লর্ডসে প্রথম বলেই বোল্ড কোহলি। ছবি: রয়টার্স
মুরলী বিজয়কে নিয়ে লর্ডস ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মুখটা দেখছিলাম। কেমন যেন থমথমে। গম্ভীর। জানি না আমার যেটা মনে হচ্ছে, ভারত অধিনায়কেরও তখন সেটা মনে হচ্ছিল কি না।
লর্ডস টেস্টের থার্ড ডে মন দিয়ে পুরোটা দেখলাম। কারণ গত রাতে মনে হচ্ছিল, ভারত টেস্টটা জিতে যেতে পারে। কিন্তু সকাল থেকে টিম ধোনিকে যে ভাবে খেলে যেতে দেখলাম, আশ্চর্য লাগল। যদি দিনের একদম শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাদ দিই, তা হলে বাকি সময়ে ভারতীয়দের মনোভাব খুবই অবাক করা। পরিষ্কার বলছি, অ্যালিস্টার কুকের এই ইংল্যান্ড মোটেও আহামরি টিম নয়। কিছু দিন আগে শ্রীলঙ্কা ওদের দেশের মাঠে হারিয়ে এসেছে। ইংল্যান্ডের কাগজে রোজ ছিঁড়ে খাচ্ছে কুককে। প্রচণ্ড সমালোচিত হচ্ছে ওর ক্যাপ্টেন্সি। টিমে মাত্র দু’জন ব্যাটসম্যান। ইয়ান বেল আর কুক নিজে। যারা পুরো অফ ফর্মে। এমন টিমের বিরুদ্ধে নামলে তো আপনাআপনি মানসিকতা হবে হারিয়ে নয়, তোমাদের ধ্বংস করে বেরোব। কিন্তু তার বদলে কী দেখলাম ভারতীয়দের থেকে?
নাইটওয়াচম্যানকে হাফসেঞ্চুরি করে যেতে দেওয়া হচ্ছে। টেলএন্ডার জেনেও তার জন্য কোনও ক্লোজ ইন ফিল্ডারের ব্যবস্থা হচ্ছে না! ইংরেজ পেসারদের মাথায় চড়ে বসার বদলে ডিফেন্স করে-করে চাপটা নিজেরাই নিজেদের উপর বাড়িয়ে তুলছে ভারত!
টেস্টের এখনও দু’টো দিন বাকি। ভারতের হাতে ছ’টা উইকেট, লিড ১৪৫ রানের। ভারত পারবে না, বলব না। চতুর্থ দিন একটা ভাল পার্টনারশিপ হলে ভারত আবার ভাল জায়গায় আসতেও পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি সেটা না হয়, যদি দেখা যায় পঞ্চম দিনে হার বাঁচানোর জন্য নামতে হচ্ছে ধোনিদের তা হলে কিন্তু ক্রিকেটীয় দক্ষতা নয়, ওদের অদ্ভুত মানসিকতাই উঠে আসবে এক নম্বর কারণ হিসেবে।
সকালে ইংল্যান্ডকে শেষ দিকে একশো রান তুলতে দেওয়া, ব্যাট করতে নেমে ঢিমে গতিতে রান তুলে কাজ অনেকটাই জটিল করে ফেলাসব কিছুর পিছনেই ওই আন্ডারডগের মানসিকতা। ভারত ভুলেই যাচ্ছে যে সিরিজটায় আন্ডারডগ ওরা নয়, ইংল্যান্ড। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ভুলে যাচ্ছে চাপটা মোটেও ক্যাপ্টেন কুলের উপর নয়, ক্যাপ্টেন কুকের উপর। ইংলিশ ক্রিকেট এখন ভাঙাগড়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সেট টিম তৈরি করতে ওদের সময় লাগবে। সেই সুযোগটা শ্রীলঙ্কা যদি নিয়ে যেতে পারে, আমরা কেন নেব না?
মনে হয় কোথাও না কোথাও ভারতীয়দের অতীত বিদেশ সফরের কাটা ঘা মনে পড়ে যাচ্ছে। এটা ঘটনা যে, ভারতের শেষ কয়েকটা বিদেশ সফর মোটেও ভাল যায়নি। কিন্তু সেই সব টিম আর এই ইংল্যান্ড মোটেও এক নয়। ভারতের আজ যখন দরকার ছিল খুনে মানসিকতা নিয়ে দিনটা শুরু করা, সেখানে দেখা গেল অতি রক্ষণাত্মক কিছু স্ট্র্যাটেজি। যুক্তি পাচ্ছি না কেন লিয়াম প্লাঙ্কেটের ব্যাটিংয়ের সময় থার্ড ম্যান, কভার সব ফিল্ডারকে ডিপে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। টেলএন্ডার ব্যাট করছে যখন, তখন তো তার কাছাকাছি ফিল্ডার থাকবে। সেটা না করে ওকে হাফসেঞ্চুরি করে যেতে দেওয়া হল। ও-ও ভুল ফিল্ড প্লেসিংয়ের ফায়দা তুলে সিঙ্গলস, টু-জ নিয়ে চলে গেল। এমনকী ৪৯ রানে দাঁড়িয়ে যখন, তখনও দেখলাম না কাছাকাছি ফিল্ডার রাখতে।
তার পর ব্যাটিং। মুরলী বিজয় এই সিরিজটায় অসাধারণ খেলছে এখনও পর্যন্ত। কিন্তু ওর মতো স্ট্রোক প্লেয়ারকেও দেখলাম কেমন গুটিয়ে থাকতে। একটা সময় দেড়শো বল নিয়ে ফেলল চল্লিশ রান করতে। পূজারার সঙ্গে ওর একটা সত্তর রানের পার্টনারশিপ হল ঠিকই, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যে সময়টা খরচ হল, তাতে ওটার আর তেমন দাম থাকল না। আর এই আল্ট্রা-ডিফেন্সিভ ব্যাটিং স্ট্র্যাটেজিরও কারণ বুঝলাম না। আমি বলছি না, বাইরের বলেও চালাবে। বাইরের বল সব সময় ছেড়েই দেবে। কিন্তু যেগুলো ব্যাটে খেলবে, চেষ্টা করবে শট খেলার। একটা-দু’টো রান বার করার। ধোনি ব্যাট করতে নামা র পর যেটা দেখলাম। কিন্তু সেটা দেরি হয়ে গেল কি না কে জানে। আসলে লোয়ার মিডল অর্ডারে ঢুকে পড়েছে ভারতীয় ব্যাটিং। পারবে না, এটা যেমন বলা যায় না, তেমন পারবেই, সেটাও বলা যায় না। মনে রাখতে হবে, লর্ডস টেস্টের ব্যাটিংয়ের সেরা সময়টা কিন্তু পেরিয়ে যচ্ছে। সাধারণত লর্ডসে তৃতীয় থেকে চতুর্থ দিন লাঞ্চ পর্যন্ত ব্যাট করার সেরা সময়। পিচে অসমান বাউন্স দেখছি। ওটা আরও বাড়বে। রানটা যদি গতি বাড়িয়ে আরও কিছুটা তুলে রাখা যেত, যদি কাল লাঞ্চের সময় তিনশো থাকত, অ্যাডভান্টেজটা কার হত? কুকের না ধোনির?
আমি আর কী বলব, ওটা তো সবচেয়ে ভাল এমএসডি-ই জানে!
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস
(আগের দিন ২১৯-৬)
প্লাঙ্কেট ন.আ. ৫৫
প্রায়র ক ধবন বো শামি ২৩
স্টোকস বো ভুবনেশ্বর ০
ব্রড ক ধবন বো ভুবনেশ্বর ৪
অ্যান্ডারসন ক রাহানে বো জাডেজা ১৯
অতিরিক্ত ২০
মোট ৩১৯
পতন: ২৬৫, ২৭৬, ২৮০, ৩১৯
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৩১-১০-৮২-৬, শামি ১৯-৫-৫৮-১, ইশান্ত ২৪-৫-৬১-০, বিনি ১০-০-৪৫-০, জাডেজা ১৮.৫-১-৪৬-২, বিজয় ৩-০-১২-১
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস
বিজয় ব্যাটিং ৫৯
ধবন ক রুট বো স্টোকস ৩১
পূজারা ক প্রায়র বো প্লাঙ্কেট ৪৩
কোহলি বো প্লাঙ্কেট ০
রাহানে ক প্রায়র বো ব্রড ৫
ধোনি ব্যাটিং ১২
অতিরিক্ত ১৯
মোট ১৬৯-৪।
পতন: ৪০, ১১৮, ১১৮, ১২৩।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ১৮-৭-৩৬-০, ব্রড ১৪-৫-৪১-১, স্টোকস ১৩-২-৩৫-১, প্লাঙ্কেট ১২-৫-২৪-২, মইন ৬-১-১৪-০।