ডাইভ দিয়েছেন স্বীকার করেও ‘সুয়ারেজ’ হলেন না রবেন

লুই সুয়ারেজের ক্ষেত্রে যা করেছিল ফিফা, তাকে ফুটবলমহল ডাকছিল ‘লঘু পাপে গুরুদণ্ড’ বলে। আর্জেন রবেনের ক্ষেত্রে যা করল ফিফা, ফুটবলমহলে তার এখনও কোনও নামকরণ হয়নি। তবে অনায়াসে সেটাকে একটু পাল্টে করে দেওয়া যায় গুরু পাপেও দণ্ডহীন! সুয়ারেজ যদি চিয়েলিনিকে কামড় মেরে দেশের কাপ-স্বপ্নে দাঁত বসিয়ে থাকেন, মেক্সিকো ম্যাচে রবেনের বিতর্কিত ডাইভের পরিণতিও একই দিকে নিয়ে যেতে পারত নেদারল্যান্ডসকে। অন্তত ফিফার নিয়ম তাই বলে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০৩:২০
Share:

লুই সুয়ারেজের ক্ষেত্রে যা করেছিল ফিফা, তাকে ফুটবলমহল ডাকছিল ‘লঘু পাপে গুরুদণ্ড’ বলে।

Advertisement

আর্জেন রবেনের ক্ষেত্রে যা করল ফিফা, ফুটবলমহলে তার এখনও কোনও নামকরণ হয়নি। তবে অনায়াসে সেটাকে একটু পাল্টে করে দেওয়া যায় গুরু পাপেও দণ্ডহীন!

সুয়ারেজ যদি চিয়েলিনিকে কামড় মেরে দেশের কাপ-স্বপ্নে দাঁত বসিয়ে থাকেন, মেক্সিকো ম্যাচে রবেনের বিতর্কিত ডাইভের পরিণতিও একই দিকে নিয়ে যেতে পারত নেদারল্যান্ডসকে। অন্তত ফিফার নিয়ম তাই বলে। বলে, প্লে অ্যাক্টিং করে যদি কোনও প্লেয়ার রেফারির কাছ থেকে অন্যায় সুবিধে নেয়, তা হলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। যা রবেন করেছেন। অতএব নিয়ম ধরলে শাস্তি তাঁর প্রাপ্য। শুধু তাই নয়, ফিফা এ-ও বলেছিল, দরকারে অভিযুক্ত প্লেয়ারের বিরুদ্ধে তদন্তে ভিডিও এবং অডিও ফুটেজ ব্যবহার করা হবে।

Advertisement

আর্জেন রবেনের ক্ষেত্রে দুটোই ফিফার হাতের কাছে ছিল। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ রবেনের নিজের স্বীকারোক্তি। যা এসেছে ম্যাচ শেষের একটু পরে, ডাচ টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। যেখানে রবেন বলে দিয়েছেন, “আমি ক্ষমা চাইছি। পেনাল্টিটা ঠিকই ছিল। কিন্তু প্রথমার্ধে ওদের বক্সে আমি যে ডাইভ দিয়েছিলাম, সেটা ঠিক করিনি। খুব খারাপ ব্যাপারটা।”

কিন্তু এত প্রমাণ সত্ত্বেও ফিফা কিছু করল না। এমনকী সতর্কীকরণও নয়। ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা জানিয়ে দিল, রবেনকে নিয়ে ফিফার পক্ষ থেকে কিছু করা হবে না। উল্টে সংস্থার মুখপাত্র ডেলিয়া ফিশার বলে দিলেন, “আমরা প্লেয়ারদের বলি পরিচ্ছন্ন ভাবে খেলতে। সেটা সে করছে কি না, সেটা তো রেফারি দেখবে। দরকারে কার্ড দেখাবে। যাতে এ রকম আর না হয়।” যা দেখে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে ফুটবলমহল। বলা হচ্ছে, রেফারি যদি সব করবে তা হলে ঘটা করে নিয়মের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল কেন? আর সুয়ারেজের মতোই ফুটবলকে অপমান করে কী ভাবে পার পেয়ে যেতে পারেন ডাচ মহাতারকা?

রবেনের দেশ অবশ্য পরিষ্কার বলছে, ডাচ তারকার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে বিশ্ব জুড়ে অশান্তি ঠেকানো যাচ্ছে না। রবিবার ম্যাচের শেষে মেক্সিকো কোচও ক্ষোভ উগরে দেন। রবেনকে সোজাসুজি ‘প্রতারক’ বলে দেন মিগুয়েল হেরেরা। মেক্সিকো ক্যাপ্টেন রাফা মার্কেজ আবার বলে বসেন, রবেন তাঁর কাছে স্বীকার করেছেন যে ওটা পেনাল্টি ছিল না।

হেরেরা আবার বলতে থাকেন, “বিশ্বকাপের চারটে ম্যাচের মধ্যে তিনটেতেই জঘন্য রেফারিংয়ের শিকার হতে হল। সবচেয়ে জঘন্য অবশ্যই এটা। আর রবেন পেনাল্টি পাওয়ার জন্য যে তিনটে ডাইভ দিল, তার একটাও পেনাল্টি নয়। ওকে আগেই সতর্ক করে দেওয়া উচিত ছিল। তার জায়গায় যে ওকে ছেড়ে দেওয়া হল, তা হলে ও তো প্রতারণা করেই যাবে।” ফিফার বিরুদ্ধেও কড়া অভিযোগ তুলতে ছাড়েননি হেরেরা। বলেছেন, “একটা ভুয়ো পেনাল্টির জন্য ছিটকে গেলাম। আমাদের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু ওই রেফারিরও বাড়ি যাওয়া উচিত!”

বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই আওয়াজ তুলেছেন, রবেনকে কেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হল না? বা খুঁজছেন কোনও এক দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনাকে।

ফিফার এমন ‘ঐতিহাসিক অপদার্থতার’ দিনে তাঁকেই তো সবচেয়ে বেশি দরকার।

নিষ্ক্রিয় থেকে তোপের মুখে ফিফা

ডাচ টিভি-তে রবেনের স্বীকারোক্তি
আমি ক্ষমা চাইছি। প্রথমার্ধে ওদের বক্সে আমি যে ডাইভ দিয়েছিলাম, সেটা ঠিক করিনি। খুব খারাপ ব্যাপারটা।

ফিফার নিয়ম
ধারা ৭৭: ম্যাচের মধ্যে কোনও অবৈধ কাজ যদি ম্যাচ অফিসিয়ালদের নজর এড়িয়ে যায়, তা হলে সেই ঘটনা খতিয়ে দেখতে পারে ফিফার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি।

ডাচ ফুটবল সংস্থা
রবেনের কথার সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

ফিফা বলছে
পুরনো ব্যাপার তখনই খতিয়ে দেখা হবে, যদি ব্যাপারটা খুব গুরুতর হয়। আর খেলা চলাকালীন এ সব ধরার জন্য রেফারিদের উপযুক্ত ট্রেনিং আছে।

মিগুয়েল হেরেরা (মেক্সিকোর কোচ)
রবেনটা একটা জোচ্চোর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন