চেন্নাই ম্যাচের উইকেট আর ভিটামিন সি ব্রহ্মাস্ত্র নাইটদের

যত্র প্রতিভা অবসরঃ প্রাপ্নোতিহি। আইপিএল ট্রফির গায়ে উপরের সংস্কৃত শ্লোক নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন। ইংরেজিতে যার অর্থ, হোয়্যার ট্যালেন্ট মিটস অপরচুনিটি। বাংলায় বললে বলতে হবে, প্রতিভা আর সুযোগে সৃষ্ট মোহনা। যা আইপিএলের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা। আইপিএলের কোনও কোনও টিমের বৃহত্তর সংজ্ঞাও বটে!

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৪ ০৩:০৩
Share:

হ্যাপি বার্থ ডে মিস্ট্রি ম্যান! আশা করব পার্পল ক্যাপটা তুমি ত্রিনিদাদে নিয়ে যাবে! নারিনের জন্মদিনে ছবি টুইট করে শুভেচ্ছা সূর্যকুমার যাদবের।

যত্র প্রতিভা অবসরঃ প্রাপ্নোতিহি।

Advertisement

আইপিএল ট্রফির গায়ে উপরের সংস্কৃত শ্লোক নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন। ইংরেজিতে যার অর্থ, হোয়্যার ট্যালেন্ট মিটস অপরচুনিটি। বাংলায় বললে বলতে হবে, প্রতিভা আর সুযোগে সৃষ্ট মোহনা। যা আইপিএলের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা। আইপিএলের কোনও কোনও টিমের বৃহত্তর সংজ্ঞাও বটে!

আইপিএল সেভেনের কেকেআর একটা উদাহরণ। রবিন উথাপ্পা-মণীশ পাণ্ডেদের বিগত ফ্র্যাঞ্চাইজিতে কী পারফরম্যান্স ছিল, দেখতে ইন্টারনেটে একটা সার্চই যথেষ্ট। আবার প্রতিভা এবং সুযোগের সৃষ্ট মোহনায় তাঁদের ফেলে দিলে কী ধরণের বোমাবর্ষণ সম্ভব, সেটাও বলে দেবে আইপিএল সেভেনে কেকেআর নিয়ে গুগল সার্চ।

Advertisement

যেটা বলবে না সেটা হল, আইপিএলের শ্লোক-বর্ণিত পরিধির বাইরেও টিম গম্ভীরে একটা ব্যাপার আছে। সপ্তাহ দু’য়েক আগে থেকে যার আগমন এবং মঙ্গলবার পঞ্জাবের বিরুদ্ধে প্লে-অফ যুদ্ধের আগেও যা প্রবল ভাবে বিদ্যমান ও দৃশ্যমান। কোনওটা টিম হোটেলে। কোনওটা বৃষ্টিভেজা ইডেনের প্রাক-যুদ্ধ সাংবাদিক সম্মেলনে।

ভিটামিন ‘সি’— কনফিডেন্স।

ইউসুফ পাঠান যেমন। গত তিন বছরে বোধহয় কেকেআর সংসারে তিনি এত হাসেননি, গত তিন দিন ধরে যা হাসছেন। একটা অনুরোধেই পাঠান সহাস্য দাঁড়িয়ে পড়ছেন ফটোশু্যটে। চার বছরের শিশু থেকে চব্বিশের তরুণ যে অনুরোধে পাঠানোচিত ‘পোজ’। মর্নি মর্কেল একবার সে সব দেখতে দেখতে গেলেন। মিডিয়া একবার খুঁচিয়ে দিল, “ইউসুফের ইনিংসটা নিয়ে কী বলবেন?” উত্তরে মর্নির ‘খুব বাজে’ কথাটা শুনে আরও সরস ইউসুফ— “বোধহয় ও চাইছিল দশ বলে রানটা করে ফেলব। কয়েকটা বল বেশি নিয়ে ফেললাম তো, তাই খারাপ বলছে!” ভাবভঙ্গি দেখলে কেউ বলবে, মঙ্গলবারের প্রতিপক্ষের নাম পঞ্জাব? যারা একটা ম্যাড ম্যাক্স, একটা কিলার মিলার নিয়ে আইপিএল টেবলের ফার্স্ট বয় হয়ে আজ ইডেন প্লে-অফে নামবে? গৌতম গম্ভীর বরাবর স্বতন্ত্র চরিত্রের। কেকেআর ক্যাপ্টেনকে হুঙ্কার দিতে শোনা গেল, কেকেআর প্লে অফ কোথায় খেলছে সেটা নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়া যাবে না। কিন্তু সার্বিক আবহ দেখলে কোথাও গিয়ে মনে হবে, প্রাক-পঞ্জাব যুদ্ধে এখনও পঞ্জাব কম। পাঠান বেশি। মানে, তাঁর ২২ বলে ৭২-এর পরাক্রম।

ইডেনে পুরোদমে চলছে জলনিকাশ। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

কেকেআরের এক কর্তা যেমন মোহগ্রস্ত ভাবে দুপুরের দিকে বলে ফেললেন, তাঁকে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক জন ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, পাঠানের ইনিংসটার হাইলাইটস তিনি দেখেছেন কি না? উত্তরটা ‘কোট অব দ্য টুর্নামেন্ট’, কারণ ওই কেকেআর কর্তা পাল্টা বলেছেন, “কী আর হাইলাইটস দেখব? গোটা ইনিংসটাই তো হাইলাইটস রে ভাই!” টিম কেকেআর ইউসুফকে এখন ডাকছে ‘রেয়ার ব্রিড’ বলে, মনে করছে বিরল প্রজাতির। এমন ইউসুফ-ইউফোরিয়ার মাঝে পঞ্জাব কোথায়? কিংসের বাঘা-বাঘা হার্ড-হিটার নিয়ে টেনশন কোথায়?

মুশকিল হল, সাদা চোখে দেখা বহিরঙ্গ যেমন মাঝেমধ্যে বিভ্রান্তিকর হয়, এক্ষেত্রেও তাই। ফুরফুরে আবহের এই কেকেআরের অন্দরেও টেনশন আছে। ম্যাক্সওয়েল-মিলার বধের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে গভীর ভাবনাচিন্তা আছে।

যে স্ট্র্যাটেজির অঙ্গ— সিএবি-র কাছে পিচ নিয়ে বেসরকারি অনুরোধ। মঙ্গলবার চেন্নাই-আরসিবি ম্যাচের পিচ চেয়েছে কেকেআর। কারণ সানরাইজার্স ম্যাচের পিচ ব্যাটিং-ভূস্বর্গ ছিল। একটা বীরেন্দ্র সহবাগ বা একটা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যেখানে একবার দাঁড়িয়ে গেলে কেকেআরের ওয়াংখেড়েতে দ্বিতীয় প্লে-অফ খেলার বন্দোবস্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সিএসকে ম্যাচের পিচ বোলার-সহায়কও। যে স্ট্র্যাটেজির অঙ্গবোলারদের যুদ্ধের আগে বলে দেওয়া মিলাররা মারলে ঘাবড়ে গিয়ে লাইন-লেংথ গুলিয়ে ফেলো না। বরং বলটা ঠিক জায়গায় রেখে অপেক্ষা করো প্রতিপক্ষের ভুলের। যে স্ট্র্যাটেজির অঙ্গ— পীযূষ চাওলাকে খেলানোর ভাবনা। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল চলতি আইপিএলে ছ’বার লেগ স্পিনারের কাছে আউট হয়েছেন, যাদের একজন পীযূষ নিজেও। যে স্ট্র্যাটেজির অঙ্গ— ম্যাক্সওয়েলের চেয়েও বেশি মিলারকে গুরুত্ব দেওয়া। ম্যাক্সওয়েল মারেন যেমন, সুযোগও দেন। মিলার কিন্তু ক্রিকেট ম্যানুয়ালটা মেনে খেলেন, আউট করা তাই অপেক্ষাকৃত কঠিন। যে স্ট্র্যাটেজির অঙ্গ— মাইক হর্নকে আবার আনা। মরুপর্বে টিমের সঙ্গে থাকার পর মঙ্গলবার আবার কেকেআর সংসারে পদার্পণ ঘটছে ধোনিদের বিশ্বজয়ী টিমের মেন্টাল কন্ডিশনিং কোচের। যিনি কেকেআর ম্যানেজমেন্টকে বলে দিয়েছেন, টিমটা যাতে ১ জুন আইপিএল এভারেস্টে উঠতে পারে, তার বন্দোবস্ত করবেন।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আইপিএল এভারেস্টে ওঠার প্রথম ধাপটা মঙ্গলবারই পেরোনো যাবে? না বুধবার? নাকি প্রকৃতির খেয়ালে ফাইনালে ওঠার পরীক্ষাটা দিতে হবে ওয়াংখেড়েতে? ইডেনে নয়? যা টিমের সবচেয়ে টেনশনের জায়গা। ম্যাক্সওয়েল নয়, মেঘ। বেইলি নয়, বৃষ্টি।

“আমার ইডেন-পরিবারের সঙ্গে নাচ-গান করতে
আজ থাকছি। করব লড়ব জিতব!” —শাহরুখ খান

পূর্বাভাস বলছে, মঙ্গলবারও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ম্যাচ যদি মঙ্গলবার না হয়, বুধবার রিজার্ভ ডে-তে হবে। কিন্তু বুধবার ওলট-পালট ঘটলেই মুশকিল। নিদেনপক্ষে সুপার ওভারও না করা সম্ভব হলে কিংস ইলেভেন যাবে ফাইনালে। গ্রুপ শীর্ষে আছে বলে। কেকেআরকে তখন খেলতে হবে ওয়াংখেড়েতে। সিএসকে আর মুম্বই ম্যাচের বিজয়ীর বিরুদ্ধে। যা নিয়ে সোমবার কিছুটা চিন্তিত দেখাল নাইট ম্যানেজমেন্টের কাউকে কাউকে। যাঁরা বারবার খোঁজ নিচ্ছিলেন, কবে নাগাদ উন্নতি ঘটতে পারে আবহাওয়ার। সিএবি কর্তাদেরও একই অবস্থা।

টিকিট নিঃশেষ। টিকিট কাউন্টারে একপ্রস্থ লাঠিচার্জ হয়ে গেল সোমবার। আতসবাজির ব্যবস্থা সমাপ্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিং খান বলেছেন, আসবেন। সিএবি বলছে, মঙ্গলবার শহরের সবচেয়ে বড় আইপিএল শো। কেকেআর প্লে-অফ খেলছে, এমন তো আজ পর্যন্ত হয়নি ইডেনে। কিন্তু আকাশ?

শহরের আইপিএল-আকাশে আজ ওটাই এক এবং অদ্বিতীয় প্রহেলিকা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন