বড়জোর একটা শোকগ্রস্ত কমিটি পাওয়া যাবে

সুনীল গাওস্কর এবং দিলীপ বেঙ্গসরকর কোনও বিষয়ে প্রকাশ্যে স্পষ্টাস্পষ্টি একমত হয়েছেন এমন ঘটনা গত দশ বছরে নিশ্চয়ই ঘটেছে। তবে হাতে গোনা। তবে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত খোদ তামিলনাড়ু লবির পছন্দসই পেশাদার সম্পর্কে বিষোদ্গার করছেন এটা হাতেও গোনা নয়। কারণ কখনও ঘটেনি! তেতাল্লিশ বছর আগে যে ইংরেজ মাঠ ভারতীয় ক্রিকেটকে কৌলিন্যের প্রথম স্বীকৃত বেদিতে বসিয়ে দিয়েছিল, সেই কেনিংটন ওভালই বয়ে এনেছে লজ্জার এমন সর্বনাশা প্রহর যে, ভারতীয় ক্রিকেটে বহু বছর বাদে মৃদু হলেও একটা কোরাস দানা বাঁধছে মাথাদের সরাও। দেশের ক্রিকেট বাঁচাও।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৫
Share:

সুনীল গাওস্কর এবং দিলীপ বেঙ্গসরকর কোনও বিষয়ে প্রকাশ্যে স্পষ্টাস্পষ্টি একমত হয়েছেন এমন ঘটনা গত দশ বছরে নিশ্চয়ই ঘটেছে। তবে হাতে গোনা। তবে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত খোদ তামিলনাড়ু লবির পছন্দসই পেশাদার সম্পর্কে বিষোদ্গার করছেন এটা হাতেও গোনা নয়। কারণ কখনও ঘটেনি!

Advertisement

তেতাল্লিশ বছর আগে যে ইংরেজ মাঠ ভারতীয় ক্রিকেটকে কৌলিন্যের প্রথম স্বীকৃত বেদিতে বসিয়ে দিয়েছিল, সেই কেনিংটন ওভালই বয়ে এনেছে লজ্জার এমন সর্বনাশা প্রহর যে, ভারতীয় ক্রিকেটে বহু বছর বাদে মৃদু হলেও একটা কোরাস দানা বাঁধছে মাথাদের সরাও। দেশের ক্রিকেট বাঁচাও।

টিভি-র ফোন ইন অনুষ্ঠানে, এফএম রেডিও শ্রোতাদের ফোনে-টোনেও গণক্ষোভের জোয়ার। আর কত নীচে নামবে ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট! শুধু তো ১-৩ সিরিজ হারা বা ২৯ ওভারে অলআউট হয়ে যাওয়া নয়। সাতাত্তর সালের পর এই প্রথম ভারত টানা পাঁচ টেস্ট ইনিংসে দু’শো করতে পারেনি। করেছে ১৭৮, ১৫২, ১৬১, ১৪৮ আর ৯৪। আর ওভালে হেরেছে তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ পরাজয় সমন্বিত হয়ে। ইনিংস ও ২৪৪ রানে হারের পিছনে লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা স্টিভের অস্ট্রেলিয়া থাকলে তবু ভাবী প্রজন্মকে ব্যাখ্যা করার একটা কুশন থাকত। কুকদের সামনে সেটাও নেই।

Advertisement

লন্ডনে ফোন করে জানা গেল দল শুধু বিপর্যস্তই নয়, ক্রমাগত বিভ্রান্তির মধ্যেও পড়ে রয়েছে। টিমের কোচ অন্তত টেকনিক্যালি সেরা ব্যাটিং বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। অথচ তাঁর প্রেসক্রিপশন নাকি বিভ্রান্তি বাড়িয়েই যাচ্ছে। ডানকান ফ্লেচার বলেছিলেন, মইন আলিকে সবাই সুইপ মারবে। তা শুনে বিরাট কোহলি নাকি বলেন, আমি তো সুইপ প্রায় মারিই না। সেই অনাগ্রহ কিন্তু বিদ্রোহের আকার নেয়নি। আর শিখর ধবনকে ফ্লেচার বলেন, তোমার ব্যাকফুট শক্ত কাঠের মতো পিছনে পড়ে থাকে। পা এত শক্ত থাকলে ইংলিশ উইকেটে রান পাওয়া সম্ভব নয়। ধবনের শুনে নাকি মনে হয়েছে, এটা তো সমস্যা বোঝা গেল। সমাধানটা কী তো বলুন। গৌতম গম্ভীরকে আবার পরামর্শ দেওয়া হয়, সুইং নির্বিষ করার জন্য দু’টো পা ফাঁক করে দাঁড়াতে। যে ভাবে কালিস, আমলারা দাঁড়ায়। গম্ভীর নাকি বলার চেষ্টা করেন, ওরা অনেক লম্বা। ও ভাবে দাঁড়িয়েও ওদের বডির ব্যালান্স থাকবে। আমার থাকবে না। ফ্লেচার শোনেননি। অজিঙ্ক রাহানে তাঁর পরামর্শ শুনে লর্ডসে সেঞ্চুরি পাওয়ার পর অন্তত ইংলিশ উইকেটে ফ্লেচার-পরামর্শ শোনা নাকি ভারতীয় ড্রেসিংরুমে মোটামুটি স্বতঃসিদ্ধ।

কারও কারও এ সব দেখেশুনে গ্যারি কার্স্টেনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপের আগে বেঙ্গালুরুর নেটে ব্যাট করছেন যুবরাজ। শর্ট বল আত্মরক্ষা করতে সমস্যা হচ্ছে। গেলেন কার্স্টেনের কাছে। কার্স্টেন বললেন, ডিফেন্ড করার কথা ভাবছ কেন? শর্ট বলকে অ্যাটাক করো। ছোট একটা কথা কিন্তু যুবির চিন্তাটাই অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিল। এর পর মোতেরার বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে যখন ব্রেট লি-রা বিপন্ন ভারতকে বাউন্সারে আরও বিধ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলেন, যুবির ব্যাটে ধাক্কা খেয়ে তাঁদের ফিরে যেতে হয়। পরের পর পুল আর হুক যুবরাজ সেই ম্যাচে মারেন যার উৎস ছিল বেঙ্গালুরুর সে দিনের প্র্যাকটিস।

এই যে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে কার্স্টেন-নস্টালজিয়া কারও কারও মধ্যে শুরু হয়েছে তাতে অবশ্য মনে করার কোনও কারণ নেই যে, এখুনি ফ্লেচার তাড়িয়ে পুরনো কোচকে ফেরানো হবে। বরং ওভাল হারাটাই দ্রুত ফাস্ট ফরোয়ার্ড হতে হতে নস্টালজিয়ায় হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।

ধোনির তো শ্রীনি-যুগে মোটামুটি ইচ্ছামৃত্যু। ফ্লেচারও অধিনায়ক না বললে নড়ার পাত্র নন। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে মুদগল কমিটি সেপ্টেম্বরের আগে রিপোর্ট পেশ না করলে হয় বোর্ড নির্বাচন পিছোবে। বা শ্রীনি দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু যিনি-ই প্রেসিডেন্ট হন তিনি তো শ্রীনি-র পাদুকা নিয়েই বোর্ড চালাবেন। তা হলে আর ধোনির ওপর চাপ আসবে কোথা থেকে?

২৫ অগস্ট বিলেতে ওয়ান ডে সিরিজ শুরু। সেখানে সিম আর সুইংয়ের বিরুদ্ধে এত কঠিন প্রশ্নপত্র নেই। তিনটে স্লিপ-গালি নেই। ওয়ান ডে-তে একটু বেশি বাঁক খেলেই ওয়াইড। তা সেই পরীক্ষায় ভাল করলেই লোকে টেস্টের হার ভুলে যাবে। আর সেখানে খারাপ ফল হলেও পাবলিক যতই চেঁচাক। প্রাক্তন ক্রিকেটাররা মিডিয়ায় যা-ই বিবৃতি দিক। তাদের কারও ভোট নেই। বোর্ড গণতান্ত্রিক নয় কাঠামো যা-ই দেখাক, সম্পূর্ণ স্বৈরতান্ত্রিক। যাদের ভোটই নেই তাদের পাত্তা দেবে কোন দুঃখে!

আগের মতো এখন হারলে-টারলে লোকসভাতেও কেউ প্রশ্ন তোলে না। ঝড় বয় না। ধোনির টিমের প্রবাসে হার এতই গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। যা মনে হচ্ছে, ২০১৫ বিশ্বকাপে খারাপ ফল হলে গণ-প্রতিক্রিয়ার বিস্ফোরণ হতে পারে। তখন তার তোড়ে মাথাদের বদল হতে পারে।

এখনকার মতো ইংল্যান্ডে খারাপ ফলের কারণ খতিয়ে দেখতে বড়জোর একটা তদন্ত কমিটি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন