মোবাইলে ফোন এসেই যাচ্ছে। এক জনের সঙ্গে কথা বলছেন তো দশ জনের কল ওয়েটিংয়ে। কথা বলে চলেছেন অনবরত। ফোনটা কানে নিয়েই মাঠে ঢুকে পড়লেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
গ্যালারি তখন উত্তাল। এফসি গোয়ার হোম ম্যাচ না আটলেটিকোর, বোঝার উপায় নেই। গ্যালারি জুড়ে তখন একটাই চিত্কার ‘দাদা, দাদা’। সৌরভের অবশ্য সে দিকে কোনও হেলদোল নেই। ফোনে কথা বলতে বলতে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসছেন। আর তার ফাঁকে আনন্দবাজারকে বলে গেলেন, “অসাধারণ জয়। আজকের দিনটা শুধু আনন্দের। আমি মুম্বই যাচ্ছি।” তার আগে টিভি ক্যামেরার সামনে বলে এসেছেন, “ফাইনালে ভাল খেলা হবে। কেরল ভাল দল। কাল থেকে ফাইনালের ব্লু প্রিন্ট। সচিনের সঙ্গে বসে ফাইনাল ম্যাচটা দেখার ইচ্ছে আছে। প্রায় দু’শো ম্যাচ খেলেছি ওর সঙ্গে। এ বার না হয় ওর বিরুদ্ধে একটা ম্যাচ খেলা যাবে।”
কলকাতার অন্যতম মালিকের যখন আনন্দ-উল্লাসের ঠিকানা নেই, তখন সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরক এফসি গোয়া কোচ জিকো। “এই রেফারিই কোচিতে আটলেটিকোর নিশ্চিত গোল বাতিল করেছিল। আজকে আমাদের পেনাল্টি দিল না। কেন যে এ সব নিচু মানের রেফারিদের আইএসএল সংগঠকরা এনেছেন, জানি না। এটা ফুটবলের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন নয়,” চোখে-মুখে চরম বিরক্তি নিয়ে বলছিলেন কিংবদন্তি ব্রাজিলিয়ান। তবে রেফারিকে এক হাত নিলেও, আটলেটিকোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। বিশেষ করে হাবাসের। তাঁর কথায়, “ফিকরু না খেললেও মাঠে সেটা বুঝতে দেননি হাবাস। ওর স্ট্র্যাটেজির জন্যই আমরা গোল করতে পারিনি। আটলেটিকো গোল দেওয়ার চেয়ে গোল আটকানোর দিকে বেশি নজর দিয়েছিল। যাতে টাইব্রেকারে ম্যাচটাকে নিয়ে যাওয়া যায়।” বিরক্তির মধ্যেই জিকো অবশ্য জানিয়ে দিলেন, পরের বছরও ভারতে আসতে চান। এফসি গোয়া কর্তারাও ইতিমধ্যে তাঁকে প্রস্তাব দিয়ে ফেলেছেন।
জিকোর যখন মন ভার তখন উল্টো দিকে আটলেটিকো শিবির ব্যস্ত উত্সবে। দুপুর দু’টো থেকে রাত সওয়া দশটা পর্যন্ত যে স্টেডিয়াম শুধু গোয়ানদের হই-হুল্লোড়ে তেতে ছিল, ম্যাচ শেষে সব শুনশান। উল্টে তখন গার্সিয়াদের ড্রেসিংরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। চিত্কার-চেঁচামেচিতে কান ঝালা-পালা হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। গার্সিয়া দুলছেন হোসেমি-হোফ্রের কোলে। অর্ণবের মাথায় জল ঢালছেন কিংশুক। তবে আনন্দের মধ্যেও গার্সিয়াদের একটা আফসোস থেকে গেল। “ফাইনালটা দু’এক দিন পিছিয়ে দেওয়া যায় না। তা হলে আমরা একটু বিশ্রাম নিতে পারতাম,” সাংবাদিক সম্মেলনে ঢুকেই শুরুতে বলে নিলেন গার্সিয়া। তবে সেমিফাইনালে তাঁর টিমের পারফরম্যান্সে যে তিনি গর্বিত, সেটা আটলেটিকোর মার্কি ফুটবলারের কথাতেই স্পষ্ট। গার্সিয়া বলছিলেন, “এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ধারাবাহিক টিম যে আমরা, সেটা আবারও প্রমাণ হয়ে গেল। এ বারও যদি আমাদের নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকে, তা হলে মুম্বইয়ে ট্রফিটা হাতে নিয়ে দূর করে দেব।”
এই জয়ের মধ্যেও ফিকরু-কাঁটা বিঁধছে আটলেটিকোর। এ দিন টিম ফাইনালে উঠলেও ড্রেসিংরুমে না এসে সোজা নিজের হোটেলে ফিরে গেলেন ফিকরু।