ভবিতব্য নিয়ে আলোচনা বলজিতদের। শনিবার। ছবি: উত্পল সরকার
ফেড কাপে বিদায়ের দরজায় কড়া নাড়ছে ইস্টবেঙ্গল। সবাই ঈশ্বর আর অঘটনের দিকে তাকিয়ে। তা সত্ত্বেও এখনও আলোচনা আর আলোচনা। কাটাছেঁড়া আর টিম মিটিং।
পরপর তিন ম্যাচে ফল-- হার, জয়, ড্র। সাকুল্যে পয়েন্ট তিন ম্যাচে চার। মুম্বই ম্যাচের পর টিমের পারফরম্যান্সে বিরক্ত হয়ে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বারো ঘণ্টাও পেরোয়নি। শনিবার সাতসকালে টিম হোটেলে হাজির আর্মান্দো কোলাসো। কিছুটা সবাইকে অবাক করে। আগেসাইনে তাঁর বাড়ির লোকেরাও জানেন না কোথায় গিয়েছেন বাড়ির কর্তা। স্ত্রী, মেয়েরা দুপুরে জানিয়ে দিলেন, উনি কোথায় গিয়েছেন কিছুই বলে যাননি। আর্মান্দো অবশ্য ততক্ষণে টিম মিটিং-এ বসে গিয়েছেন ডুডু-লোবো-মেহতাবদের সঙ্গে। সরাসরি কৈফিয়ত চাইছেন, “কেন এত খারাপ খেলছ তোমরা? কোথায় সমস্যা? লাখ লাখ সমর্থক তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেন জিততে পারছ না?” মৃদু স্বরে ক্লান্তি আর পরপর ম্যাচের কথা বলতে গিয়েছিলেন কিছু ফুটবলার। ডুডু আর শুভাশিস রায়চৌধুরী ছাড়া সবাই কিছু না কিছু বলেন। শুনে রীতিমতো ধমক দিলেন লাল-হলুদের গোয়ান কোচ। “সেটা আমি জানি। ’৮৫ সাল থেকে কোচিং করাচ্ছি, কখনও আমার কোচিং জীবনে এমন হয়নি। কিন্তু অন্য দলেও আই এস এলে খেলা ফুটবলার আছে। তারা পারছে কী ভাবে?” চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে হঠাত্-ই লাল-হলুদ কোচের চোখ যায় ডুডু-র্যান্টির দিকে। “তোমরা নাকি দেশের সেরা ফরোয়ার্ড জুটি। গোল করতে পারছ না কেন? কোথায় সমস্যা?” নিস্তব্ধ ঘর।
কোচের রুদ্রমূর্তি দেখে কারও কোনও কথা নেই। আর্মান্দো বলে দিলেন, “সেমিফাইনালে যাওয়াটা আর আমাদের হাতে নেই। অন্যদের উপর নির্ভর করতে হবে। কিছু করার নেই। আমাদের কাজ শেষ ম্যাচ জেতা।” ফুটবলাররা কথা দিলেন। আর্মান্দো বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। ব্যস এইটুকুই।
ইস্টবেঙ্গলে এ দিন কোনও অনুশীলন হয়নি। স্পোর্টিং ক্লুব দ্য ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু নাকি হবে আজ রবিবার থেকে। কোচ সারাদিন হোটেলে থাকছেন না। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করছেন। মাঝেমধ্যে ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন ফুটবলারদের। ম্যানেজার অ্যালভিটো ডি’কুনহা জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি এই কাজে অনভিজ্ঞ। তার উপর মা অসুস্থ।
অ্যালভিটো বলছিলেন, “শেষ ম্যাচ জিততেই হবে। বাকিটা ঈশ্বরের ওপর।” ফলে ইস্টবেঙ্গল টিমটা কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে এখানে। হোটেলের লবিতে মিডিয়া গেলে তাদের বের করে দেওয়া হচ্ছে, নিয়মের দোহাই দিয়ে। ডেম্পো, পুণে বা সালগাওকর হোটেলে তেমন কড়াকড়ি নেই। সেখানে সব কোচ-ফুটবলার কথা বলছেন। টিমের এই হালে বেশ কিছু ফুটবলার বহাল তবিয়তে আছেন। উপভোগও করছেন। ক্রিসমাস থেকে নববর্ষ সব কিছু পালন করতে তাঁরা ছুটছেন সমুদ্র সৈকতে বা বন্ধুর বাড়ির পার্টিতে। ফেড কাপে টিমের এই অবস্থা সত্ত্বেও।
এ দিন অবশ্য টিমের গোয়ান কিপার লুই ব্যারেটোর ছেলের জন্মদিন রক্ষার পার্টিতে গেলেন কোচ-সহ বেশ কিছু ফুটবলার। সেখানেও আলোচনা, টিমের এই হল কেন? এক সিনিয়র ফুটবলার বলছিলেন, “আলোচনা করে কী হবে? অর্ণব কতটুকু এগোবে, লোবো কোন জোনটা ধরে খেলবে সেটা তো কোচ বলবেন। সেটাই তো হচ্ছে না।” তবুও যে আলোচনা আর বক্তৃতা থামছে না।