শ্রীলঙ্কা সিরিজের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ম্যাচ হয়তো ইডেনে

দুই বিশ্বজয়ী অধিনায়ককে এনে ক্ষতে প্রলেপ দিতে চায় সিএবি

দেড়শো লেখা ইডেনের সার্ধশতবর্ষ পূর্তির কেক তা হলে কারা কাটছেন? নাহ্, ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের দশ অধিনায়ককে দিয়ে ও সব করানোর প্রশ্নই নেই, কারণ ম্যাচটাই আর নেই। তার চেয়ে যদি অর্জুন রণতুঙ্গা আর কপিল দেব আসেন, ইডেনের সম্ভাব্য নতুন ম্যাচে যদি পাওয়া যায় দুই বিশ্বজয়ী অধিনায়ককে খারাপ কী? সিএবি শুক্রবার থেকে চেষ্টা শুরু করে দিল। এক্কায় করে ইডেনের ঐতিহাসিক ম্যাচে দুই অধিনায়কের আগমন? ওটা কী হবে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৪
Share:

টসের স্বর্ণমুদ্রা প্রকাশ অনুষ্ঠানে শ্রীকান্ত। -নিজস্ব চিত্র

দেড়শো লেখা ইডেনের সার্ধশতবর্ষ পূর্তির কেক তা হলে কারা কাটছেন?

Advertisement

নাহ্, ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের দশ অধিনায়ককে দিয়ে ও সব করানোর প্রশ্নই নেই, কারণ ম্যাচটাই আর নেই। তার চেয়ে যদি অর্জুন রণতুঙ্গা আর কপিল দেব আসেন, ইডেনের সম্ভাব্য নতুন ম্যাচে যদি পাওয়া যায় দুই বিশ্বজয়ী অধিনায়ককে খারাপ কী? সিএবি শুক্রবার থেকে চেষ্টা শুরু করে দিল।

এক্কায় করে ইডেনের ঐতিহাসিক ম্যাচে দুই অধিনায়কের আগমন? ওটা কী হবে?

Advertisement

সিএবি কর্তারা বলছেন, হবে। ধোনি-ব্র্যাভোর বদলে ধোনি-ম্যাথেউজ করা অসম্ভব কিছু নয়। ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে যা ভাবা হয়েছিল, সেটা ভারত-শ্রীলঙ্কাতেও করা সম্ভব।

স্বর্ণমুদ্রা? সোমবারের ম্যাচে টসের জন্য যা ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল, তার ভবিষ্যত্‌?

উত্তর একই। স্বর্ণমুদ্রার ভবিষ্যত্‌ ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ। ওটা দিয়েই টস হবে।

চব্বিশ ঘণ্টার একটা বৃত্ত। যা এক ঝটকায় ওলট-পালট করে দিয়েছে শহরের ক্রিকেট-রাজভবনের সার্ধশতবর্ষের ম্যাচ ঘিরে যাবতীয় আশাবাদ, উত্তেজনাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইডেনে আসবে না। সিরিজই খেলবে না, ফিরে যাবে দেশে। কাছাকাছি সময়ে ভারতীয় বোর্ড থেকে বেসরকারি ভাবে সিএবি-কে জানিয়ে দেওয়া হয়, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পাঁচটা ম্যাচের মধ্যে একটা পাচ্ছেই ইডেন। কিন্তু আগামী দশ-বারো দিনে নতুন করে উত্‌সবের মেজাজ কতটা ফেরানো সম্ভব?

শনিবার সন্ধেয় দীপক শোধন এবং কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তকে দিয়ে টসের স্বর্ণমুদ্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে সিএবির কোনও কোনও কর্তার মনে হল, সম্ভব। বলা হচ্ছে, ২০১১-এ এর চেয়েও বড় বিপর্যয় দেখেছে ইডেন। বিশ্বকাপের ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল তখন ইডেন থেকে। সিএবি কর্তাদের ধারণা, বিশ্বকাপের ম্যাচ হারানোর ধাক্কা যখন সামলানো গিয়েছে, এটাও যাবে। দশ-বারো দিনের মধ্যেই তো ম্যাচ পাচ্ছে ইডেন।

বোর্ড এখনও সরকারি ভাবে সূচি নিয়ে কিছু জানায়নি। ২১ অক্টোবর হায়দরাবাদে জরুরি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছে বোর্ড। ওখানে ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের কেন্দ্র সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হবে। শোনা গেল, সিএবি-কে ইতিমধ্যেই বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, তারা একটা ম্যাচ পাচ্ছে। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন আজও সিএবি কর্তাদের ফোনটা গতকালের মতো সকালের দিকেই করেছিলেন। পার্থক্যের মধ্যে, শনিবারের ফোন আতঙ্কের নয়, সান্ত্বনার। ইডেনের অবস্থা কী, কী কী বাতিল করে দিতে হল, এ সবের নাকি খোঁজখবর নেন শ্রীনি। সঙ্গে সিএবি কর্তাদের তিনটে ব্যাপার বলে দেন।

সিএবি চাইলে ভারত-শ্রীলঙ্কার প্রথম ওয়ান ডে ইডেনেই হবে। দ্বিতীয়ত, পটৌডি স্মৃতি বক্তৃতা আর কোথাও নয়, কলকাতাতেই হবে। ভারত-শ্রীলঙ্কার আগের দিন। তৃতীয়ত, ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের চেয়ে ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ অনেক বেশি আকর্ষণীয়। যুদ্ধের মেজাজ অনেক বেশি গনগনে থাকবে।

রাতের দিকে শোনা গেল, প্রথম নয়, দ্বিতীয় বা তৃতীয় ওয়ান ডে পেতে বেশি ইচ্ছুক সিএবি। শ্রীলঙ্কা ১ থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পাঁচটা ওয়ান ডে খেলবে ভারতে। প্রথম ওয়ান ডে হলে সেটা নভেম্বরের শুরুর দিকেই হবে। কিন্তু কলকাতা পুলিশ আবার সিএবিকে জানিয়েছে, ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ম্যাচ না নেওয়াই ভাল। কারণ ওই সময় জগদ্ধাত্রী পুজো থেকে মহরম সব পরপর আছে। শ্রীনিকে সেটা জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি জরুরি ফিনান্স কমিটির বৈঠক ডাকা হল রবিবার। বাতিল ম্যাচের খরচ, নতুন ম্যাচের বাজেট সব তৈরি করতে। বাতিল ম্যাচের টিকিট নিয়েও একটা জট হয়েছে। দর্শকরা কেউ কেউ এখনও চলে আসছেন টিকিট নিয়ে কী হবে জানতে। ঠিক হয়েছে, টিকিটের মূল্য ফিরিয়ে দেবে সিএবি।

অনুষ্ঠান-প্রবাহও যেমন চলার কথা ছিল, তেমনই চলছে। বিপর্যয়ের মধ্যেও শ্রীকান্ত-শোধনের টসের স্বর্ণমুদ্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠান আকর্ষণীয়ই হল। সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ভারতীয় ক্রিকেটার এখন যিনি, সেই দীপক শোধনের এ দিন ৮৭তম জন্মদিন ছিল। কেক এল, শোধন সেটা কেটে শ্রীকান্তকে খাইয়েও দিলেন। জীবিত ভারতীয় ক্রিকেটারের মধ্যে শোধনের সেঞ্চুরিই এখন ইডেনের সবচেয়ে পুরনো টেস্ট সেঞ্চুরি। ইডেনে প্রথম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি আবার শ্রীকান্তের নামে। দু’টো ক্ষেত্রেই প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।

নিজের জীবনে ইডেনের মাহাত্ম্য বোঝাতে শ্রীকান্ত তুলে আনলেন অনূর্ধ্ব-উনিশ ভারতের হয়ে ইডেনে এক সেঞ্চুরির কথা। যে সেঞ্চুরির পরের দিন নিউ মার্কেটে প্যান্ট কিনতে গেলে দোকানদার তাঁকে চিনতে পেরে দাম অর্ধেক করে দেন! শ্রীকান্ত আজও যা ভুলতে পারেননি। বলছিলেন, “আসলে ইডেনে এক বার কিছু করলে ইডেন আপনাকে সারা জীবন মনে রাখবে। পাকিস্তান ম্যাচের সেঞ্চুরির সময় অবিশ্বাস্য লেগেছিল ব্যাট করতে নেমে। এক লক্ষ লোক চিত্‌কার করছে, আশা করছে আমিই ইনিংসটা দাঁড় করে দিয়ে আসব! আর পাকিস্তানের সঙ্গে নামলে ওই চিত্‌কার তিনগুণ হবে।” শোধন আবার বলে গেলেন, সাতাশি বছরের জীবনে এটাই তাঁর সেরা জন্মদিন।

কী বোঝা গেল? ধ্বংসের বেদীতে সৃষ্টির ফুল ফোটানোর প্রচেষ্টা? এখনও পর্যন্ত বোধহয় তাই। শনিবার সিএবি অনুষ্ঠানের আবেগের নানা রংয়ের টুকরো দেখে তো তাদের আনন্দের চেয়ে অশ্রুবিন্দুই বেশি মনে হল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন