বোলারদের উপর নিজের ইচ্ছে চাপিয়ে বাজিমাত অন্য ধোনির

ইশান্ত শর্মার দুর্দান্ত পেস বোলিং লর্ডসে যত বেশি আলোচিত হল, হয়তো তার বেশি আলোচনা হওয়া দরকার ওর ক্যাপ্টেনের সাহসিকতা আর বুদ্ধিমত্তার। বহু দিন পরে যেমন ইশান্তকে সত্যিকারের ভাল বোলিং করতে দেখলাম, তেমনই ধোনির মধ্যে পেলাম টিপিক্যাল টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি। উপর-উপর দেখলে মনে হচ্ছে, ধোনি বুঝি ওর স্বভাববিরুদ্ধ অধিনায়কত্ব করেছে। আমি পুরোপুরি একমত নই।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৩:২১
Share:

জয়োল্লাস। ধোনি-স্টাইল। -এএফপি

ইশান্ত শর্মার দুর্দান্ত পেস বোলিং লর্ডসে যত বেশি আলোচিত হল, হয়তো তার বেশি আলোচনা হওয়া দরকার ওর ক্যাপ্টেনের সাহসিকতা আর বুদ্ধিমত্তার। বহু দিন পরে যেমন ইশান্তকে সত্যিকারের ভাল বোলিং করতে দেখলাম, তেমনই ধোনির মধ্যে পেলাম টিপিক্যাল টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি। উপর-উপর দেখলে মনে হচ্ছে, ধোনি বুঝি ওর স্বভাববিরুদ্ধ অধিনায়কত্ব করেছে। আমি পুরোপুরি একমত নই। বরং পাঁচ দিনের ক্রিকেটে খেলা যত গড়ায় ততই ক্রমশ বদলে যাওয়া উইকেটের চরিত্র ঠিকমতো বুঝে কোনও অধিনায়ককে যে ভাবে নিজের দলকে চালনা করতে হয়, ধোনি শেষ দিনের লর্ডসে সেটাই করেছে। এবং সেটা একশোভাগ ঠিক ভাবে করেছে।

Advertisement

প্রথমত লর্ডসের পিচের প্রাণের সন্ধানটা ধোনি একেবারে মোক্ষম সময়ে ধরেছে। একইসঙ্গে মাথায় অঙ্কের মতো কষে রাখতে পেরেছিল যে, ভারতের সিরিজের আগেই শ্রীলঙ্কান পেসারদের শর্ট বলের বিরুদ্ধেও ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা কী রকম সমস্যায় পড়েছিল। ইশান্তকে দিয়ে ধোনি ঠিক সেই লাইনেই শেষ দিনের উইকেটে বোলিংটা করিয়েছে।

তবে আমি মনে করি ইশান্ত আগের দিন থেকেই ভাল বল করছিল। তার উপর এ দিন লাঞ্চের পর থেকে উইকেট পেতে শুরু করায় ইশান্তের বোলিংয়ে ছন্দ, গতি, আক্রমণাত্মক মনোভাব সব একসঙ্গে যোগ হয়ে ওকে বিধ্বংসী করে তুলেছিল। ওই সময় ঘণ্টায় ১৪০ প্লাস-এ বল করেছে ইশান্ত। তবে সে ক্ষেত্রে বোলারকে একেবারে সঠিক ফিল্ড প্লেসিংটাও দিয়েছিল ধোনি। অন সাইডে ছ’জনকে রেখে ৬+৩ ফিল্ড সাজিয়ে পেসার দিয়ে শর্ট বল করিয়েছে ধোনি। ডিপ স্কোয়ার লেগ, ডিপ ফাইন লেগ, লং অন আউট ফিল্ডে তিন জনকে রাখার সঙ্গে-সঙ্গে ক্লোজে শর্ট স্কোয়ার লেগ, শর্ট মিড উইকেট, শর্ট মিড অন রেখে ব্যাটসম্যানকে শর্ট বলের সামনে এক রকম বেঁধে ফেলেছিল ভারত অধিনায়ক। বোঝাই যাচ্ছিল ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের শর্ট বলের মোকাবিলা করতে হবে আজ। শুধু ওরাই সেটা বোঝেনি। রুট, প্রায়র, স্টোকস একে-একে সবাই পুল মারতে গিয়ে আউট হল। অর্থাৎ, ধোনির পাতা ফাঁদেই পা দিল।

Advertisement

তবে একটা কথা বলতে হবে, তিন বছর আগে ভারতকে নিজেদের দেশে টেস্ট সিরিজে ৪-০ হারানো ইংল্যান্ড আর এই ইংল্যান্ড মোটেই এক নয়। কুক, বেল ফর্মের ধারেকাছে নেই। রবসন, ব্যালান্সদের কাছে ভারত হারবে ভাবাটা বাড়াবাড়ি। শেষ দিনের খেলার প্রথম ড্রিঙ্কস ব্রেক-এ একটা তাৎপর্যপূর্ণ ছবি টিভি দেখাচ্ছিল। ধোনি কয়েক মিনিটের ওই বিরতিতেই পুরো টিমকে জড়ো করে নিজের বক্তব্য রাখছে। যেটা সাধারণত দিনের খেলার শুরু হওয়ার ঠিক আগে টিম করে থাকে। আসলে তখনও আর কোনও উইকেট হারায়নি ইংল্যান্ড। কিন্তু ভারত অধিনায়ক তাতে বিচলিত না হয়ে বরং সতীর্থদের মাঠেই উদ্বুদ্ধ করছে! তার কিছুক্ষণ পর থেকেই তো ইশান্তের ভেলকিবাজি শুরু। তবে অবশ্যই তার পিছনে ধোনির সাহসী ক্যাপ্টেন্সি আর উইকেটটাকে একশো ভাগ সঠিক বিচার করতে পারার ব্যাপারও আছে।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

ধোনির নেতৃত্বে এ দিন যদি সত্যিই কোনও স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাপার থেকে থাকে, তা হলে সেটা বোলারের খানিকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে দিয়ে ক্যাপ্টেনের নিজের পছন্দের লাইনে বোলিং করানোটা। ধোনি সাধারণত বোলারকে তাঁর নিজের পছন্দের লাইনে বল করার স্বাধীনতা দিয়ে থাকে।

কিন্তু মঙ্গলবার ম্যাচ শেষে লর্ডসে ধোনি নিজেই স্বীকার করে গেল, ইশান্ত না চাইলেও তাকে দিয়ে ও শর্ট বল করিয়েছে। করতে বাধ্য করেছে। এই ধোনি সত্যিই অচেনা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন