ডুডুদের বধ করেই লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে চান ডং

বাঁ পায়ের যুগলবন্দির ঝংকার উঠেছে। আর তাতেই ইস্টবেঙ্গল তাঁবু জুড়ে ডার্বির আগেই উৎসবের মেজাজ। কোরিয়ান ডু ডং আর বঙ্গসন্তান অবিনাশ রুইদাস—দু’জনের বাঁ পা থেকে আসছে গোলের পর গোল। কোনওটা বিশ্বমানের, কোনওটা দুরুহ কোণ থেকে টিমের দু:সময়ে করা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

লক্ষ্য এখন ডার্বি। অবিনাশ ও ডং।

বাঁ পায়ের যুগলবন্দির ঝংকার উঠেছে। আর তাতেই ইস্টবেঙ্গল তাঁবু জুড়ে ডার্বির আগেই উৎসবের মেজাজ।

Advertisement

কোরিয়ান ডু ডং আর বঙ্গসন্তান অবিনাশ রুইদাস—দু’জনের বাঁ পা থেকে আসছে গোলের পর গোল। কোনওটা বিশ্বমানের, কোনওটা দুরুহ কোণ থেকে টিমের দু:সময়ে করা।

ডার্বি আরও তিন দিন দূরে। লিগ প্রায় হাতের মুঠোয়। চল্লিশ বছর পর আবার টানা ছয় বার ঘরোয়া লিগ জেতার দূর্লভ সম্মান প্রাপ্তির সুযোগ।

Advertisement

তবুও, হ্যাঁ তবুও লাল-হলুদের দুই নতুন নায়ক সংযমী। দু’জনের পাখির চোখ সেই ডার্বিতেই। দলের কোচের মতোই।

বৃহস্পতিবার নিজের বাড়িতে বসে ডং বলে দিলেন, ‘‘কলকাতায় আসার পর থেকে ডার্বির কথা শুনছি। ইউ টিউবে খেলাও দেখেছি। কোচ এবং সতীর্থরাও ডার্বির গুরুত্বের কথা বলেছে। তাই এই ম্যাচটা না জিতলে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই মাটি হয়ে যাবে। যাবতীয় আনন্দ ওই দিনটার জন্য তুলে রেখেছি।’’

ডং যখন তাঁর স্বপ্নের কথা বলছেন তখন লাল-হলুদের নতুন আলো অবিনাশ বন্ধুদের নিয়ে বিরিয়ানি খেতে গিয়েছেন। কালীঘাটের বিরুদ্ধে বিশ্বমানের গোল করার সেলিব্রেশন। ফেরার পথে চব্বিশ ঘন্টা আগে এ বারের লিগের সব থেকে চমকপ্রদ গোল করা লাল-হলুদ তারকা বলে দিলেন, ‘‘রবিবার মোহনবাগানকে হারিয়ে লিগ জিতলে তবেই আমার ভাল গোলটা মর্যাদা পাবে। মনে হবে টিমের জন্য কিছু করলাম।’’

লিগ টেবলের যা পরিস্থিতি তাতে কলকাতা লিগ কার্যত ঘরে তুলে ফেলেছে ইস্টবেঙ্গল। তা সত্ত্বেও কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য পুরো টিমকে যে ডার্বিমুখী করে দিতে চাইছেন তা ডং আর অবিনাশের কথাতেই বোঝা যায়। আর সবারই জানা, ডার্বিতে লাল-হলুদ কোচের বড় অস্ত্র হতে চলেছেন ওই দু’জনই। যাঁদের আসল শক্তি বাঁ পায়ের শট। সব থেকে যেটা ভাল দিক তা হল, ডং আর অবিনাশের মধ্যে গড়ে উঠেছে দারুণ বোঝাপড়া। অন্তত দু’জনে তাই দাবি করছেন। মাঠের বাইরেও তাঁরা একে অপরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ডং যেমন বলছিলেন, ‘‘অবিনাশের মধ্যে ভাল ফুটবলার হওয়ার সব গুণ আছে। কালীঘাটের বিরুদ্ধে গোলটা তো দুর্দান্ত করেছে। ও টিমে যোগ দেওয়ায় আমাদের শক্তি বেড়েছে।’’ অবিনাশ আবার ডংয়ের অন্য গুণে মুগ্ধ। ‘‘ডং বিদেশি হলেও আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশে। মাঠে ম্যাচ চলার সময় খুব সাহায্য করে। ভাল করে বুঝিয়ে দেয়, আমার কখন কী করা উচিত!’’

এই বছরই প্রথম কলকাতায় খেলতে এসেছেন ডং। কিন্তু খুব অল্প দিনের মধ্যেই ময়দানের ফুটবল আবেগ বুঝে গিয়েছেন। ডার্বির গুরুত্বের পাশাপাশি টানা ছ’বার লিগ জয়ের ইতিহাস ছোঁয়ার সুযোগ আছে সেটাও তাঁকে তাতাচ্ছে, অকপটেই বলছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলার। ‘‘কলকাতায় খেলতে এসেই ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছি। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! তবে এখনও আমাদের আরও দু’টি ম্যাচ রয়েছে। দু’টোই জিততে হবে।’’

গত বার ভাল খেললেও আই লিগে সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি অবিনাশ। এ বার আবার কলকাতা লিগের শুরুতেই জন্ডিস হওয়ায় টিম থেকে ছিটকে যান। বাড়িতে বিশ্রামে থাকতে হয়েছিল বহু দিন। কিন্তু মাঠে ফিরেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে শুরু করেছেন বজবজের ছেলে। আর এই পারফরম্যান্সই তিনি আই লিগেও ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। এ দিকে বুধবার ম্যাচের সময় কালীঘাট এম এসের ক্রিস্টোফারের আঙ্গুল চোখে লেগে রক্ত জমে গিয়েছে তাঁর। এ দিন তিনি চিকিৎসকের পরামর্শও নেন। তবে ভয়ের কিছু নেই বলেই জানালেন লাল-হলুদের এই উইঙ্গার।

টানা ছ’বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হলে বিশেষ সেলিব্রেশনের ভাবনাচিন্তা রয়েছে ক্লাব কর্তাদের। ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, ‘‘ছ’বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা বড় ব্যাপার তো বটেই। শুধু এ বারের টিমই নয়, যারা টানা ছ’বার ইস্টবেঙ্গলকে লিগ চ্যাম্পিয়ন করতে সাহায্য করেছে প্রত্যেকেরই কৃতিত্ব রয়েছে। এ বার লিগ জিততে পারলে বিশেষ কিছু ভাবনাচিন্তা রয়েছে আমাদের। তবে এখনও সেটা বলার সময় আসেনি। আগে তো লিগটা পাই।’’

লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যে এখন কাপ আর ঠোঁটের দূরত্ব। তবু সাবধানী পুরো লাল-হলুদ শিবির। কারণ ডার্বি এখনও বাকি। আর এই ম্যাচের জন্য এখন থেকেই প্ল্যান- ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ তৈরি করে ফেলেছেন বিশ্বজিৎ। তিন কোচ বিশ্বজিৎ, স্যামি ওমেলো এবং সঞ্জয় মাঝিকে নিয়ে ক্লাব তাঁবুতে এ দিন বিকেলে ম্যারাথন বৈঠকে বসেছিলেন দেবব্রতবাবু। ডার্বি নিয়েই প্রধানত আলোচনা হয়। র‌্যান্টি মার্টিন্স, বেলো রজ্জাক, গুরবিন্দর সিংহকে পুরো ফিট করতে এ দিন সকালে আলাদা প্র্যাকটিসও করিয়েছেন বিশ্বজিৎ। বাকি ফুটবলারদের অবশ্য ছুটি ছিল। স্ট্রাইকাররা গোল পেলেও রক্ষণে কিছু সমস্যা রয়েছে। রবিবার ডুডু ওমাগবেমীকে আটকাতে রক্ষণে বেলোর সঙ্গে সদ্য চোট সারিয়ে ওঠা বড় চেহারার গুরবিন্দরকে খেলানোর ভাবনাচিন্তা করছেন লাল-হলুদ কোচ। সঙ্গে ডুডুর পাল্টা হিসেবে র‌্যান্টিকেও তৈরি রাখছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন