প্রশ্ন: আপনার দেশের ঘিওর্ঘে হাজি-কে বলা হয় কার্পেথিয়ানের মারাদোনা । তাঁর সঙ্গেই আপনি রোমানিয়ার হায়েস্ট গোল স্কোরার!
মুতু: (হেসে) জয়েন্টলি নয়। আমিই এক নম্বরে। পরিসংখ্যানটা সঠিক নয়।
প্র: ৩৫টা গোল তো হাজিও করেছেন?
মুতু: করেছেন। কিন্তু ১২৪টা ম্যাচে। আমার ৩৫টা ৭৭ ম্যাচে। তা হলে এক নম্বর কে হল!
প্র: হাজিকে রোমানিয়ার সর্বকালের সেরা ফুটবলার ধরা হয়। আপনাদের প্রজন্ম হাজিতে কতটা প্রভাবিত?
মুতু: অন্যদের কথা বলতে পারব না। তবে আমার সন্তানদের কাছেও হাজি গডফাদার। আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় উনি আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। মানসিক শক্তি জুগিয়েছিলেন। যেটার তখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।
প্র: আপনি দেল পিয়েরোর সঙ্গে জুভেন্তাসে খেলেছেন। ব্রাজিলের রোনাল্ডোর সঙ্গে ইন্টার মিলানে। দুই কিংবদন্তি স্ট্রাইকারের থেকে কী শিখেছেন দু’টো কথায় বলতে বললে কী বলবেন?
মুতু: গোল স্কোরিং আর পেশাদারিত্ব শিখেছি দেল পিয়েরোর থেকে। রোনাল্ডোর থেকে শিখেছি ড্রিবল আর বডি ব্যাল্যান্স। তবে এখানে আমি আরও এক জন ফুটবলারের নাম জুড়তে চাই। রবের্তো বাজ্জিও। উনি আমাকে ফ্রি-কিক আর সেটপিস মারা রপ্ত করিয়েছেন। রবের্তো কার্লোসের সঙ্গে কখনও খেলিনি। তাই বাজ্জিও আমার কাছে সেরা ফ্রি কিক স্পেশ্যালিস্ট।
প্র: বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্র থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে রোমানিয়া...
মুতু: আমাদের দেশের ফুটবল এখন খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হাল ধরার কেউ নেই। এক সঙ্গে অনেক সিনিয়র ফুটবলার অবসর নিয়ে নেওয়ায় একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যেটা নতুন প্রজন্ম ভরাট করতে পারছে না। প্রতিভার অভাব নেই। আসলে তৃণমূল স্তরে কাজ হচ্ছে না। ফুটবলের পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
প্র: আপনি তো হাল ধরতে পারেন।
মুতু: আমাকে জাতীয় কোচ হওয়ার প্রস্তাব দিলে নিশ্চয়ই নেব। কিন্তু দেবে কে? একটা ভুলে জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি (গোমড়া মুখ)।
প্র: আপনাকে দু’বার ড্রাগ নেওয়ার জন্য নির্বাসিত করা হয়। সেই সময়টাকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মুতু: দুঃস্বপ্নের মতো ভুলে যেতে চাই। ব্যাস এটুকুই। (গম্ভীর গলায়) পরের প্রশ্ন...
প্র: আটলেটিকো দে কলকাতা মার্কি ফুটবলার পস্টিগাকে ছাড়াই এখন অসাধারণ খেলছে...
মুতু: কলকাতার টিমগেমই প্রধান অস্ত্র। মার্কি ফুটবলারের অভাব বোরহা, নাতো, দ্যূতিরা সামলে দিচ্ছে। কোচও দলকে ভাল পরিচালনা করছেন। সব মিলিয়ে কমপ্লিট প্যাকেজ।
প্র: আপনারাও তো এ বার দারুণ শুরু করেছিলেন। হঠাৎ কী হল?
মুতু: আমাদের পুণে সিটির ধারাবাহিকতা নেই। ঘরের মাঠে টিম যেমন খেলছে তার দশ শতাংশও অ্যাওয়ে ম্যাচে পারছে না। ভাবতে পারেন, এখনও কোনও অ্যাওয়ে গেম জিতিনি!
প্র: আইএসএলে কি ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হবে?
মুতু: না হওয়ার তো কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছি না। জিকো-রবের্তো কার্লোসরা হল এক-এক জন ফুটবল ইন্সটিটিউশন। ওদের যেমন নিংড়ে নিতে পারবেন আপনারা, তেমনই রেজাল্ট পাবেন।
প্র: ভারতীয় ফুটবলের এমন দুর্দশা কেন?
মুতু: ক্লিক করছে না। রোমানিয়ায় যেটা হচ্ছে। প্রতিভা আছে। কিন্তু পরিকাঠামো আর স্কাউটিংয়ের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে।
প্র: ইন্ডিয়া শুনলে আপনার চোখে ফুটবল ছাড়া আর কী ভেসে ওঠে?
মুতু: স্লামডগ মিলিনিওর আর সলমন খান।
প্র: আপনি বলিউ়ডের সিনেমা দেখেন?
মুতু: আমি সিনেমার পোকা। অবসর সময় আমি সারাক্ষণ সিনেমা দেখি। তবে হলিউড। আমি আল পাচিনোর অন্ধ ভক্ত। আর স্লামডগ মিলিয়নারে ওই লটারি জেতা ছেলেটার অভিনয় আমার খুব ভাল লেগেছে। ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে সলমন খানের নাম শুনেছি। সিনেমা দেখিনি। তবে শুনেছি দারুণ এন্টারটেনিং!
প্র: আবার জন্মালে ফুটবলার, না অভিনেতা হতে চান?
মুতু: সিনেমা দেখা আমার নেশা। আর ফুটবল খেলা পেশা। শুধু পরের জন্মে কেন, প্রত্যেক জন্মেই ফুটবলার হতে চাই। আমি মনে করি ফুটবলার না হলে ক্রিমিনাল হতাম (হাসতে হাসতে)। তবে পরের বার পেলে হয়ে জন্মাতে চাই। নয়তো আদ্রিয়ান মুতুই ঠিক আছে।
প্র: কোনও আক্ষেপ?
মুতু: আমার ছেলেটা ফুটবলার হবে না। ও যে বাস্কেটবল ভালবাসে!