বুধবারের ফুটবল বাজার শুরু হতেই চমক!
দু’নম্বর টেবিলের টার্ন আসতেই, কলকাতার টেবিল থেকে ঘোষণা করা হল‘আমরা নিচ্ছি সঞ্জু প্রধানকে’। নেহরু কাপ জয়ী টিমের অন্যতম ইউটিলিটি মিডিও আটলেটিকোর জার্সিতে খেলবেন।
পরের রাউন্ডে আবার চোখ চাওয়া-চাওয়ি। দেশের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মোহনবাগানের কিংশুক দেবনাথকে ছিনিয়ে নিল কলকাতা।
পরের রাউন্ডগুলোয় আর কাকে নিল কলকাতা?
এখান থেকে অনলাইনে অন্তত দশটা ওয়েবসাইট প্রতি মিনিটের ফুটবলার কেনা-বেচার আপডেট দিচ্ছিল। সেখানে কলকাতার টিমের আপডেট দেখে বাহ, অসাধারণ, ফাটিয়ে দিচ্ছে-র মতো নানা মন্তব্যে ভরে যাচ্ছিল। আগের দিনের ‘জঘন্য’, ‘এরা কারা’-র মতো মন্তব্য মুছে দিয়ে।
হবেই বা না কেন? যাদের কলকাতা এ দিন নিল তাদের সবাই তো চেনা এবং সফল মুখ। সাতের মধ্যে সাত-ই তো কোনও কোনও জাতীয় দলে বা শিবিরে ছিলেন।
ক্লাইম্যাক্স লরেন্স— দেশের সফলতম মিডিও। কলকাতায় খেলে গিয়েছেন। মাঝমাঠে যে কোনও দলের ইঞ্জিন হতে পারেন।
শুভাশিস রায় চৌধুরী— উইম কোভারম্যান্সের টিমের অন্যতম কিপার। বহু দিন ডেম্পোর হয়ে চুটিয়ে খেলছেন আই লিগ।
বলজিৎ সাইনি— ইস্টবেঙ্গলের এই স্ট্রাইকার গোলের মধ্যে তো আছেনই। গত বারও কলকাতা লিগে হ্যাটট্রিক-সহ প্রচুর গোল করেছেন।
লেস্টার ফার্নান্ডেজ— জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। আই লিগেও। উইংয়ে খুবই কার্যকর।
মোহনরাজ— লেফট ব্যাক। ক্লাব ফুটবলে তেমন সাফল্য না থাকলেও জাতীয় দলে খেলছেন নিয়মিত।
প্রতি রাউন্ডের শেষে ভাইচুং ভুটিয়া ব্যাখ্যা দিতে উঠে বারবার প্রশংসা করছিলেন হোসে ব্যারেটোর ভাবনার। সঠিক ফুটবলার নির্বাচনের জন্য।
মোহনবাগানের পরিত্রাতা ছিলেন এক সময়। কত কঠিন যুদ্ধে যে শেষ মুহূর্তে গোল করে উতরে দিয়েছেন সবুজ-মেরুনকে, তা গুনে শেষ করা কঠিন। কখনও চার্চিলের ওসেমানুকে পিঠে নিয়ে গোল করেছেন, কখনও উগা ওপারাকে ড্রিবল করে।
মঙ্গলবারের যুদ্ধে মর্গ্যান-মুম্বইয়ের কাছে পিছিয়ে পড়া আটলেটিকো দ্য কলকাতাকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা ‘গোল’ করে ম্যাচে ফেরালেন সহকারী কোচ হোসে ব্যারেটো। চশমা পরে গম্ভীর মুখে বসে থাকা সবুজ-তোতার একের পর এক চমকে পাঁচ তারা হোটেলের বল রুমের অন্য টেবিলের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছিল বারবার। এতটাই যে গতকালের হতাশা ঝেড়ে ফেলে স্বয়ং ভাইচুং বলে গেলেন, “কলকাতা আজ সত্যিই চমকে দিয়েছে। গত কালের পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন অন্য দলগুলোর সঙ্গে কলকাতাও সমান হয়ে গিয়েছে। সব দলই এখন সমান শক্তিশালী।”
১৪ জন ভারতীয় ফুটবলারকে নেওয়ার জন্য প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে চার কোটি টাকার বাজেট বেঁধে দিয়েছিলেন সংগঠকরা। টার্গেটে থাকা মেহতাব হোসেন, লেনি রদ্রিগেজ, স্টিভন ডায়াসকে খুইয়েও বাজারে অংশ নেওয়া ছয় দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করেছে কলকাতাই। তিন কোটি একানব্বই লক্ষ। এর পরই মুম্বই। চার কোটির মধ্যে সুব্রত পাল-রহিম নবিদের নিতে তারা খরচ করেছে তিন কোটি সাত্তাত্তর লক্ষ। সবথেকে কম খরচ করেছে দিল্লি। দু’ কোটি তিরাশি লাখ। আদিল খানের সঙ্গে স্টিভন ডায়াস মণীশ ভার্গব আর মননদীপ সিংহকে নেওয়া সত্ত্বেও। ‘ভারতের বেকহ্যাম’ স্টিভন ডায়াস আর কিপার অভিজিৎ মণ্ডল তাদের তালিকায় ছিলেন, স্বীকার করলেন ব্যারেটো। অভিজিৎ গেলেন বেঙ্গালুরুতে। “যে নিয়মে ফুটবলার নির্বাচন হয়েছে তাতে সবাইকে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে আমাদের টিম ব্যালান্সড হয়েছে। আজ আমরা টার্গেটে থাকা বেশির ভাগ ফুটবলার পেয়েছি,” ব্রাজিল উড়ে যাওয়ার আগের বিকেলে বলছিলেন ব্যারেটো।
নিয়মানুযায়ী প্রতিটি টিমে তিন জন কিপার রাখা বাধ্যতামূলক। শুভাশিসকে নেওয়ার পর তাই আরও দুই কিপার নিতে হবে কলকাতাকে। এখানে আসা কর্তারা জানাচ্ছেন, স্পেনের দু’জন কিপার নিচ্ছেন তাঁরা। ট্রেভর মর্গ্যানের দল অবশ্য দু’জন কিপার তুলে নিল এ দিনই। দু’বছর আগে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের তাঁর গণ্ডগোলের অন্যতম কারণ ছিল কিপার সন্দীপ নন্দীকে দলে না নেওয়া। সেই ‘প্রিয়’ সন্দীপ নন্দীর সঙ্গে লুই ব্যারেটোকে দলে নিয়েছেন লাল-হলুদের প্রাক্তন কোচ।
ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আইকন ফুটবলার নেওয়ার ব্যাপারে এ দিন নতুন ভাবনার কথা জানানো হয়েছে সংগঠক আইএমজিআরের পক্ষ থেকে। বয়স বেঁধে দেওয়া হয়নি ঠিক, তবে আইএসএলের ‘ললিত মোদী’ জেফারসন স্ল্যাগ এ দিন বলে দিলেন, “আমরা ওজিল, রদ্রিগেজের মতো ফুটবলার তো আনতে পারছি না। কিন্তু এমন প্রাক্তন ফুটবলারকে আইকন করতে হবে যারা ফিট হবে। সদ্য খেলা ছেড়ে দিয়েছে। লোকে ওদের দেখতে যাতে আসে। ১৪ ম্যাচের মতো অন্তত ১২ ম্যাচ খেলবে।” ফলে বুড়ো আইকনের ভাবনা থেকে সরে আসতে হচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের।
কলকাতা ইতিমধ্যেই আইকন হিসাবে স্পেনের বিশ্বকাপার সেট পিসে দক্ষ লুই গার্সিয়াকে নিয়ে নিয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন বোরজে ফার্নান্ডেজকেও নিয়েছে কলকাতা। আট বিদেশির মধ্যে বাকি পাঁচ কাকে পুল থেকে নেওয়া হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ভাবতে শুরু করেছে সব দলই। সামনের মাসেই আন্তর্জাতিক পুল থেকে ফুটবলার নিতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। আই লিগের মতো সুপার লিগেও কিন্তু বিদেশি নির্বাচন বড় ফ্যাক্টর। ব্রাজিল, কলম্বিয়ার মতো দেশের ফুটবলার পুলে রাখতে চাইছেন সংগঠকরা। কলকাতার সুবিধা অন্যতম মালিক হিসাবে আটলেটিকো কর্তাদের সাহায্য পাচ্ছেন। বিদেশিদের ঠিকুজি-কুষ্ঠি যাদের মুখস্ত।
ভারতীয় ফুটবলার কেনার যুদ্ধে শেষ বেলায় সাফল্য পাওয়ার পর কলকাতা কোন বিদেশিকে নেয় তাঁর উপরই কিন্তু নির্ভর করছে দাদা-র টিমের সাফল্য।