ব্যাকফুট আর নামের চাপই ভোগাচ্ছে

বিরাট কোহলির অবিশ্বাস্য খারাপ ফর্ম দেখে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখচোখ কালো হয়ে পড়া স্বাভাবিক। যে ছেলেটা গত দেড় দু’বছর ধরে প্রশ্নাতীত ভাবে দেশের এক নম্বর ব্যাটসম্যান, যে ছেলেটা একটার পর একটা ম্যাচ জিতিয়েছে ভারতকে, ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে তার গড়ই কি না ১৪! তিন নম্বর টেস্টেও পৌঁছেও সে ফর্ম খুঁজে পাচ্ছে না, প্রত্যেকটা ম্যাচে যার নিয়ম করে রান করা নিয়ম ছিল।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:০৬
Share:

সাউদাম্পটনেও চূর্ণ। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স

বিরাট কোহলির অবিশ্বাস্য খারাপ ফর্ম দেখে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখচোখ কালো হয়ে পড়া স্বাভাবিক। যে ছেলেটা গত দেড় দু’বছর ধরে প্রশ্নাতীত ভাবে দেশের এক নম্বর ব্যাটসম্যান, যে ছেলেটা একটার পর একটা ম্যাচ জিতিয়েছে ভারতকে, ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে তার গড়ই কি না ১৪! তিন নম্বর টেস্টেও পৌঁছেও সে ফর্ম খুঁজে পাচ্ছে না, প্রত্যেকটা ম্যাচে যার নিয়ম করে রান করা নিয়ম ছিল।

Advertisement

দু’টো কারণ দেখতে পাচ্ছি বিরাটের এমন জঘন্য ব্যাটিং-ফর্মের পিছনে। প্রথমটা টেকনিক্যাল। দ্বিতীয়টা মানসিক। আর দ্বিতীয় কারণটা প্রথমকে আক্রমণ করে বসছে বলেই পরের পর ও এ ভাবে ব্যর্থ হয়ে চলেছে।

একটা কথা মানতে হবে যে, আইপিএল সেভেন থেকেই বিরাটের ফর্ম পড়ছিল। দরকারের সময় ও আরসিবিকে জিতিয়ে দিতে পারেনি, যা ওকে জাতীয় দলের জার্সিতে প্রায় সব সময়ই করতে দেখা যেত। কেউ কেউ তখন বলেছিল, নীল জার্সিটাই আসল জার্সি বিরাটের। ফ্র্যাঞ্চাইজির নয়। কিন্তু বিরাটকে যতটুকু চিনি আমি, ও ভাবে ক্রিকেটটা ও খেলে না। যাই হোক, আইপিএল থেকেই দেখছিলাম, ও বারবার নিজেকে চাপে ফেলে দিচ্ছে। রান করতেই হবে ভেবে নামছে আর আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছে।

Advertisement

আসলে ওর বয়স খুব অল্প। এর মধ্যেই ও ভারত তো বটেই, বিশ্বেরও প্রথম দু’তিন জন ব্যাটসম্যানের এক জন। আমি বিরাট কোহলি, নামলে রান আমাকে করতেই হবে এমন ধারণার ওর মনকে আক্রমণ করা খুব অস্বাভাবিক নয়। ও ভাবতে ভাবতে নামছে, আজ রান করব। করবই। কিন্তু কী ভাবে সেটা করবে, সেটা ভাবছে না। টেকনিক্যাল একটা খুঁত ওর দেখতে পাচ্ছি। আজকেরটা ধরলে এ বারের ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে বিরাটের এটা পাঁচ নম্বর ইনিংস হল। তার মধ্যে তিনটে ভাল বলে আউট হল। নটিংহ্যাম টেস্টে বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে আউট হল। তার পর ভাবল, ঠিক আছে, বাইরের বল খেলব না। লর্ডস টেস্টে আবার ছাড়তে গিয়ে দেখল বলটা পড়ে অনেকটা ঢুকে ওর অফস্টাম্প উড়িয়ে দিল! অফ ফর্মে থাকা এক জন ব্যাটসম্যানের পক্ষে তখন ভাবা খুব স্বাভাবিক যে, আমি তা হলে করবটা কী? আমার অফ স্টাম্পটা কোথায়? ছাড়তে গেলেও আউট হচ্ছি, না ছাড়লেও আউট হচ্ছি।

তিনটে টেস্টেই বিরাটের মধ্যে অনেক আগে থেকে ফ্রন্টফুটে চলে আসার একটা প্রবণতা দেখলাম। আপনি যদি ফ্রন্টফুটে আগেভাগে কমিট করে দেন, আপনার ব্যাকফুট অত নড়বে না। ব্যাটসম্যান কী করে, ফ্রন্টফুটের সঙ্গে ব্যাকফুটেও স্টাম্প কভার করার চেষ্টা করে। কিন্তু ওর ব্যাকফুটের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অ্যাক্রস যেতে পারছে না। বলের লাইনে ব্যাকফুট না যাওয়ায় কোন বলটা ছাড়া উচিত, কোনটা নয় ধরতে পারছে না। অনেক সময় শরীর থেকে দূরে আপনা-আপনিই খেলে ফেলছে।

আজ ওকে কিন্তু অতটা খারাপ লাগছিল না। বল ভাল ছাড়ছিল প্রথম দিকে, দুধর্র্র্ষ একটা কভার ড্রাইভ বেরোল, মনে হল যে আজ বড় রান করে দেবে। তার পর দেখলাম, আবার একটা বাইরের বল খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেল। যেটা দেখার পর আমার যেমন হতাশ লাগছে, তেমন নিশ্চয়ই ওরও লাগছে। সবার আগে ওকে ওর মনকে ঠিক করতে হবে। রেজাল্ট নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের ভাবনা বন্ধ করতে হবে। ওকে ভাবতে হবে যে আমি ভাল ইনিংস খেলব। ভাল শটের দিকে যাব। তার পর যা হয়, হবে। রান তা হলে আপনিই আসবে। আর তখন ওর টেকনিক্যাল রোগটাও সেরে যাওয়া উচিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement