মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছার মিষ্টি নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কমনওয়েলথে সোনাজয়ী সুখেন দে-র মায়ের সঙ্গে শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসের সোনাজয়ী ভারোত্তোলক সুখেন দে-র ক্ষোভ সামাল দিতে মাঠে নামল রাজ্য সরকার। ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র শনিবার বললেন, “কলকাতায় ফিরলে সুখেনকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্মান জানানো হবে। ও যাতে এশিয়াডে ভাল করে সে জন্য রাজ্য সরকার ওকে পাঁচ লাখ টাকা দেবে।”
এ দিনই বেঙ্গল অলিম্পিক কমিটির সভায় সোনাজয়ী সুখেনকে সাহায্য করা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ভারোত্তোলক সংস্থার কর্তারা দাবি তোলেন, এর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানোর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদা তথা বিওএ প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় সভার পর বলেন, “ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে মঙ্গলবার কথা বলব। সুখেনের সমস্যা মদনবাবুকে বলেছি। আমরা বিওএ-র পক্ষ থেকে ওকে দু’লাখ টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সংবর্ধনাও দেব।”
দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জেতার পর তৎকালীন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সম্মান জানানো হয়নি সুখেনকে। তবে টাউন হলে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে পদকজয়ী সব ক্রীড়াবিদকে আর্থিক সাহায্য ও সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে সেটা দিয়েছিল তৃণমূল পুরসভা। সেখানে সুখেনকে ডাকা হয়নি। সংবর্ধনা না দেওয়া হলেও বাম আমলের শেষ ক্রীড়ামন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় সুখেন-সহ তিন পদকজয়ী ক্রীড়াবিদের জন্য ফ্ল্যাটের বরাদ্দ করে দিয়েছিলেন শহরে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর তা বাতিল করে দেন তৃণমূল সরকারের বর্তমান আবাসনমন্ত্রী।
গ্রামের ছেলে সুখেন অবশ্য ফ্ল্যাট বা জমির জন্য দরবার করেছিলেন বারবার। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি। পাননি রাজ্যের কোনও আর্থিক সাহায্যও। শুক্রবার সোনা জেতার পর আনন্দবাজারে এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে সুখেন দাবি করেছিলেন, “ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়ে ফোন করায় তিনি বলেছিলেন, কে সুখেন? তোমাকে চিনি না।!” তা নিয়ে এ দিন তোলপাড় শুরু হয় বাংলার ক্রীড়ামহলে। ফেসবুক এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ দিনও গ্লাসগো থেকে বাংলার সোনার ছেলে ফের দাবি করেন, বাংলার এক জন সফল ক্রীড়াবিদ হিসাবে কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট বা জমির জন্য রাজ্য সরকারের ক্রীড়া দফতর এবং বিওএ-র নানা কর্তাকে বারবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু অন্য অনেকে তাঁর চেয়ে কম যোগ্যতা নিয়ে ফ্ল্যাট বা জমি এবং আর্থিক সাহায্য পেলেও তিনি কিছুই পাননি। সবচেয়ে বড় কথা কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রীড়া দফতর থেকে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে সুখেনকে ফোন করলেও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেউ এখনও যোগাযোগ করার প্রয়োজন মনে করেননি হাওড়া আন্দুলের সোনাজয়ীর সঙ্গে।
সুখেনের ফোন তিনি কেটে দিয়েছেন, সোনাজয়ীর এই দাবি অবশ্য মানতে রাজি হননি ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। বললেন, “আমি ক্রীড়াবিদদের যথেষ্ট সম্মান করি। সবার সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি। তবে আমার তো ফ্ল্যাট বা জমি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। সুখেন আমাকে কখনও ফোন করেছে বলে আমার জানা নেই। হয়তো কোথাও কোনও কমিউনিকেশন সমস্যা হয়েছে। ওর এই সাফল্যকে অভিনন্দন জানাই। আশা করব এশিয়াডেও ও পদক জিতবে।”