ঝড়ের মতো এসেছিল, আলোর গতিতে চলে গেল

মেলবোর্ন থেকে মঙ্গলবার দুপুরে ফোনে বললেন রবি শাস্ত্রী। মিনিট পাঁচেক হল ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে টিম বাসে উঠেছেন। তাই যেন খানিকটা ঘোরের মধ্যে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যে আচমকা এমন অবসর নিতে যাচ্ছেন ঘুণাক্ষরেও তার আভাস পাননি ভারতীয় টিম ডিরেক্টর। চরিত্রবিরোধী ভাবে এবিপি সাক্ষাত্‌কারে তাই আজ খুব আবেগপ্রবণ...

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৭
Share:

মেলবোর্ন থেকে মঙ্গলবার দুপুরে ফোনে বললেন রবি শাস্ত্রী। মিনিট পাঁচেক হল ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে টিম বাসে উঠেছেন। তাই যেন খানিকটা ঘোরের মধ্যে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যে আচমকা এমন অবসর নিতে যাচ্ছেন ঘুণাক্ষরেও তার আভাস পাননি ভারতীয় টিম ডিরেক্টর। চরিত্রবিরোধী ভাবে এবিপি সাক্ষাত্‌কারে তাই আজ খুব আবেগপ্রবণ...

Advertisement

...প্রথম দিন থেকে বলে এসেছি এই ছেলেটা স্পেশ্যাল। কত তর্ক করার চেষ্টা করেছেন। আজ মানবেন তো যে, আমার প্রথম দিন থেকে রিডিং কত সঠিক ছিল। অনবদ্য! আমি ভাবতেই পারছি না যে ভাবে ড্রেসিংরুমে এসে টিমকে উদ্দেশ্য করে বলল, বয়েজ আমি বুঝে গেছি মাই টাইম ইজ আপ। আমার সময় শেষ। তাই রিটায়ার করে যাচ্ছি টেস্ট ক্রিকেট থেকে। ঘরে তখন সম্পূর্ণ নিস্তব্ধতা। সবাই ভাবছে, বলছে কী এমএসডি! আমি এত বছর ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের সঙ্গে আছি। না কখনও এমন জিনিস দেখেছি, না ভেবেছি। একটা মানুষের ক্রিকেট-সত্তাটা কোন পর্যায়ে থাকলে সে এত কঠিন সিদ্ধান্ত এমন অবলীলায় নিয়ে ফেলতে পারে। আপনি বলছেন সিরিজের মাঝপথে একটা ক্যাপ্টেন কী করে চলে যেতে পারে? আমি বলছি, এটাই আপনাদের বারবার ধোনিকে বোঝার ভুল! ওর চিন্তাধারার সঙ্গে গড়পড়তা ক্রিকেটারকে মেলাতেই যাবেন না। ও দেখল সিরিজ আর জেতা যাবে না। সিডনিতে জিতলেও না। আবার নিজেকেও টানা তিনটে ফর্ম্যাটে টানতে সমস্যা হচ্ছে। তা হলে শুধু স্ট্যাটসের জন্য খেলবে কেন? অন্য কেউ হলে টেস্ট ম্যাচ সংখ্যা কত আছে, রান কত, এ সব মেলানোর অঙ্কে খেলত। ধোনি এই ক্যালকুলেশনটার মধ্যে যে নেই, সেটা চোখের সামনে দেখতে পাওয়াটাই আমাকে এ দিন আরও মুগ্ধ করল! আমি বলব এই হল চ্যাম্পিয়ন, যে নিজের সঙ্গে তঞ্চকতা করেনি। বাকি টিমের সঙ্গেও না। আমি বাজি রেখে বলতে পারি এমসিজির ড্রেসিংরুমে আজ যারা ছিল, তাদের প্রত্যেকের ধোনি সম্পর্কে শ্রদ্ধা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। ওরা নিশ্চয়ই জলজ্যান্ত শিখল কী ভাবে নিজের আগে ক্রিকেট সততাকে রাখতে হয়। বিরাট আমার খুব প্রিয় ছেলে। কিন্তু আমার মনে হয় পূর্বসূরি থেকে ও যে পরম্পরাটা আরোহণ করল, তার ভিত হল এই স্বচ্ছতা। বিরাট এটাও নিশ্চয়ই দেখেছে কী ভাবে ড্রেসিংরুমে নিজেকে এবং সবাইকে সামলায় এমএসডি। কী ভাবে নানা ইগো সামলায়। সব কিছু ম্যানেজ করে দলগত ছন্দ তৈরি করে। একজন ক্যাপ্টেন যে জীবনে যা-যা ট্রফি আর সম্মান জেতা সম্ভব তার প্রায় সবই জিতেছে। ধোনি দেখাল ওর মধ্যে একটা জিনিস আছে যার জন্য ও স্বতন্ত্র— সেটা হল ক্যারেক্টার। ভারতে সর্বকালের অধিনায়ক বলাটা যথেষ্ট নয়। উইকেটকিপার হিসেবেও ওর রেকর্ডটা দেখুন। জীবনের শেষ টেস্টেও কিনা নয় জন শিকার। আমি বলব ভারতের সর্বকালের সেরা এক ক্রিকেটার আজ থেকে অবসরে চলে গেল। এ বার বিরাট-রাজের শুরু। কাল-পরশু ওকে নিয়ে আলাদা বসব। এমএসডি আমাদের সঙ্গেই থাকবে। আমি চাই মানুষটাকে দেখে ছেলেরা নিত্য আরও অনুপ্রাণিত হোক। এই সে দিন টেস্টে এসেছিল ঝড়ের মতো, চলে গেল আলোর গতিতে...।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন