প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের চোখে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল

মানসিকতার ফারাকে পিছিয়ে মালিঙ্গারা

সাত বছর পর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত। অবাক হয়ে দেখেছি, বড় মঞ্চ হলেই ভারতীয় দল অবধারিত ভাবে নিজেদের ছাপিয়ে গিয়ে খেলার মানটাকে টেনে বেশ কয়েক ধাপ উপরে নিয়ে যেতে পারে। এ বারও ঠিক সেটাই হল। এই টুর্নামেন্টের আগে ক্রিকেট মাঠে ভারতের সময়টা ভাল যাচ্ছিল না। এমনকী এশিয়া কাপেও এমন কিছু আহামরি দেখায়নি ধোনিদের। কিন্তু এখানে প্রথম দিন থেকেই টিমটা দুরন্ত ছন্দে। দেখে মনেই হচ্ছে না যে ওরা কোনও ম্যাচ হারতে পারে।

Advertisement

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫০
Share:

বিশ্বকাপ জেতার প্রস্তুতি। শনিবার মিরপুরে। ছবি: এএফপি

সাত বছর পর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত। অবাক হয়ে দেখেছি, বড় মঞ্চ হলেই ভারতীয় দল অবধারিত ভাবে নিজেদের ছাপিয়ে গিয়ে খেলার মানটাকে টেনে বেশ কয়েক ধাপ উপরে নিয়ে যেতে পারে। এ বারও ঠিক সেটাই হল। এই টুর্নামেন্টের আগে ক্রিকেট মাঠে ভারতের সময়টা ভাল যাচ্ছিল না। এমনকী এশিয়া কাপেও এমন কিছু আহামরি দেখায়নি ধোনিদের। কিন্তু এখানে প্রথম দিন থেকেই টিমটা দুরন্ত ছন্দে। দেখে মনেই হচ্ছে না যে ওরা কোনও ম্যাচ হারতে পারে। ক্রিকেটের সব বিভাগে অসাধারণ খেলছে ভারত। আর চাপ ব্যাপারটা তো এমন সহজে সামলাচ্ছে, যেন কাজটা সুস্বাদু কেকে কামড় বসানোর মতোই আরামের!

Advertisement

শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস শেষ হওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল, রানটা বেশিই উঠে গেল। সামনে কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু কোহলির বিরাট কাঁধে ভর দিয়ে সেই পরীক্ষায় হাসতে হাসতে সফল ভারত! দেখে ভাল লাগল, ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা রান রেট-কে একবারও ঘাড়ে চেপে বসতে দিল না। উল্টে শুরু থেকেই রান তোলার গতি আস্কিং রেট-এর চেয়ে বেশি থাকল। স্রেফ ব্যাটসম্যানদের ইনিংস সাজানোর অসাধারণ দক্ষতায় এক ওভার বাকি থাকতে জয়ের রানটা তুলে ফেলল ভারত। বড় মঞ্চে এ ভাবে জ্বলে উঠতে পারাটাই কিন্তু আমার কাছে এই ভারতীয় দলের আসল শক্তি। বড় টুর্নামেন্টে নিজেদের লড়াকু মানসিকতা বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছে ওরা।

তবে আমার কাছে এই মুহূর্তে আসল লোকটা বিরাট কোহলি। দিনে দিনে আরও পরিণত হচ্ছে ছেলেটা। নিজের কেরিয়ারে বিরাট মাপের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটারকে কাছ থেকে দেখেছি, একসঙ্গে খেলেছি। হলফ করে বলতে পারি, বিরাট সর্বকালের সেরাদের পাশে বসবে। বড় ম্যাচে প্রচণ্ড চাপের মুখে বিরাট যে ভাবে ঠান্ডা মাথায় নিজের ইনিংস সাজাল, সেটা শুধু ওর অসামান্য ক্রিকেট দক্ষতারই প্রমাণ নয়। ওর ক্রিকেট-মস্তিষ্ক ঠিক কতটা প্রখর, তারও প্রমাণ। লোকে বলছে, বিরাট নাকি বড় রান তাড়া ব্যাপারটার প্রেমে পড়ে গিয়েছে! একদম ঠিক কথা! নিজেকে ক্রমশ জিনিয়াসের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে ছেলেটা। এখনই লিখে নিন, ভবিষ্যতে বহু ক্রিকেটীয় রেকর্ড চুরমার হবে ওর হাতে। শুক্রবারের ম্যাচের দু’টো ছবি আমি ভুলব না। প্রথমটা রোহিতের মিসফিল্ডিং থেকে বাউন্ডারি হতে দেখে বিরাটের মুখ-চোখের অবস্থা। অন্যটা, ধোনি উনিশতম ওভারের শেষ ডেলিভারিটা ইচ্ছে করে ব্লক করার পর জয়ের রান তোলার সুযোগ পেয়ে বিরাটের মুখটা! দু’টো অভিব্যক্তিই বলে দেয় নিজের টিম আর টিমকে জেতানো ব্যাপার দু’টো বিরাটের কাছে ঠিক কতটা দামি। এই জন্যই বিরাট এই মুহূর্তে এ বি ডে’ভিলিয়ার্সের সঙ্গে বিশ্বের সেরাদের অন্যতম। ওর মানসিকতাটাই ওকে বাকিদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। আর এই মানসিকতাটাই আগামী দিনে একশো কোটি ভারতীয় সমর্থকের ভরসা হয়ে উঠবে।

Advertisement

আজকের ফাইনালে দুরন্ত ফর্মে থাকা বিরাট কোহলি আর ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই শ্রীলঙ্কার। সেরা দু’টো টিমই খেতাবের জন্য ঝাঁপাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার হয়ে এই শেষ বার কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নামবে দুই কিংবদন্তি, মাহেলা জয়বর্ধনে আর কুমার সঙ্গকারা। দলকে ফাইনালে তুলে দুই নায়ককে বিদায় নেওয়ার সেরা মঞ্চটা গড়ে দিয়েছে টিমমেটরা। তবু শ্রীলঙ্কানদের চিন্তায় যে ব্যাপারটা ঘুরপাক খেতে বাধ্য, সেটা হল ২০০৭, ২০১১ এবং ২০১২-য় বিভিন্ন ফরম্যাটে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেও ট্রফি জিততে না পারা।

মিরপুরের পিচের জন্য শ্রীলঙ্কার টিম কম্বিনেশন অবশ্য আদর্শ। ব্যাটিং এবং বোলিং মিলিয়ে দারুণ ভারসাম্য রয়েছে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হল, খুনে মেজাজের ভারতকে বড় ম্যাচে টেক্কা দেওয়ার মতো মানসিক শক্তি কি ওদের আছে? লাসিথ মালিঙ্গার নেতৃত্বে ওরা আগের ম্যাচটায় সবাইকে চমকে দিয়ে অসাধারণ খেলেছে। কিন্তু ভারতকে হারাতে হলে রণকৌশলে আজ নতুন কোনও ম্যাজিক আবিষ্কার করতে হবে মালিঙ্গাকে। ভারতীয় দলে একটাই সম্ভাব্য পরিবর্তন দেখছি, ফিরতে পারে শামি। লড়াই জিততে হলে বিরাট কোহলিকে দ্রুত ফেরত পাঠানোর কোনও রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। সেটা না পারলে কিন্তু আরও এক বার রানার্সের ট্রফিটা নিয়ে বাড়ি ফিরবে ওরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন