এ বার লড়াই গোয়ায়। ম্যাচটা আমাদের মতোই এফসি গোয়ার কাছেও প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ।
কলকাতার হোম ম্যাচটার দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে মনে হচ্ছে, আমরা কিছুটা দুর্বল ছিলাম কারণটা স্রেফ টিমের পক্ষে প্রভাবশালী গোটা কয়েক প্লেয়ারকে না পাওয়া। এক জন নয়, দু’জন নয়, তিন জন নয় এমনকী চার জনও নয়। সে দিন পাঁ-চ জন প্লেয়ার ছিল না আমাদের।
স্বভাবতই ওদের আমরা আজকের সেকেন্ড লেগ সেমিফাইনালে মাঠে ভীষণ ভাবে ফিরে পেতে চাইছি। আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মেডিক্যাল টিম ওই ক’জন প্লেয়ারকে নিয়ে টোয়েন্টি ফোর ইনটু সেভেন পড়ে আছে। মনে মনে প্রার্থনা করছি, বুধবার ম্যাচের আগে আমার কানে কিছু সুখবর ঢুকবে।
এখানে একটা জিনিস আমার পরিষ্কার করে দেওয়া দরকার। অতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে না পাওয়া গেলেও কলকাতায় প্রথম লেগ সেমিফাইনালে আমরা কিন্তু কোনও সময় ব্যাকফুটে থাকিনি। সৌভাগ্যবশত সে দিন ওদের পরিবর্তে যারা খেলেছে, প্রত্যেকের খুব ভাল পারফরম্যান্স ছিল। যেটা গোয়ার মাঠে আমাদের দলে যেমন বিকল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে, তেমনই আমাদের সম্ভাবনাও বাড়াবে।
তবে কোনও সন্দেহ নেই যে আইএসএলের ফিরতি রাউন্ড রবিন লিগে আমাদের পারফরম্যান্স নীচের দিকে নেমেছে। কিন্তু খুব খুঁটিয়ে দেখলে দেখবেন, শেষ কয়েকটা ম্যাচে আমরা দল হিসেবে নিজেদের চরিত্র পুনরাবিষ্কার করেছি। চরিত্র বলতে বোঝাতে চাইছি চাপের সময়টাকে তুমি কী ভাবে সামলাচ্ছ সেটা।
যখন কোনও দল সেমিফাইনালে পৌঁছে যায়, তখন তার কাছে চাপটা জেতার আকাঙ্খায় পরিণত হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হল, দেখা যে আকাঙ্খাটা যেন দলের উপর টেনশন হয়ে না দাঁড়ায়। সে রকমটা হলে কিন্তু মাঠে একটা খারাপ পারফরম্যান্সের বেশি কিছু ঘটবে না। যেটা ঘটা টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে পৌঁছে কোনও দলের কাছে মোটেই কাম্য নয়। আমাদের ক্ষেত্রে এটুকু বলতে পারি যে, টেনশনের দরজাটা বন্ধ করে রাখতে আমরা সমর্থ হয়েছি। এবং আমরা মানসিক ভাবে ফুরফুরে আছি।
পরিসংখ্যান বলছে, এ মরসুমে এফসি গোয়া আমাদের হারাতে পারেনি। কিন্তু এ সব শুকনো পরিসংখ্যান মাঠে কোনও দলের জেতার কাজে সাহায্য করে না। আমি যার জন্য এ সব বিশেষ মনে রাখি না।
মাঠে কেবল জয়টাই আসল। কিন্তু এমনই কপাল যে, কোনও কোচ, সে যত বড়ই হোক না কেন, জেতার ব্যাপারে কখনও নিশ্চিত থাকে না। মাঠে যা ঘটে এবং খেলার কোনও একটা মুহূর্ত যেটা ম্যাচের রং পাল্টে দেয় সে সবের কোনওটাই কোচের হাতে থাকে না।
হয়তো গোয়ায় একশো কুড়ি মিনিট দূরে যে ভয়ানক পেনাল্টি শু্যট আউট অপেক্ষা করছে সেটা এর সেরা উদাহরণ। ফুটবলে টাইব্রেকার সেই আদ্যন্ত মানসিক চাপের ব্যাপার যেখানে দু’দলের যে কেউই জিততে পারে। কিন্তু তার জন্য আপনি কোনও পরিকল্পনা করতে পারবেন না।
আমরা শুধু মাথায় রাখছিএফসি গোয়া আজ ঘরের মাঠে নামছে। এবং সব সময় ফেভারিট থাকবে। ঘরের মাঠের দর্শক সমর্থন একটা ফ্যাক্টর। এই সুযোগে আমি কলকাতার অসংখ্য সমর্থককে ধন্যবাদ জানাতে চাই। গোটা টুর্নামেন্টে ওঁরা যে ভাবে হাজারে হাজারে সল্টলেক স্টেডিয়ামে জড়ো হয়ে আমাদের জন্য গলা ফাটিয়েছেন।
কলকাতার সমর্থকদের ওই চিত্কার, ওই মেক্সিকান ওয়েভ, ওই পাগলামি আমার চিরকাল মনে থাকবে।
আজ হয় আইএসএল অভিযান শেষ হচ্ছে আটলেটিকো দে কলকাতার। না হলে স্বপ্নের আরও কাছে চলে আসবে আন্তোনিও হাবাসের টিম। কিন্তু তার আগে টপকাতে হবে জিকোর চ্যালেঞ্জ। গোয়ার বিরুদ্ধে কী হওয়া উচিত কলকাতার গেমপ্ল্যান? টিপস দিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য
• আগে চাই ম্যান ম্যানেজমেন্ট। কোচ-ফুটবলার, ফুটবলার-ফুটবলারে ঝামেলা মিটিয়ে নিক কলকাতা। দায়িত্বটা নিক হাবাস নিজেই।
• সঠিক জায়গায় সঠিক ফুটবলারকে খেলানো হোক। আগের ম্যাচের মতো স্টপারে নাতো আর ব্লকারে রাকেশ মাসি যেন না হয়।
• মিডল করিডর দিয়েই শুধু আক্রমণ চালালে হবে না। মাঝমাঠে দুই উইংকেও উঠে নেমে আক্রমণে ধার বাড়াতে হবে। উইং থেকে বল না পেলে ফরোয়ার্ডরা বাধ্য হবে নেমে আসতে। তখন আক্রমণের ঝাঁঝ কমবে।
• ৩-৫-২ ছকে না গিয়ে সোজা ৪-৪-২ ছকে নামলে ভালই হবে। কারণ ভারতীয় ফুটবলাররা এই ছকে খেলতে অভ্যস্ত। এতে উইংয়ের ব্যবহারটা বাড়বে।
• ড্রেসিংরুমে একটা ‘ডু অর ডাই’ মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সোজা কথায় কড়া ভোকাল টনিকও চাই।