ফুটবলারের স্ত্রী-বান্ধবী হোটেলে নয়

বিবর্ণ ফেড কাপে ফুটবল কম, বজ্র আঁটুনি বেশি

আইএসএলের জ্বর থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি গোয়া! হয়তো ভারতীয় ফুটবলও। না হলে ফেড কাপের মতো টুর্নামেন্টের এমন হাল কেন? বিমানবন্দর থেকে মারগাও, ভাস্কো থেকে কোলাবা জিকো, রবার্ট পিরেস, সান্তোসদের নিয়ে তৈরি বিশাল-বিশাল হোর্ডিং এখনও রয়েছে। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার আট দিন পরেও। দেশের দু’নম্বর টুর্নামেন্ট ফেড কাপ, শুরু হয়ে গেল আজ থেকে। কিন্তু তা নিয়ে তেমন আগ্রহ কোথায়?

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

মারগাও শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৮
Share:

আইএসএলের জ্বর থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি গোয়া! হয়তো ভারতীয় ফুটবলও। না হলে ফেড কাপের মতো টুর্নামেন্টের এমন হাল কেন?

Advertisement

বিমানবন্দর থেকে মারগাও, ভাস্কো থেকে কোলাবা জিকো, রবার্ট পিরেস, সান্তোসদের নিয়ে তৈরি বিশাল-বিশাল হোর্ডিং এখনও রয়েছে। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার আট দিন পরেও। দেশের দু’নম্বর টুর্নামেন্ট ফেড কাপ, শুরু হয়ে গেল আজ থেকে। কিন্তু তা নিয়ে তেমন আগ্রহ কোথায়? ডুডু-কাতসুমি-সুনীল ছেত্রীদের হোর্ডিং দূরে থাক, ফেড কাপ কবে থেকে, তা নিয়েই কোনও ব্যানার নেই কোথাও। ফতোরদা স্টেডিয়াম, যেখানে দিন পনেরো আগে টিকিটের জন্য লম্বা লাইন পড়েছিল, কলকাতা-গোয়া ম্যাচের আগে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল টিকিট-না পাওয়া ক্ষুব্ধ জনতা সেই একই স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টারগুলোকে দেখা গেল মাছি তাড়াচ্ছে! ছ’শো কোটির জাঁকজমক আর আভিজাত্যের আইএসএলের পাশে ফেড কাপকে সত্যিই কেমন যেন দুয়ো রানি মনে হচ্ছে। যেখানে চাম্পিয়ন হলে এএফসি কাপে খেলার সুযোগ আসবে সেই টুর্নামেন্টের কী দুর্দশা! নীতা অম্বানীর টুর্নামেন্ট সত্যিই যেন শুষে নিয়েছে সব কিছু।

ফুটবল-প্রেমী রাজ্য গোয়ায় এখন পর্যটন মরসুম। ক্রিসমাস থেকে বর্ষবরণ উদযাপনের তাগিদে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার-হাজার পর্যটক এসে হাজির সমুদ্র সৈকতে। সেই আকর্ষণ এতটাই যে, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহকেও দেখলাম চূড়ান্ত ব্যস্ততা সত্ত্বেও এখানে চলে এসেছেন। পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে। এমনিতে পযর্টন ব্যবসার উপর দাঁড়িয়ে গোয়ার অর্থনীতি। ফুটবল নিয়ে লোকজন মাথা ঘামাবেই বা কেন? ফেড কাপ কেন যে এখন হচ্ছে, যুক্তি পাওয়াও কঠিন। অপেশাদারিত্ব ছাড়া একে কী-ই বা বলা যায়! তার উপর নানা সমস্যায় টিভিতে উদ্বোধনী ম্যাচটাই দেখানো গেল না!

Advertisement

বিপণন, উদ্বোধনে চমক, দশর্কদের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা প্রফুল্ল পটেল অ্যান্ড কোম্পানির তা নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা নেই। আইএসএলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের ফেড কাপকে আরও বড় আকারে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে পেশ করার মরিয়া চেষ্টা না থাকলে কী হবে, আইন-কানুনে কিন্তু তারা ছাপিয়ে যাচ্ছে সদ্য শেষ হওয়া হাইপ্রোফাইল টুর্নামেন্টকে। এ যেন সেই ‘খেতে দিতে পারে না কিল মারার গোসাঁই’ গোছের ব্যাপার।

সেটা কেমন? ফেডারেশনের নিয়োগ করা নিরাপত্তা কাম সংযোগরক্ষাকারী অফিসার জাভেদ সিরাজ যা ফতোয়া দিয়েছেন ক্লাবগুলিকে, তা ফুটবলে তো বটেই ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে সম্ভবত নজিরবিহীন। কোনও ফুটবলার তাঁর বান্ধবী বা স্ত্রীকে নিয়ে হোটেলে থাকতে তো থাকতে পারবেনই না, লবিতে গিয়ে কোনও আত্মীয় বা বন্ধুর সঙ্গেও কথা বলতে পারবেন না। টিম হোটেলে আনা যাবে না কাউকেই। কোচ বা ম্যানেজারের অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা যাবে না, স্টেডিয়ামে ঢোকার আগে ফোন জমা রাখতে হবে এ সব আইএসএলে ছিলই। কিন্তু সেখানে তো লুই গার্সিয়া থেকে দেল পিয়েরো, সবাই স্ত্রী-বান্ধবীদের নিয়ে হোটেলেই থাকতেন। কিন্তু তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে ফেডারেশনের ইন্টিগ্রিটি অফিসারের নির্দেশ। যা শুনে ম্যানেজার্স মিটিং-য়েই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন সালগাওকর-স্পোর্টিং ক্লুবের ম্যানেজাররা। তাঁরা সভায় বলেন, তাঁদের ফুটবলাররা অনেকেই বাড়ি থেকে থেকে ম্যাচের দিন হোটেলে আসবেন। ওরা কি স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবে না? মিটিং থেকে বেরিয়ে মোহনবাগান ম্যানেজার প্রতীম রায় বললেন, “সব ঠিক আছে। কিন্তু স্ত্রী বা কোনও আত্মীয় এসে হোটেলের লবিতে কথা বলতে পারবে না এটা হয় নাকি?” আর সালগাওকর সচিব রাজ গোমসের মন্তব্য, “আসল কাজটাই হচ্ছে না। ফেডারেশন ফুটবলটাকে ডাস্টবিনে পাঠাচ্ছে। যত সব হাস্যকর ব্যাপার।” রবিবার লাঞ্চের আগে হোটেলে ডুডু-র্যান্টি-মেহতাবদের ডেকে নিয়ে ইন্টিগ্রিটি অফিসার তাঁর নিয়মের কথা বলে দেন। অনুশীলনের পর আর্মান্দো কোলাসোও সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন, “ফেডারেশনের নিয়ম। প্লিজ কেউ আমাদের টিম হোটেলে যাবেন না।” নিয়মের বাড়াবাড়িতে সবাই ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে ডুডু-র্যান্টির মতো বিদেশিরা। যাঁরা দীর্ঘ দিন গোয়ায় খেলেছেন। ঠিক করে রেখেছিলেন পরিবার নিয়ে আসবেন এই উত্‌সবের মরসুমে। মুখে কিছু না বললেও টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বলে শোনা গেল।

তাঁদের কে বোঝাবে, মোটা টাকার মাইনে নিতে হলে কিছু তো করে দেখাতে হয়! নইলে আর ইন্টিগ্রিটি অফিসার কেন পুষবে ফেডারেশন? তা সেই ফতোয়া যত হাস্যকরই হোক!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন