ওয়াংখেড়েতে ঋদ্ধি। ৪৭ বলে অপরাজিত ৫৯। ছবি: পিটিআই
গুনে গুনে ঠিক সাতটা বছর লেগে গেল!
ঋদ্ধিমান সাহা শেষ যে বার আইপিএলে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন, সেটা টুর্নামেন্টের প্রথম বছর। করেছিলেন কেকেআরের জার্সিতে। কিংস ইলেভেনের বিরুদ্ধে।
ঋদ্ধিমান সাহা আইপিএলে দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরিটা পেলেন আজ, শনিবার। সাত বছর পরে। এ বার কিংস ইলেভেনের জার্সিতে।
কথাটা শুনে হেসে ফেললেন বাংলা উইকেটকিপার। ম্যাচ শেষে মুম্বই থেকে ফোনে বলছিলেন, “কী করব? সব সময় তো রান পাওয়া যায় না। আজ হয়ে গেল। তবে এটা ঠিক যে এই হাফসেঞ্চুরিটা আত্মবিশ্বাস আরও ভাল জায়গায় পৌঁছে দেবে।”
চলতি আইপিএলে শনিবারের আগে বাংলা ক্রিকেটারদের নিয়ে বলার মতো কিছু ছিল না। মনোজ তিওয়ারিকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীরতন শুক্ল দু’টো ম্যাচ খেলেছেন। ব্যাট পাননি, বল করেছেন মাত্র দু’টো ওভার। অশোক দিন্দা মাঝে মাঝে জ্বলে উঠেছেন। মহম্মদ শামির উপর যতটা প্রত্যাশা ছিল, ততটা পারফর্ম করতে পারেননি। এ দিন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ঋদ্ধিমানের চারটে বাউন্ডারি ও তিনটে ছক্কা সমেত ৪৭ বলে ৫৯ দেখার পর বঙ্গ ক্রিকেট বলতে শুরু করেছে, বাংলা ক্রিকেটাররা যে আইপিএলে খেলছে শনিবারের পর সেটা বোঝা গেল!
আপনি নিজে সেটা মনে করেন?
“আরে, সবাই তো চেষ্টা করছে। আমি নিশ্চিত, মনোজ-লক্ষ্মীরাও নিজেদের প্রমাণ করে দেবে। সবাই ঠিকঠাক সুযোগও পাচ্ছে না। ওরা যদি ভাল কিছু করে, তাতে তো বাংলা ক্রিকেটেরই ভাল,” বলে দিচ্ছেন ঋদ্ধি। ঘটনা হচ্ছে, দিল্লিতে লক্ষ্মীদের যে অবস্থা বর্তমানে, বছরখানেক আগে সেটা ঋদ্ধির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল। চেন্নাই সুপার কিংসে ধোনি থাকায় তাঁর বরাবরের জায়গা ছিল রিজার্ভ বেঞ্চ। কিংস ইলেভেনে সেটা হচ্ছে না। বরং প্রথম এগারোয় তাঁর জায়গা নিশ্চিত, কারণ টিমের প্রধান উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান।
“এক দিক থেকে সেটা ঠিক। কিংস ইলেভেনে আমি জানি উপরে হোক বা নীচে, ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাবই,” বলছিলেন ঋদ্ধি। একটু থেমে ফের যোগ করলেন, “কেকেআরে থাকার সময় কয়েকটা ম্যাচে উপরের দিকে ব্যাট করেছি। সিএসকে-তেও। আমার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। কিন্তু কিংস ইলেভেনে যে আমি ব্যাটিংয়ের সেরা সুযোগ পাচ্ছি, সেটা ঠিক। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী কিংস ইলেভেনে আমার ব্যাটিং অর্ডার ঠিক হচ্ছে। তাড়াতাড়ি উইকেট পড়ে গেলে আমি যাচ্ছি। নইলে ম্যাক্সওয়েল। আজ যেমন আমাকে বলা হয়েছিল, প্রথমে স্ট্রাইক রোটেট করতে। পরে চালাতে।”
সিএসকে-তে দিনের পর দিন বসে থাকতে থাকতে অবসাদে ভুগতেন না? কখনও মনে হত না, দেশের দু’নম্বর উইকেটকিপার হওয়া সত্ত্বেও এশিয়া কাপে ধোনির পরিবর্ত হিসেবে দীনেশ কার্তিক যাচ্ছেন, আপনি নন? ঋদ্ধির সোজাসাপ্টা উত্তর, “কখনওই মনে হয় না ও সব। আমি ও ভাবে ক্রিকেটটা খেলি না। অবসাদে ভুগলে তো নিজের খেলাটাই আর খেলতে পারব না।”
অশোক মলহোত্র
ঋদ্ধির ব্যাটিং দেখে মনে হল অনেক দায়িত্ব নিচ্ছে। বাংলার ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ইম্প্রোভাইজ করার ক্ষমতা ওর। সিএসকে-তে বসে থেকে থেকে ওর নিজের উপর বিশ্বাসটাই চলে যাচ্ছিল।
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
আইপিএলে এ বার বাংলার সম্মান বাঁচাল ঋদ্ধি। অন্তত কিছু একটা করে দেখাল যে, বাংলার ছেলেরাও ক্রিকেট খেলতে পারে।
সৌরাশিস লাহিড়ী
ঋদ্ধির আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে। নিজেকে প্রমাণ করার ব্যাপারে এই বছরই ওর সেরা সুযোগ।
আইপিএলে বঙ্গ ব্রিগেড
ঋদ্ধিমান সাহা (পঞ্জাব)
ম্যাচ ৬, রান ৭৭, সর্বোচ্চ ৫৯*, স্ট্রাইক রেট ১১৬.৬৬
মনোজ তিওয়ারি (দিল্লি)
ম্যাচ ৪, রান ৩২, সর্বোচ্চ ২৩*, স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৩৩
মহম্মদ শামি (দিল্লি)
ম্যাচ ৬, ওভার ২৪, উইকেট ৪, সেরা ১-২২, ইকনমি ৮.৪১, বোলিং গড় ৫০.৫০
লক্ষ্মীরতন শুক্ল (দিল্লি)
ম্যাচ ২, ওভার ৩, উইকেট ০, ইকনমি ৮.৬৬, বোলিং গড় –
অশোক দিন্দা (আরসিবি)
ম্যাচ ৫, ওভার ১৭, উইকেট ২, সেরা ১-১৪, ইকনমি ৬.৯৪, বোলিং গড় ৫৯