জেটলিদের ‘ভোট’ ঠিক করে দিতে পারে বোর্ড সিংহাসনে কে

ওয়াঘার ও পারের সরফরাজ নওয়াজ। করাচিতে বসে যিনি ক্ষিপ্ত। বিবৃতি দিয়ে ক্রমাগত পাক বোর্ড চেয়ারম্যান শাহরিয়র খানের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন প্রাক্তন পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার। বলছেন, নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে এ বার আপনারা আইসিসির চেয়ার থেকেও হঠান। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কর্তাদের সঙ্গে কথা বলুন, জোট বাঁধুন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫৮
Share:

ওয়াঘার ও পারের সরফরাজ নওয়াজ। করাচিতে বসে যিনি ক্ষিপ্ত। বিবৃতি দিয়ে ক্রমাগত পাক বোর্ড চেয়ারম্যান শাহরিয়র খানের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন প্রাক্তন পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার। বলছেন, নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে এ বার আপনারা আইসিসির চেয়ার থেকেও হঠান। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কর্তাদের সঙ্গে কথা বলুন, জোট বাঁধুন।

Advertisement

ব্রিসবেন-মেলবোর্নের অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহল। যারা আশঙ্কিত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর। তাদের বক্তব্য—শ্রীনি গেলেন, আইপিএলের দু’টো ফ্র্যাঞ্চাইজিও সম্ভবত গেল। কিন্তু স্টিভ স্মিথ-শেন ওয়াটসন, তাঁদের কী হবে? তাঁরা তো রাজস্থানে খেলেন। জেমস ফকনার, তিনিও তাই। একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি গেলে আর একটা আসবে, ভারতীয় বোর্ড কর্তারা বলছেন। কিন্তু স্মিথদের গ্যারান্টি কে দেবে? সেটা নিয়ে তো কেউ কিছু বলছে না।

চেন্নাইয়ের নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেল, তবু তো মুখ খুললেন না। অধিকাংশ মিডিয়ার ফোন ধরে বলছেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে কোনও কথা নয়।” একজন আবার জিজ্ঞেস করেছিল, এর পর আপনি কী করবেন? তাতে তির্যক ভাবে শ্রীনির উত্তর, “সেটাই তো একশো মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন!” শোনা গেল, ঘনিষ্ঠ বোর্ড কর্তাদের জন্য ইতিমধ্যেই একটা নির্দেশিকা জারি করেছেন শ্রীনি। বলা হয়েছে, আমি যেমন মিডিয়ায় মুখ খুলছি না, আপনারাও খুলবেন না।

Advertisement

পঞ্জাবের ইন্দরজিৎ সিংহ বিন্দ্রা। শ্রীনির কাটা ঘাটে নুনের ছিটে যাঁর দিয়ে চলা এখনও অব্যাহত। আইন ফেলে প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, ভারতীয় বোর্ড শ্রীনিকে আইসিসি চেয়ারম্যান করেছে, তেমন আবার তাঁকে ওখান থেকে সরাতেও পারে। আইনে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে।

কলকাতার জগমোহন ডালমিয়া। শুক্রবার সন্ধেয় প্রেস কনফারেন্সে বসে যাঁর মনে হল, ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন অধ্যায় শুরুর হয়তো এটাই সেরা সময়। কিন্তু মিস্টার ডালমিয়া, শ্রীনি তো নেই। প্রেসিডেন্ট পদে পূর্বাঞ্চলের টার্ম এ বার। আপনার কাকে পছন্দ? নিজেকে চাইবেন? মুচকি হেসে সিএবি প্রেসিডেন্টের জবাব, “দ্যাটস আ মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন। সময়ই বলবে।”

সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের চব্বিশ ঘণ্টা পরের আন্তর্জাতিক ও দেশজ ক্রিকেটমহলের প্রতিচ্ছবি। যেখানে বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে তীব্র ধাক্কার পর টান পড়ল তাঁর আইসিসি চেয়ারম্যানের চেয়ারে। যেখানে গোটা দিন ধরে জল্পনা চলল, শ্রীনি-অধ্যায় তো মোটামুটি শেষ। তা হলে এর পর কে? কিন্তু ভারতীয় বোর্ডমহল অসীম আগ্রহের সঙ্গে গোটা শুক্রবার অপেক্ষা করে থাকল সুইৎজারল্যান্ডের দাভোস থেকে আসা রাতের একটা ফ্লাইটের। বলা হল, বোর্ড রাজনীতির যাবতীয় উদ্ভুত প্রশ্নের উত্তর যাঁর কাছে আছে, তিনি আসছেন ওই ফ্লাইটে। সুইৎজারল্যান্ডে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’-এ যিনি যোগ দিতে গিয়েছিলেন।

অরুণ জেটলি আসছেন।

বলা হচ্ছে, বোর্ড প্রেসিডেন্টের পদে কে বসবেন, সেটা নাকি আদতে ঠিক করে দেবেন দু’জন। একজন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যাঁকে বহু দিন ধরেই বোর্ড রাজনীতির ‘কৃষ্ণ’ ধরা হয়। দ্বিতীয় জন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বোর্ডমহল নাকি এখন জানতে উৎসুক, এঁরা দুই এখন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে নিয়ে কী করেন? শ্রীনি কি আদৌ আর জেটলির সমর্থন পাবেন? না কি এঁরা বেছে নেবেন শ্রীনির বদলি? কোনও কোনও বোর্ড কর্তার মতে, যদি দেখা যায় শ্রীনির পক্ষে আর কোনও ভাবেই প্রত্যাবর্তন ঘটানো সম্ভব নয় তা হলে এখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী একটা নাম রাজীব শুক্ল হলে, দ্বিতীয় নামটা তা হলে অবশ্যই জগমোহন ডালমিয়া। বলা হল, সিএবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বেশ ভাল সম্পর্ক জেটলির। অমিত শাহও নাকি পছন্দ করেন ডালমিয়াকে। বলা হচ্ছে, যিনিই শেষ পর্যন্ত বোর্ড প্রেসিডেন্ট হন না কেন, জেটলি-শাহের সমর্থন তাঁর দিকে নাকি থাকতে হবে।

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

এক বোর্ড কর্তা এ দিন রাতে বলছিলেন যে, বর্তমান টালমাটাল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অনেকেই নাকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন। শরদ পওয়ারও যাঁদের একজন। ডালমিয়া শুক্রবার আবার তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনে পরোক্ষে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, পওয়ারকে সহজে তিনি জমি দেবেন না। পওয়ারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পওয়ার তো অনেক চেষ্টা করছেন। জগমোহন ডালমিয়া ঢুকতে দেবেন পওয়ারকে? ডালমিয়া যা নিয়ে বলে দিলেন, “জগমোহন ডালমিয়ার যা যা করার, সব করবে। যদি এখন আসল ডালমিয়াকে না দেখা যায়, অবাক করা ব্যাপার হবে।” ডালমিয়া আরও বললেন, রায় মেনে যা করার করতে হবে বোর্ডকে। বললেন, “একটা নতুন অধ্যায় শুরু করাই যাক না। কে বলতে পারে, এটাই সঠিক সময় নয় সেটা শুরু করার?”

ঘটনা হল, তার আগে শ্রীনির অপসারণ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া দরকার। শ্রীনি কোনও ভাবে আর ফিরে আসতে পারবেন না, সেই গ্যারান্টি তো এ দিনও বোর্ড কর্তারা দিতে পারলেন না। তিনি কী করছেন না করছেন, তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারলেন না। কেউ বললেন, আইনজীবীদের সঙ্গে বসবেন দু’এক দিনে। কেউ বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সুপ্রিম কোর্টে কোনও হলফনামা দেবেন সামনের সপ্তাহে।

জল কোন দিকে শেষ পর্যন্ত গড়াবে, আগামী বুধ-বৃহস্পতিবারের আগে নাকি কিছুতেই বলা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন