিয়া ঘাঁটা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনও বিকল্প নেই। তার আগে আবার এখন মাথায় শুধুই আই লিগ টেবলে আবার একে ওঠা।

এ বারের আই লিগে শনিবারই আমাদের প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ। পুণেতে শিবাজিয়ান্সের বিরুদ্ধে। ঘরের মাঠ থেকে তিনটে ম্যাচে সাত পয়েন্ট তুলেছি আমরা। কিন্তু কোনও লিগ জিততে হলে অ্যাওয়ে ম্যাচ থেকে পয়েন্ট তোলা অত্যন্ত জরুরি। আমরা এমন একটা দলের বিরুদ্ধে খেলব যাদের কিছু হারানোর নেই। শিবাজিয়ান্সের অবনমন হবে না। ওরা তাই অনেক আরামে খেলতে পারবে। সেখানে আমাদের খেতাব দৌড়ে থাকতে হবে। শনিবার জিততে পারলে পয়েন্ট টেবলে আবার এক নম্বরে যাওয়ার সুযোগ আছে। তাই চিন এখন দূর অস্ত। আপাতত পুণেই আমার প্রথম এভারেস্ট। যেটা টপকাতে হবে।

ইস্টবেঙ্গল-শিবাজিয়ান্স ম্যাচটা একটুআধটু দেখেছিলাম। দলটা বেশ ভাল। সে দিন ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের আধিপত্য ছিল ঠিকই। কিন্তু শিবাজিয়ান্সও বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেছিল। সুব্রত পাল, মহম্মদ রফি, ইজরায়েল গুরুংয়ের মতো ভারতীয় ফুটবলাররা আছে ওই টিমে। ডুহু পিয়েরের মতো বিদেশিও। সঙ্গে ডেরিক পেরিরার মতো পোড়খাওয়া কোচ। ঘরের মাঠে এই প্রথম খেলবে শিবাজিয়ান্স। এতে ওরা আরও তেতে থাকবে। তার উপর আই লিগে ওরা সেই ধরনের দল যারা নিজেরা ফেভারিট না হলেও অন্যদের স্বপ্নভঙ্গ করতে পারে।

পুণের মাঠটা অবশ্য দেখলাম বেশ ভাল। ঘাস ভাল অবস্থায় আছে। ভাল ফুটবল ম্যাচ হওয়ার পক্ষে আদর্শ। হতে পারে বেশ ছোট মাঠ। কিন্তু আমি অজুহাত দিতে ভালবাসি না। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, গত বার তো এই মাঠ থেকেই তিন পয়েন্ট তুলেছিলাম আমরা। এ বারও পারতে হবে। প্রীতম কোটাল, বলবন্ত সিংহদের মতো ফুটবলারদের চোট আছে। যারা খেলবে তাদের নিয়েই ভাবছি। শুক্রবার অনুশীলন শেষ করার কিছুক্ষণ পরে খবর পেলাম, শনিবার আমাদের ম্যাচটার সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। প্রথমে সাতটায় হওয়ার কথা ছিল। আমাদের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচের জন্যই সেটা এগিয়ে আনা হয়েছে। যে জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই ফেডারেশন আর শিবাজিয়ান্সের ম্যানেজমেন্টকে। এই ছোট উপকারটাও কিন্তু অনেক ভাবে সাহায্য করল মোহনবাগানকে।

শিবাজিয়ান্স ম্যাচ খেলেই আমাদের পুণে থেকে গাড়িতে বেরিয়ে যেতে হবে মুম্বই বিমানবন্দরের উদ্দেশে। সেখান থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধরতে হবে শেনডংয়ের ফ্লাইট। আই লিগের ম্যাচটা এগিয়ে আনায় অন্তত কিছুটা বাড়তি সময় পাওয়া গেল। না হলে তো বিমানবন্দরে গিয়েই চেকইনে চলে যেতে হত। চিনের টিম সম্পর্কে কিছুই জানা না থাকুক, এটুকু জানি চিনে এখন কী রকম প্রচণ্ড ঠান্ডা। প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াও প্রতিকূল আবহাওয়ার বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই করতে হবে। কিন্তু ওই যে বললাম, আমি অজুহাত দিতে ভালবাসি না। কোচ হিসেবে আমার দায়িত্ব দলকে বিশ্বাস দেওয়া যে, কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।

বুকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই অভিযানে নামছি আমরা। কোনও দিন আমি শুনিনি বিশ্বে এমন অবস্থায় কোথাও কাউকে পড়তে হয়েছে। যদি কেউ পড়ে থাকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারো। তা হলে সেই গল্প বলে আমি ছেলেদের তাতাতে পারব।

এখন তাই একটা লাইনই মনে মনে আওড়ে যাব— ‘আমি ভয় করব না ভয় করব না, দু’বেলা মরার আগে মরব না ভাই মরব না।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement