আর কত দিন এ জিনিস দেখতে হবে কে জানে!
আজ নতুন নয়, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে যত বার টিমটা ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছে, নিশ্চিত ভাবে দুর্দান্ত সুইং বোলিংয়ের পাল্লায় পড়ে এবং ডুবেছে। আজ পর্যন্ত মাত্র তিন বার ইংল্যান্ড থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরেছে ভারত। ’৭১-এ অজিত ওয়াড়েকরের টিম। ’৮৬-তে কপিল দেবের টিম। আর সাত বছর আগে রাহুল দ্রাবিড়ের টিম। বাকি প্রায় সবই সুইংয়ের সামনে শোকগাথা। সৌরভ টিম নিয়ে ড্র করে ফিরেছিল। আর শেষ বার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ফিরেছিল ০-৪-এর লজ্জা নিয়ে।
সোজা কথায়, দাদারা যা পারেনি, ভাইরাও তা পারছে না। দাদারাও সুইংয়ের সামনে সমস্যায় পড়ে যেত, ভাইদেরও এখন পড়তে দেখছি। তবে দাদারা অবশ্যই ভাইদের চেয়ে ভাল ছিল। এদের অবস্থা আরও খারাপ। সচিন, রাহুল, সৌরভ, ভিভিএসদের মতো জিনিয়াসদেরও সমস্যা হত ভাল সুইং বোলিংয়ের সামনে। কিন্তু ওরা যে মানের সুইং বোলিংয়ের পাল্লায় পড়ত, পূজারা-কোহলিদের তো তার সামনে পড়তে হচ্ছে না। অ্যালিস্টার কুকের ইংল্যান্ডের কী আহামরি বোলিংটা আছে? জর্ডন-ওকস তেমন বোলারই নয়। দু’টো মাত্র পেসার। জিমি অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রড। আর এরা দু’জনে পালা করে দেখিয়ে যাচ্ছে সুইং বোলিংয়ের সামনে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা।
কোনও দিন অ্যান্ডারসন পাঁচটা নিয়ে যাচ্ছে। কোনও দিন ব্রড ছ’টা। এই দুইকে খেলতে না পেরেই ভারত ৮ রানে ৪ হয়ে গেল! হেডিংলের সেই শূন্য রানে চার উইকেট যাওয়ার স্মৃতি ফিরিয়ে এনে।
ওল্ড ট্রাফোর্ডের উইকেটকে নিয়ে ভাল রকম আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছিল যে এটা নাকি ইংল্যান্ডের দ্রুততম পিচ। আগের মতো অতটা দ্রুত গতির নেই এখন, তবু ব্যাটসম্যানের বধ্যভূমি। কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার পিচ যা দেখলাম, তাতে বাউন্স বা ক্যারি ভাল আছে ঠিকই, কিন্তু ব্যাটিং এখানে অসম্ভব কোনও ভাবে বলতে পারব না। কাউকে কাউকে বলতে শুনছি যে মেঘলা আকাশ দেখেও কেন ধোনি টস জিতে ব্যাটিং নিতে গেল। আমি বলব, ঠিকই করেছে। ও দু’টো স্পিনার নিয়ে নেমেছে টেস্টে। ওল্ড ট্রাফোর্ড উইকেটটা কিছুটা শুকনো। তৃতীয় দিন থেকে টার্ন ধরতে পারে। ধোনি চেয়েছিল, ইংল্যান্ডকে চতুর্থ ইনিংস খেলাতে। কিন্তু এখন যা অবস্থা, চতুর্থ ইনিংস মনে হয় না দেখতে পাব।
ফিরে এল ৬২ বছরের লজ্জা। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।
পিচের জন্য নয়, ভারত এখানে পারল না কারণ, ভাল সুইং বোলিং খেলতে এই ভারত জানে না বলে। বিরাট কোহলির অবস্থা খুবই খারাপ। কয়েক মাস আগেও পৃথিবীর অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিল। কিন্তু অ্যান্ডারসনরা বুঝিয়ে দিল, উইকেট টু উইকেট বিরাট খুব ভাল, কিন্তু ভাল আউটসুইংয়ের সামনে নয়। মুরলী বিজয় সিরিজের শুরু দিকে ভাল ব্যাট করলেও পরের দিকটা মোটেই সুবিধে করতে পারছে না। চেতেশ্বর পূজারাকে আমার মনে হয়েছিল, ইংরেজদের সুইংয়ের সেরা জবাব হতে যাচ্ছে। কিন্তু ওর মনে হয় অফ ফর্ম চলছে। তবে ওরও দু’টো দুর্বলতা দেখিয়ে গেল এই সিরিজ। আউটসুইং তো বটেই, যে বল ওকে তাড়া করে সেটাও পূজারা ভাল ম্যানেজ করতে পারে না। ভবিষ্যতের দ্রাবিড় ওকে যে বলা হচ্ছিল, আশা করি এই সিরিজের পরে সেটা থামবে। দ্রাবিড় কিন্তু অ্যান্ডারসনদের এই সুইং বোলিংকে কোনও ভাবেই মাথায় চড়তে দিত না। অবাক লাগছে এটা ভেবে যে ধোনির এই টিমটাই লর্ডসে টেস্ট জিতেছে আঠাশ বছর পর। আবার এই টিমটাই সাউদাম্পটন থেকে ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের প্রথম দিন পর্যন্ত টানা পনেরোটা সেশন জিততে দিয়েছে ইংল্যান্ডকে! এ দিনই ভারতের ছয় ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হল।
ধোনির জন্য বেশি খারাপ লাগছে। ওর প্রথমে ব্যাট করার স্ট্র্যাটেজিটা ব্যাকফায়ার করে গেল ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। ব্যাট করতে নেমে দিনের শেষ ওভারে ফর্মে থাকা গ্যারি ব্যালান্সকে ইংরেজরা হারালেও এই টেস্টে ভারতের আশা প্রায় দেখছি না।
ভারত
(প্রথম ইনিংস) ১৫২
বিজয় ক কুক বো অ্যান্ডারসন ০
গম্ভীর ক রুট বো ব্রড ৪
পুজারা ক জর্ডন বো ব্রড ০
কোহলি ক কুক বো অ্যান্ডারসন ০
রাহানে ক বেল বো জর্ডন ২৪
ধোনি ক জর্ডন বো ব্রড ৭১
জাডেজা এলবিডব্লিউ অ্যান্ডারসন ০
অশ্বিন ক রবসন বো ব্রড ৪০
ভুবনেশ্বর বো ব্রড ০
বরুণ অ্যারন ন.আ ১
পঙ্কজ বো ব্রড ০
অতিরিক্ত ১২
মোট: ১৫২।
পতন: ৮, ৮, ৮, ৮, ৬২, ৬৩, ১২৯, ১৩৭, ১৫২, ১৫২।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ১৪-৩-৪৬-৩, ব্রড ১৩.৪-৬-২৫-৬,
ওকস ১০-১-৪৩-০, জর্ডন ৯-৪-২৭-১।
ইংল্যান্ড
(প্রথম ইনিংস) ১১৩-৩
কুক ক পঙ্কজ বো বরুণ ১৭
রবসন বো ভুবনেশ্বর ৬
ব্যালান্স এলবিডব্লিউ বরুণ ৩৭
বেল ব্যাটিং ৪৫
জর্ডন ব্যাটিং ০
অতিরিক্ত ৮
মোট: ১১৩-৩।
পতন: ২১, ৩৬, ১১৩।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৯-৪-১৭-১, পঙ্কজ ১১-১-৫০-০,
বরুণ ৮-২-২৬-২, অশ্বিন ৭-০-১৬-০।