সেই মুহূর্ত। রেফারিকে সামারাস, ‘ওটা পেনাল্টি নয়’। ছবি: এফেপি
আলোর নীচেই অন্ধকার না বলে একে বোধহয় অন্ধকারের উল্টো দিকেই আলো বলাটা সমীচিন। পেনাল্টি আদায় নিয়ে ব্রাজিলের ফ্রেড আর গ্রিসের জিয়র্জিয়স সামারাস যেন দুই মেরুর বাসিন্দা!
বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ উদ্বোধনী ম্যাচে বিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া বক্সে ফ্রেডের পতনে ব্রাজিলের মহাগুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি পাওয়া নিয়ে যখন ফুটবলগ্রহ জুড়ে বিতর্ক, তখন তার দু’দিন পরেই কলম্বিয়া-গ্রিসের আপাত নিরামিষ ম্যাচে রেফারি পেনাল্টি দিতে চাইলেও সংশ্লিষ্ট ঘটনায় বিপক্ষ বক্সে পড়ে থাকা গ্রিক ফুটবলারের হাত তুলে ‘পেনাল্টি নয়’ দেখানোটা অসাধারণ খেলোয়াড়সুলভ আচরণ হিসাবেই দেখছেন অধিকাংশ ফুটবল-পণ্ডিত।
ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের সত্তর মিনিটে ঘটা ওই ঘটনার সময় স্কোর ছিল ১-১। বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে নেইমার ২-১ না করলে শেষ পর্যন্ত নিজের দেশে ৬৪ বছর পর প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচে ব্রাজিলের ভাগ্যে কী ঘটত বলা মুশকিল। ফ্রেডের পতনকে ক্রোয়েশিয়া শিবির ছাড়াও নিরপেক্ষ মহল থেকে অনেকেই দাবি করেছেন ব্রাজিল ফরোয়ার্ডের গেমসম্যানশিপ! যদিও ফ্লুমিনেন্সের ৩০ বছর বয়সী ফ্রেড সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে বলেছেন, “ওই আক্রমণটার সময় আমি ডান পায়ে বলটা কন্ট্রোল করে বা দিকে ঘুরতে যেতেই এক ক্রোট প্লেয়ার পিছন থেকে টেনে ধরে। বলটা ততক্ষণে সামনে এগিয়ে যাওয়ায় নাগাল পাচ্ছিলাম না। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে পেনাল্টি বক্সে পড়ে যাই। আমি এমন ফুটবলার নই, যে খুব সহজেই পড়ে যাই। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচেও প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল আমার সঙ্গে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বলটা নাগালে থাকায় গোল করেছিলাম।”
ফ্রেড যা-ই বলুন না কেন, ক্রোয়েশিয়া বক্সে তাঁর পতনে ব্রাজিলের পেনাল্টি পাওয়া নিয়ে ফুটবলমহলের ভুরু কুঁচকানো এখনও পুরোপুরি যায়নি। এ হেন সন্দেহজনক আবহের মধ্যে শনিবারের কলম্বিয়া-গ্রিস ম্যাচে যেন ঠান্ডা দমকা বাতাসের মতোই সামারাস-কাহিনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে কলম্বিয়ার বক্সে বল দখলের লড়াইয়ে পড়ে গিয়েছিলেন গ্রিক ফরোয়ার্ড সামারাস। ম্যাচে তখন তাঁর দল ০-১ হারছে। সামারাসেরও দেশের জার্সিতে শেষ ১৬ ম্যাচে গোল নেই (গতকালের পর সংখ্যাটা ১৭ দাঁড়িয়েছে)। শেষ গোল ২০১২ ইউরো কাপে জার্মানি ম্যাচে। অথচ তা সত্ত্বেও সামারাস আঙুল তুলে মার্কিন রেফারি মার্ক জেগারকে ইঙ্গিত করেন, তিনি নিজে পড়ে গিয়েছেন। পেনাল্টি নয়। কারণ, সেই মুহূর্তে রেফারি পেনাল্টি প্রায় দিয়ে বসেছিলেন।
ফ্রেড কি সে দিনের ম্যাচের জাপানি রেফারি নিশিমুরাকে এ রকম ইঙ্গিত কোনও দিতে পারতেন না? তা হলে তো তিনি ফ্রেড আর সামারাস আজ এক ব্র্যাকেটে থাকতে পারতেন। যার নাম স্পোর্টসম্যানশিপ। খেলোয়াড়ি মনোভাব।