সিএসকে বা ভারতীয় বোর্ড, বেছে নিতে হবে যে কোনও একটা। যদি সিএসকের মালিকানা তাঁর অধিকতর পছন্দ হয়, তা হলে বোর্ড প্রশাসনের স্বপ্ন ছাড়তে হবে। আর বোর্ড মসনদ চাইলে, ভুলে যেতে হবে সিএসকে-কে।
বোর্ড নির্বাচনে তিনি দাঁড়াবেন কি না, তা নিয়ে সরাসরি রায় সুপ্রিম কোর্ট দেবে না। তাঁকে বিকল্প দেওয়া হবে। স্পট-ফিক্সিং কাণ্ডে বোর্ডকে শাস্তিও দেবে না সর্বোচ্চ আদালত। কারণ তারা চায় না, বোর্ডের এত দিনের ‘মেশিনারি’ একটা রায়ে বিকল হয়ে পড়ুক। বরং কোর্ট আশা করবে যে, বোর্ডই বলবে শাস্তির মাত্রা ঠিক কতটা হওয়া উচিত। খুব সহজে, মঙ্গলবারের সুপ্রিম কোর্ট বল সম্পূর্ণ ঠেলে দিল নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের কোর্টে। তাঁকেই এখন ঠিক করতে হবে, কী করবেন? বোর্ড প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন, না সিএসকের মালিক হয়ে থাকবেন? শ্রীনিবাসনের বোর্ডকেই এখন বলতে হবে আইপিএলকে কলঙ্কমুক্ত করতে কতটা কঠোর শাস্তি প্রদান করা উচিত।
এ দিন গোটা দিন শুনানি চলায় কেউ কেউ আশা করছিলেন, দীর্ঘ দিন ধরে আদালত-কক্ষে অতিবাহিত বোর্ড-নাটকের মঙ্গলবারই সম্ভবত যবনিকা পতন। কিন্তু তা হল না। শুনানি আবার বুধবারে গেল। শ্রীনি শিবিরের কারও কারও রাতে ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হতে লাগল, বুধবারই চূড়ান্ত গেম-সেট-ম্যাচ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা কার দিকে? আদিত্য বর্মা যথারীতি সুর চড়িয়েই রাখলেন। বললেন, শ্রীনি-নিপাত হবেই। কারণ শ্রীনি না হঠলে বোর্ড দুর্নীতিমুক্ত হবে না। যা শুনে শ্রীনি শিবিরের কেউ কেউ বলতে শুরু করলেন, শ্রীনিকে এ দিনের অবস্থার প্রেক্ষিতে সরানো কঠিন। তাঁর সামনে তো বোর্ড মসনদ বাঁচানোর রাস্তা খুলেই দিল বোর্ড।
যা খবর, তাতে বিকল্প বাছা নিয়ে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চাইলে শ্রীনি সম্ভবত সিএসকে মালিকানা ছেড়েই দেবেন। ইন্ডিয়া সিমেন্টসের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদ থেকেও তখন সরে যেতে পারেন। “অসুবিধের কী আছে? ওঁর জায়গায় ওঁর মেয়ে বসবেন। দু’জন তো আলাদা ব্যক্তি,” এ দিন শুনানি শেষে বলছিলেন এক শ্রীনি ঘনিষ্ঠ। যাঁদের মনে হচ্ছে, আদালত অহেতুক স্পট-ফিক্সিং কাণ্ড থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শ্রীনির স্বার্থের সংঘাত নিয়ে পড়ে থাকছে।
তবে শ্রীনিকে এ দিন আদালতের নির্দেশিকা অমান্য করার জন্য তিরষ্কৃতও হতে হল। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বলা সত্ত্বেও কেন তিনি বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে থেকেছেন, তা নিয়ে রাগারাগি করেন বিচারপতিরা। বোর্ডের আইনজীবী কপিল সিব্বল বাধ্য হন মক্কেলের ভুল স্বীকার করতে। কিন্তু তার পর আবেদন করেন, শ্রীনিকে বোর্ড নির্বাচনে দাঁড়াতে দেওয়া উচিত। নইলে তাঁর সুনাম নষ্ট হবে! বোর্ডকে আদালত আবার পাল্টা বলে, আপনারাই বলুন স্পট-ফিক্সিংয়ের অপরাধীদের শাস্তি নির্ধারণের কী কী রাস্তা হতে পারে। বোর্ড পাঁচটা উপায় দেয়, যা খারিজ হয়ে যায়। আদালত আবার চারটে উপায় বলে, যার প্রথমটা হল শ্রীনিকে বোর্ড থেকে দূরে থাকতে হবে। কিন্তু শ্রীনিকে বোর্ড মসনদে আদালত দেখতে চায়, না চায় না, সেটা পরিষ্কার করে কিছু জানানো হয়নি। বিচারপতি খলিফুল্লাহ আর টিএস ঠাকুরের ডিভিশন বেঞ্চ শুধু বলে, “প্রেসিডেন্ট হিসেবে যদি আপনাকে নির্বাচন লড়তে হয়, তা হলে আপনার লগ্নি (পড়তে হবে সিএসকে) মুশকিলে পড়ে যাবে। আবার যদি আপনি নির্বাচনে না দাঁড়ান, আপনার লগ্নি সুরক্ষিত থাকবে।” যে পর্যবেক্ষণ শেষ পর্যন্ত রায় নির্ণয়ে ব্যবহৃত হলে একটা ব্যাপার পরিষ্কার।
শ্রীনিকে বাঁচতে গেলে আইপিএলে শ্রীনি-ধোনি কম্বিনেশনকে আর বাঁচানো যাবে না!