ছবি: উৎপল সরকার
অন্ধকার গায়ে না মাখলে আলোর সন্ধান পাবে কী ভাবে!
মাদ্রিদে প্রাক-মরসুম শিবিরে রিনো-ক্লিফোর্ডদের কথাটা বলতেন আটলেটিকো কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। মঙ্গলবার তিনি কেরল ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে নিজের বলা কথাটারই যেন প্রতিষ্ঠা দিলেন!
মার্কি পস্টিগা-সহ প্রথম দলের পাঁচ-ছ’জন ফুটবলার না থাকা, নিজের মোটা জরিমানা। ফেডারেশনের রক্তচক্ষু। অন্ধকারের মতো পরিস্থিতি গ্রাস করতে এলে তা গায়ে মেখেই জয়ের প্রদীপ জ্বালালেন তিনি। এবং তার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বললেন, ‘‘অনেক ফুটবলারই ছিল না আজ। কিন্তু ছেলেদের বলেছিলাম লড়ে যেতে হবে শেষ পর্যন্ত। সেই পরিকল্পনা ঠিকঠাক খেটে গিয়েছে বলে ভাল লাগছে।’’
তবে হাবাস কথা বলবেন আর সেখানে আত্মসমালোচনা থাকবে না তা-ও হয় নাকি! ম্যাচের শেষের দিকে অলআউট এসে আটলেটিকো রক্ষণে দাপাচ্ছিলেন কেরলের বিনীত, ক্রিস ডাগনালরা। সে কথা তুলতে কোচ সাফ জানিয়ে দেন টিমের শেষ পনেরো মিনিটের পারফরম্যান্স তাঁর মনের মতো হয়নি। ‘‘টিমের প্রথম পঁচাত্তর মিনিটের খেলায় আমি খুশি। তবে শেষের পনেরো মিনিটের খেলা একেবারেই আমাকে খুশি করেনি।’’ একটু থেমে ফের বলতে লাগলেন, ‘‘আসলে নিজেরা গোল করতে গিয়ে ডিফেন্সে অনেক সময় ভারসাম্য নড়ে যাচ্ছে। কিন্তু গোল করে তো ম্যাচে এগিয়ে যেতেই হবে। পুণে ম্যাচের আগে এই ব্যাপারটায় নজর দিচ্ছি।’’
পুণের পরিবেশ নিয়ে গত দু’ম্যাচে হাবাসের টিমের গোলদাতা আরাতা ওরফে নীলকণ্ঠ সম্যক পরিচিত। হোটেলে ফেরার সময় আত্মবিশ্বাসে ফুটে বলছিলেন। ‘‘পুণে আমার ঘরের মাঠ। ওই মাঠে গোল করার ব্যাপারে এখন থেকেই আমি কনফিডেন্ট। আশা করছি পরের ম্যাচ থেকেও তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরতে পারব।’’
প্রথম একাদশের একঝাঁক ফুটবলারকে বাদ দিয়ে এ দিনের জয়কে বড় করে দেখছেন যুবভারতীর মাঠ জুড়ে তেল খাওয়া মেশিনের মতো ঘোরা আটলেটিকোর কানাডিয়ান তারকা হিউম। বেরি এফসি-তে ভাইচুংয়ের একদা সতীর্থ বললেন, ‘‘এই টিম নিয়ে আজ যে তিন পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে পেরেছি সেটা বিরাট ব্যাপার। এই টিম গেমটাই আমাদের দলের সম্পদ।’’
আটলেটিকোর উচ্ছ্বাসের দিন বর্ণময় যুবভারতী। মঙ্গলবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
হেরে কেরল কোচ পিটার টেলর আবার যুবভারতীর মাঠ নিয়ে টিপ্পনি কেটে গেলেন। ‘‘কলকাতার টিমটা এই মাঠে খেলে অভ্যস্ত। তবে ওদের কোচকে কাল মাঠটা সমান করতে সময় দিতে হবে।’’ যে মন্তব্য হাবাসকে মনে করালে স্প্যানিশ কোচের মুখ হঠাৎ গোমড়া। বললেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগেও এই মাঠটার অবস্থা ভাল ছিল না। কিন্তু এখন তো ঠিকই রয়েছে।’’ যদিও এটিকে কোচের এই যুক্তি মানতে নারাজ কেরল টিমে খেলা লাল-হলুদের অভিজ্ঞ মিডিও মেহতাব হোসেন। বললেন, ‘‘মাঠের এ রকম অবস্থা থাকলে কলকাতা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ম্যাচ পাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।’’
গত বছরও তিন ম্যাচের পর সাত পয়েন্ট ছিল আটলেটিকোর। তা হলে কি এ বারও শেষ চারের কক্ষপথ অভিমুখে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে হাবাসের দল? তিনি হাবাস যদিও এর উত্তর দেননি। তবে আরাতা, হিউমরা একরাশ আশঙ্কা গায়ে কঠিন ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের আলো দেখতে পাচ্ছেন বলেই আভাস দিয়ে গেলেন মিডিয়াকে।