২৪০ বলের বিশ্বযুদ্ধে আজ আবার দুই চিরশত্রু

দু’দলের বোলিংই ঠিক করে দেবে ম্যাচ কার

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুতেই ভারত-পাকিস্তান ধুন্ধুমার লাগিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাটা আইসিসি-র দারুণ! ক্রিকেটে এই লড়াইটা মানেই রক্তচাপ বাড়ানো টানটান উত্তেজনা, যার টানে গোটা বিশ্ব টেলিভিশনের সামনে জমে যায়। এক ঝটকায় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের এর চেয়ে সেরা উপায় আর হয় না!

Advertisement

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০৩:০৭
Share:

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুতেই ভারত-পাকিস্তান ধুন্ধুমার লাগিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাটা আইসিসি-র দারুণ! ক্রিকেটে এই লড়াইটা মানেই রক্তচাপ বাড়ানো টানটান উত্তেজনা, যার টানে গোটা বিশ্ব টেলিভিশনের সামনে জমে যায়। এক ঝটকায় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের এর চেয়ে সেরা উপায় আর হয় না!

Advertisement

বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত বনাম পাকিস্তানের ইতিহাস অবশ্য অদ্ভূত। যেখানে পাকিস্তান আজ পর্যন্ত এক বারও হারাতে পারেনি ভারতকে। আবার এটাও ঠিক, ক্রিকেটে আগে কী হয়েছে তা দিয়ে বর্তমানের বিচার করা চলে না। তবু বলব, আজ ধোনিদের হারাতে হলে পাকিস্তানকে নতুন কোনও রণকৌশল আমদানি করতে হবে। একেবারে অন্য রকমের খেলা খেলতে হবে। কারণ, ইংল্যান্ডের সঙ্গে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের খেলায় যে আত্মবিশ্বাস দেখলাম, সেটা ভাল লক্ষণ। সবচেয়ে বড় কথা, ধোনিরা ম্যাচটা জিতেছে। হলই বা প্র্যাক্টিস ম্যাচ। কিন্তু জয়টা জয়-ই। তার পরেই চিরশত্রুদের বিরুদ্ধে মাঠে নামার সময় ওই জয়টা ভারতীয় দলকে বাড়তি চনমনে রাখবেই।

ঢাকায় প্রস্তুতি ম্যাচগুলোয় ভারত যে ভাবে খেলেছে তাতে ইতিবাচক ব্যাপারস্যাপার যেমন অনেক, তেমনই কয়েকটা চিন্তার দিকও বেরিয়ে এসেছে। যদিও আমার হিসাবে, ভাল ব্যাপারগুলোর পাল্লাটাই বেশি। যেমন সুরেশ রায়নার ফর্ম। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওর ব্যাটিং দেখে মনে হল ভাল ছন্দে আছে। পেস বোলিংটা সুন্দর সামলাল। টিমে ওর উপস্থিতিটা এক ঝলক টাটকা বাতাসের মতোই। সবচেয়ে ভাল লাগল, ও শর্ট বল খেলার সময় লোভে পড়ে হুক করার চেষ্টা করেনি। শর্ট বল কত ভাল খেলে বোঝাতে কোনও মস্তানি বা দেখনদারির রাস্তায় হাঁটেনি। বরং টাইমিং আর শট নির্বাচনে মন দিয়ে বেশ কয়েকটা ডেলিভারিকে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছে।

Advertisement

ইংল্যান্ড ম্যাচে আরও যে জিনিসটা দেখে ভাল লাগল, সেটা ভারতীয় ব্যাটিংয়ের উঠে দাঁড়ানো। ৪০ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও কিন্তু ভাল রান এল। রায়না পরিস্থিতির চাপে দুমড়ে না পড়ে নিজের ব্যাটিংটা ঠিকঠাক করে গেল। রবিচন্দ্রন অশ্বিন যে ভাবে বল করল, তাতে পাকিস্তানের মতো বড় ম্যাচের আগে দল বাড়তি আশ্বস্ত হবে। মহম্মদ হাফিজদের বিরুদ্ধেও বল হাতে ও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয়। তবে ভারতকে পেস আক্রমণটা ঠিকঠাক সাজাতে হবে। যা দেখছি, ভুবনেশ্বর কুমারকে দিয়ে শুরুতে পুরো কোটা বল করাবে ধোনি। আর সেটাই করা উচিত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বরুণ অ্যারন, মহম্মদ শামিদের ডেথ ওভারগুলোয় নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করতে হবে। ডেথ ওভারে পৌঁছে চিরকাল সমস্যায় পড়ে ভারত। আশা করি, আজকের বড় ম্যাচে ডেথ ওভার সমস্যার উপযুক্ত সমাধান করেই মাঠে নামবে ধোনিরা।

পাকিস্তানের জন্য আবার বিশ্বকাপে ভারতের কাছে ধারাবাহিক হারের স্মৃতি বড় বোঝা। অতীতের ব্যর্থতা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে না পারলে ওদের এই ম্যাচেও সমস্যা হবে। পাকিস্তান আজ কী মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে পাকিস্তান রীতিমতো ভাল টিম। ওদের টিমে এমন কয়েকজন বিপজ্জনক প্লেয়ার রয়েছে, যারা একাই যে কোনও পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ওদের বোলিং আক্রমণও খুব ভাল। তবে শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিংয়ের বিরুদ্ধে সাফল্য পেতে হলে ওদের বোলারদের লাইন-লেংথে নিখুঁত থেকে শৃঙ্খলা দেখাতে হবে। পাকিস্তানের এই দলটায় বেশ কয়েক জন নতুন ব্যাটসম্যান আছে। যাদের দায়িত্ব নিয়ে বোর্ডে রান তোলার কাজটা করতে হবে। যাতে ওদের বোলাররা হাতে লড়াই করার মতো রসদ পায়।

ম্যাচটা এমন সময় শুরু হচ্ছে, যখন দু’টো দলকেই শিশির সামলাতে হবে। ফলে কোনও পক্ষই পরিবেশের বাড়তি সুবিধে পাওয়ার জায়গায় নেই। লড়াই হবে সমানে-সমানে। এশিয়া কাপের সময় শিশির একটা ফ্যাক্টর ছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সন্ধের ম্যাচ শুরুই হচ্ছে সাড়ে সাতটা থেকে। শিশির-সমস্যা তাই দু’টো টিমের জন্যই সমান। এই পরিস্থিতিতে কিন্তু বোলিং আক্রমণের ভারসাম্য ঠিক হওয়াটাই সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। আশা করি ভারত সেই ভারসাম্যটা ঠিকঠাক খুঁজে নেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন