‘দানব’ দুমিনিতে কেকেহার

নারিনকে আরও বুদ্ধি করে কাজে লাগাতে হবে

মর্নি মর্কেলের ওই এক ওভারেই যে ও ভাবে মোড় ঘুরিয়ে দেবে, কে জানত? ওই একটা ওভারেই শেষ হয়ে গেল কেকেআর। তার আগে পর্যন্ত ম্যাচটা কিন্তু ওদেরই হাতে ছিল। টি টোয়েন্টি ক্রিকেট এ রকমই। মাত্র কয়েকটা বলেই যে একটা ম্যাচের চেহারা আমূল পাল্টে যেতে পারে, এ তারই নমুনা। শনিবার দুবাইয়ের ম্যাচ এই কথাটাই আরও একবার বুঝিয়ে দিল সবাইকে।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪০
Share:

মর্নি মর্কেলের ওই এক ওভারেই যে ও ভাবে মোড় ঘুরিয়ে দেবে, কে জানত? ওই একটা ওভারেই শেষ হয়ে গেল কেকেআর। তার আগে পর্যন্ত ম্যাচটা কিন্তু ওদেরই হাতে ছিল।

Advertisement

টি টোয়েন্টি ক্রিকেট এ রকমই। মাত্র কয়েকটা বলেই যে একটা ম্যাচের চেহারা আমূল পাল্টে যেতে পারে, এ তারই নমুনা। শনিবার দুবাইয়ের ম্যাচ এই কথাটাই আরও একবার বুঝিয়ে দিল সবাইকে।

নাইটদের ব্যাটিংয়ে আমি তেমন কোনও খুঁত দেখছি না। হয়তো পরের ম্যাচগুলোতে আরও আগ্রাসী হতে হবে কেকেআর ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু বাকিটুকু ঠিকই ঠিল। অনেকে হয়তো বলবেন, আগের দিনই যেখানে চেন্নাই সুপার কিংসের তোলা দুশোর উপর রান টপকে গেল কিংস ইলেভেন, সেখানে ১৬৬ কী করে উইনিং স্কোর হবে? কিন্তু আমি বলব, এই উইকেটে ১৬৬ রান নিয়ে লড়াই করা যায়। সে জন্য বোলিংয়ের স্ট্র্যাটেজিটা নিখুঁত হওয়া দরকার। যা এ দিন নাইটদের হয়নি।

Advertisement

শনিবার রাতে যখন দেখলাম, দশ ওভার পর্যন্ত সুনীল নারিন বল করতে এল না, তখন বেশ অবাকই হলাম। ততক্ষণে দীনেশ কার্তিক ক্রিজে সেট হয়ে চল্লিশ পেরিয়ে গিয়েছে। দীনেশের মতো ফর্মে থাকা একজন ব্যাটসম্যানকে সেট হতে দিলেই যে মুশকিল, তা বোধহয় গম্ভীরের আগেই ভাবা উচিত ছিল। সে জন্যই নারিনকে আগে বল দেওয়া উচিত ছিল। অন্তত এক ওভার তো বটেই। ওই সময় দীনেশকে ফেরানোর কাজটা হয়তো ও-ই করতে পারত। দীনেশ ফিরে গেলে দিল্লি ব্যাটিং সেই চাপটা হয়তো সামলাতে পারত না। তা ছাড়া ও যে শুধু উইকেট নেয়, তা তো নয়, রানও বাঁচায়। আসলে গম্ভীর বোধহয় নারিনকে দিয়ে দুমিনিকে আটকানোর প্ল্যান করেছিল। এই প্ল্যানটাও খারাপ নয়। তবে প্রথম দিকে নারিন একটা ওভার করে নিলে খুব একটা ক্ষতি হত না বোধহয়।


মণীশের বিধ্বংসী ব্যাটিং।


শামির বলে শুরুতেই আউট জ্যাক কালিস।

দুমিনি (৩৫ বলে ৫২) এমন অসাধারণ ব্যাট করলে নারিন কেন, কারও কিছু করার নেই। রীতিমতো দানবের মতো ব্যাট করল ও। শুধু দানবীয় ব্যাটিং নয়, মনে হল, দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটসম্যান রীতিমতো ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে ব্যাট করতে নেমেছিল। চার ওভারে ওদের যখন ৪০ রান বাকি, যখন চাওলা বল করতে এল, তখনই দুমিনি ঠিক করে নেয় দু’ওভারেই বেশিরভাগ রানটা তুলে ফেলবে। শেষ দু’ওভারের মধ্যে এক ওভার নারিন করতে আসার আগেই জয়ের অনেক কাছাকাছি পৌঁছে যেতে হবে। এবং সেটাই করল ও। চাওলার ওভারে আট ও মর্কেলের (২-৪১) ওভারে ২১ তুলেই অর্ধেকের বেশি কাজ সেরে ফেলে।

এই টুর্নামেন্টে এমন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে কিন্তু বারবার পড়তে হবে নাইটদের। তাই বোলিংয়ের স্ট্র্যাটেজিটা ঠিক হওয়া খুব দরকার। তা ছাড়া আমার বিশ্বাস, মর্কেল রোজ রোজ এমন মার খাবে না। রবিবার সকাল থেকেই ও এটা নিয়ে ভাবতে শুরু করে দেবে। আগামী দু-তিন দিনেই নেটে নিজেকে শোধরানোর কাজটাও করে ফেলবে। সময় বেশি নেই। বৃহস্পতিবার পরের ম্যাচেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। আরও আগ্রাসী ব্যাটিং ওদের। ওই ম্যাচের আগে তাই গম্ভীরদের বোলিং বিভাগের কঠিন পরীক্ষাটা দরকার ছিল। এই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচের কৌশল ঠিক করা উচিত গম্ভীরদের। আশা করি ওরা সেটা করবেও।

তবে নাইটদের ব্যাটিংয়েও আগ্রাসনটা আসা দরকার। এ দিন ক’টা রানই বা বাউন্ডারির বাইরে থেকে এসেছে? হিসেব করে দেখুন, ৭৬। অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম রান। ষোলোটা চার আর মাত্র দুটো ছয়। বাকিটা সবই খুচরো রানে। কিন্তু ‘রানিং বিটুইন দ্য উইকেটস’ ভাল হয়েছে বলে একটা মোটামুটি জায়গায় পৌঁছে যায় রানটা। আমার হিসেব বলছে ২৫ থেকে ৩০টা ডট বল খেলেছে নাইটরা। ফলস্বরূপ রানটা গিয়ে দাঁড়ায় ১৬৬-তে।

কালিস ও গম্ভীর কোনও রান না দিয়েই ফিরে যাওয়ার পর যে চাপটা এসে পড়ে কেকেআরের উপর, তা সামলে নেওয়াটাই ছিল মণীশ (৪২ বলে ৪৮) ও রবিনের (৪১ বলে ৫৫) কাজ। সেটাই ওরা করল। ওদের জুটিটা সফল হবে বলেই মনে হচ্ছে। গত পাঁচ বছর ধরে দু’জনে একসঙ্গে খেলে আসছে। সে কর্নাটকের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে বলুন বা আইপিএলে একই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে বলুন। পুণে ওয়ারিয়র্সে খেলার সময় ওদের আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি বলেই জানি, মাঠের বাইরেও ওদের বন্ধুত্ব অসাধারণ। ক্রিজে ওদের বোঝাপড়াটাও সে জন্য বেশ ভাল।

কলকাতা নাইট রাইডার্স

কালিস ক টেলর বো শামি ০
গম্ভীর ক দুমিনি বো কোল্টার-নাইল ০
মণীশ বো নাদিম ৪৮
উথাপ্পা ক টেলর বো উনাদকাট ৫৫
সাকিব ন. আ ৩০
পাঠান বো কোল্টার-নাইল ১১
সূর্যকুমার ন.আ ৮
অতিরিক্ত ১৪।
মোট ২০ ওভারে ১৬৬-৫।
পতন: ১, ১১, ৭৫, ১৩২, ১৫৭।
বোলিং: শামি ৪-০-৩৩-১, কোল্টার-নাইল ৪-০-২৭-২, উনাদকাট ৪-০-২৫-১, নিশাম ২-০-২৬-০, নাদিম ৩-০-২৯-১, দুমিনি ৩-০-২৫-০।

দিল্লি ডেয়ারডেভিলস

বিজয় রানআউট (মণীশ) ০
ময়াঙ্ক ক চাওলা বো মর্কেল ২৬
কার্তিক এলবিডব্লিউ বো নারিন ৫৬
টেলর বো কালিস ৬
দুমিনি ন.আ ৫২
মনোজ ক নারিন বো মর্কেল ৮
নিশাম ক পাঠান বো চাওলা ৮
কোল্টার-নাইল ন.আ ০
অতিরিক্ত ১১।
মোট ১৯.৩ ওভারে ১৬৭-৬।
পতন: ১০, ৩৯, ৬০, ১১৮, ১২৭, ১৬১।
বোলিং: বিনয় ৪-০-৩৫-০, মর্কেল ৪-০-৪১-২, সাকিব ৩-০-২৫-০, কালিস ২-০-১৫-১, চাওলা ২.৩-০-২৭-১, নারিন ৪-০-১৮-১।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন