গম্ভীর: ০, ০, ০। ফের শূন্য রানে ফিরছেন নাইট অধিনায়ক। ছবি: বিসিসিআই।
গৌতম গম্ভীরের (০) অবস্থা দেখতে দেখতে একটা প্রবাদবাক্য মনে পড়ে যাচ্ছে। তোমার যখন খারাপ সময় যাবে, তখন সব কিছু খারাপ যাবে। হাফ ভলিতেও যদি ড্রাইভ মারতে যাও, দেখবে সেটা সোজা ফিল্ডারের কাছে লোপ্পা চলে যাচ্ছে। কেকেআর ক্যাপ্টেনের যা হচ্ছে এখন। অনেকে ওর ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, কিন্তু সত্যি সত্যি কি আইপিএল সেভেনে গম্ভীরের ফর্ম বিচার করা সম্ভব?
তিনটে ইনিংসের দু’টোতে ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ। একটায় ফ্লিক মারতে গেল, ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ! তাই ও খারাপ ফর্মে আছে না নেই— বলা কঠিন। ফর্ম দেখানোর সুযোগটাই তো পাচ্ছে না।
আমার মতে, কেকেআর ক্যাপ্টেনের তিনটে কাজ এখনই করা উচিত। এক, নিজেকে তিন নম্বরে নামিয়ে আনা। ওপেনিংয়ে কালিসের সঙ্গে মণীশ পাণ্ডেকে পাঠিয়ে দেওয়া। দুই, নিজের মনমরা মেজাজটা ছুড়ে ফেলে আগ্রাসী নেতৃত্বটা বার করে আনা। গৌতম এত বছর ধরে খেলছে। ও তো জানে, সব সময় সবার ফর্ম ভাল থাকে না। তিন, টিমের ব্যাটিং অর্ডারটা নিয়ে ভাবা। কেকেআর ক্যাপ্টেনকে বুঝতে হবে টি টোয়েন্টিতে সেট ব্যাটিং অর্ডার বলে কিছু হয় না। ম্যাচ সিচুয়েশন যেমন, তেমন তোমাকে ব্যাটিং অর্ডার পাল্টাতে হবে। বিশেষ করে ইউসুফ পাঠানের কথা বলছি।
বিশদে ঢুকি। এ বার আইপিএল মরসুমের শুরু থেকে বলে আসছি যে, গম্ভীরের তিন নম্বরে যাওয়া উচিত। এমন নয় যে ওর ফর্ম ভাল নয় বলে বলছি। বলছি, টিমের উপযোগীতার কথা মাথায় রেখে। কেকেআর যে বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল— সে বছর গম্ভীর কত নম্বরে ব্যাট করতে যেত? ওপেনিং নয়, যেত ওয়ান ডাউন। গম্ভীর স্পিনটা খুব ভাল খেলে। ওয়ান ডাউন নামলে মিড অর্ডারটা সামলে দিতে পারবে। আর রান পাক চাই না পাক, ও ভাবে মনখারাপ করে ড্রেসিংরুমে বসে থাকলে চলবে না। টিভিতে যেটা আজ দেখলাম। রান তো খুব খারাপ ওঠেনি। দেড়শো উঠেছে। তোমার হাতে একটা মর্নি মর্কেল আছে। একটা সুনীল নারিন আছে। তা হলে এত ভেঙে পড়ার কী আছে? ওর সমস্যাটা বুঝতে পারছি। নিজে পারফর্ম করতে পারছে না। কেউ খারাপ করলে তাকে বিশেষ কিছু বলতেও পারছে না, নিজে কিছু করছে না বলে। কিন্তু অধিনায়ক যদি নিজের ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে বেশি ভেবে মুষড়ে পড়ে, তা হলে তার মাঠে ট্যাকটিক্যাল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যেমন প্রভাব পড়বে, তেমন পড়বে টিমের উপর।
ক্রিস লিন: ৩১ বলে ৪৫। ছবি: পিটিআই।
কেকেআর ব্যাটিংয়ে আসি। টিমটা আজ দেড়শো করল। করল গম্ভীরের একটা ফাটকা খেলে যাওয়ায়। আর রানটা যে দেড়শোর বেশি পেরোল না, তার কারণ গম্ভীরের একটা ফাটকা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায়।
প্রথম ফাটকার নাম— ক্রিস লিন। যার ৩১ বলে ৪৫ বুঝিয়ে ওকে বাদ দিয়ে টিম নামানো এরপর ঠিক হবে না। বুঝিয়ে দিল বিগ ব্যাশে ওকে এমনি এমনি মারাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে ধরা হয় না।
দ্বিতীয় ফাটকার নাম—ইউসুফ পাঠান। যার ২ বল খেলে ০ নাইট ম্যানেজমেন্টকে ভাবতে বাধ্য করবে, সিনিয়র পাঠানকে ঠিক কোথায় পাঠালে রানটা হবে!
আমি একটা ব্যাপার বুঝে পাচ্ছি না। ইউসুফ এই প্রথম কেকেআরে খেলছে না। তিন বছর হয়ে গেল। এখনও ওকে কখন পাঠানো উচিত, আর কখন পাঠানো উচিত নয়— বুঝে উঠতে পারল না কেকেআর? আরসিবি ম্যাচটা ধরুন। হাতে যখন দশ-দশটা ওভার পরে তখন নামানো হল পাঠানকে। কেন? আমি মনে করতে পারছি না ইউসুফ শেষ কবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নয় বা দশ নম্বর ওভারে নেমে পুরো ইনিংসটা খেলে গিয়েছে। কেকেআরেরে এ দিন উচিত ছিল ওই সময় উথাপ্পাকে নামানো। ও সেট হয়ে গেলে পুরোটা খেলে বেরোত। পুণে-তে দীর্ঘ দিন ধরে ওর সঙ্গে কাজ করেছি বলেই জানি। কেকেআরের রান যখন পনেরো ওভারে ১১০-১, তখন অবশ্যই ইউসুফ নামবে। দরকারে ওয়ান ডাউন নামবে। কিন্তু দশ ওভারে ৯০-২—তখন নামবে না। এই ছোট ছোট ভুলগুলো শুধরতে নিতে পারলে কেকেআর খারাপ করবে না বলেই বিশ্বাস করি।
নাইট রাইডার্স ম্যাচের স্কোর
কেকেআর
কালিস ক টাকাওয়ালে বো চাহাল ৪৩
গম্ভীর এলবিডব্লিউ স্টার্ক ০
মণীশ ক কোহলি বো মর্কেল ৫
লিন ক ডে’ভিলিয়ার্স বো অ্যারন ৪৫
ইউসুফ ক কোহলি বো অ্যারন ০
উথাপ্পা ক স্টার্ক বো অ্যারন ২২
সূর্যকুমার নট আউট ২৪
বিনয় ক মর্কেল বো স্টার্ক ৪
অতিরিক্ত৭
মোট ১৫০-৭।
পতন: ১, ১০, ৯০, ৯০, ১০৭, ১২৯, ১৫০।
বোলিং: স্টার্ক ৪-০-৩৩-২, মর্কেল ২-০-২১-১, অ্যারন ৪-০-১৬-৩,
মুরলীধরন ২-০-২৫-০, চাহাল ৪-০-২৬-১, দিন্দা ৪-০-২৬-০।
আরসিবি
পার্থিব ক লিন বো বিনয় ২১
টাকাওয়ালে এলবিডব্লিউ কালিস ৪০,
কোহলি বো নারিন ৩১
যুবরাজ ক ইউসুফ বো উমেশ ৩১
ডে’ভিলিয়ার্স ক লিন বো বিনয় ৩১,
মর্কেল নট আউট ৬
স্টার্ক নট আউট ০
অতিরিক্ত ৮
মোট ১৪৮-৫।
পতন: ৬৭, ৬৭, ১২২, ১৪১, ১৪৫।
বোলিং: উমেশ ৪-০-৪০-১, মর্কেল ৪-০-৩৪-০,
নারিন ৪-০-১৭-১, বিনয় ৪-০-২৬-২, কালিস ৪-০-২৬-১।