পিটার রিড শুক্রবার যুবভারতীতে যেমন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
আইএসএলে হঠাত্-ই হাজির দিয়েগো মারাদোনা!
ছ’বছর আগে যুবভারতীতে বুকে চাপড় মেরে যিনি বুঝিয়েছিলেন, ‘আমিই সেরা’, শুক্রবার সকালে সেই ফুটবল রাজপুত্রের প্রত্যাবর্তন ঘটল!
তবে সশরীরে নয়। ‘হ্যান্ড অব গড’-এর সৌজন্যে!
কিংবদন্তি আর্জেন্তিনীয়কে ফের সল্টলেক স্টেডিয়ামে টেনে আনলেন আইএসএলে মুম্বই সিটি এফ সি-র কোচ পিটার রিড। সেই বিতর্কিত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে যিনি ছিলেন মারাদোনার বিপক্ষ দলে।
১৯৮৬-তে বিশ্বকাপের ওই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্তিনা-ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচের প্রথম গোল নিয়েই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন মারাদোনা। অভিযোগ উঠেছিল, গোলটা হাত দিয়ে করেছেন তিনি। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল বিশ্বজুড়ে। ২-১ ম্যাচ জিতে শেষ চারে গিয়েছিল আর্জেন্তিনা। ছিটকে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। আঠাশ বছর পরেও সেই ক্ষত শুকোয়নি সে দিনের ইংল্যান্ডের ডিফেন্সিভ মিডিও রিডের। ‘হ্যান্ড অব গড’-এর কথা উঠতেই মুখের হাসি মিলিয়ে যায় মুহূর্তে।
“মারাদোনা সে দিন প্রতারণা করেছিল ফুটবল বিশ্বকে। ওর মতো ফুটবলারের কাছ থেকে এটা আশা করা যায়নি,” যুবভারতীতে মুম্বই টিমের অনুশীলনের পর বলছিলেন রিড।
সেই ম্যাচে মারাদোনা তাঁর দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন পাঁচ জন ইংরেজ ফুটবলারকে ড্রিবল করে। যা দিয়েগোর জীবনের সেরা গোল বলেন ফুটবলপন্ডিতরা। ইংল্যান্ডের ওই পাঁচ জন কেটে যাওয়া ফুটবলারের মধ্যে এক জন ছিলেন রিড। “দ্বিতীয় গোলটা মারাদোনা সত্যিই খুব ভাল করেছিল। কিন্তু হাত দিয়ে প্রথম গোল না করলে, সে দিনের ম্যাচের রেজাল্ট কিন্তু অন্য রকম হতেই পারত” এত দিন পরেও হতাশা ঝরে পড়ে রিডের গলায়।
কিছুক্ষণ পরই অবশ্য অতীত ভুলে বর্তমানে ফেরেন ব্রিটিশ কোচ। আইএসএলে রবিবার আটলেটিকো দে কলকাতা-র বিরুদ্ধে ম্যাচের কথা উঠতেই আবার চনমনে হয়ে ওঠেন তিনি। নির্বাসনের জন্য আনেলকা নেই। এফএ-র কাছে আনেলকার ব্যান তুলে নেওয়ার জন্য মুম্বইয়ের আবেদন বাতিল হয়ে গিয়েছে এ দিন। আনেলকা অনুশীলন করলেও চোটের জন্য এ দিন প্র্যাকটিস করতেই আসেননি লিউনবার্গ। সুইডিশ মিডিওকে খেলাবেন কি না, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি রিড। উল্টে বলে দিলেন, “এখানকার কৃত্রিম ঘাসের মাঠে প্র্যাকটিস করলে হয়তো ওর চোট আরও বাড়বে। তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইনি।” দলীয় সূত্রের অবশ্য খবর, রবিবার লিউনবার্গকে খেলানোর চেষ্টা চলছে। এ দিন হোটেলে তিনি জিম করেছেন। ফিজিও-র সঙ্গেও সময় কাটিয়েছেন।
আনেলকা না থাকাটা কলকাতাকে অনেকটা সুবিধা করে দেবে বোঝা গিয়েছে এ দিন মুম্বইয়ের অনুশীলনেই। প্র্যাকটিসে গিয়ে দেখা গেল, ফ্রান্সের বিশ্বকাপার দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। আনেলকার নিখুঁত পাস, দুরন্ত সময়জ্ঞান, শরীরের মোচড়, ড্রিবলিং বোঝাই যাচ্ছিল না বয়স পঁয়ত্রিশ পেরিয়েছে। প্র্যাকটিস শেষে যখন দলের সব ফুটবলার মাঠ ছেড়ে উঠে যাচ্ছেন, তখনও একা আনেলকা একের পর এক শট মেরে চলেছেন গোলে। হয়তো ম্যাচ খেলতে না পারার হতাশাই আছড়ে পড়ছিল জালের মধ্যে।
কলকাতার ফুটবলারদের নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবছেন না শহরে নামার পর থেকেই দাবি করেছেন পিটার রিড। কলকাতার আটলেটিকো কিন্তু মুম্বইকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। এতটাই যে, এ দিন সকালে আনেলকাদের প্র্যাকটিস দেখতে লোক পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। বিপক্ষের স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে ধারণা পেতে।
বিপক্ষকে গুরুত্ব না দেওয়াটা হতে পারে রিডের কৌশল। বিপক্ষকে চাপে রাখার স্ট্র্যাটেজি। তবে মুম্বই ফুটবলাররা কিন্তু আটলেটিকোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলা জার্মান সেন্টার ব্যাক ম্যানুয়েল ফ্রেডরিখ যেমন বলে দিলেন, “আটলেটিকো দে কলকাতা ব্যালান্সড টিম। ওরা সম্ভবত স্প্যানিশ স্টাইলে খেলবে। কঠিন ম্যাচ হবে।” এর পাশাপাশি তিনি মুম্বইয়ের দু’টি বড় সমস্যার কথাও যোগকরলেন।
এক) কৃত্রিম ঘাসের মাঠে বেশির ভাগ বিদেশি ফুটবলার খেলতে অভ্যস্ত নন।
দুই) কলকাতার গরমও অস্বস্তির কারণ।
তবে প্রথম ম্যাচ কৃত্রিম ঘাসের মাঠে খেলতে হবে বলে ফুটবলারদের বিশেষ অনুশীলন করিয়েছেন রিড। এমননিতেই নবিরা এত দিন কুপারেজের কৃত্রিম ঘাসের মাঠেই অনুশীলন করে এসেছেন। তার উপর যাতে পেশির শক্তি বাড়ে এবং কৃত্রিম ঘাসের মাঠে ফুটবলারদের কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণও দিয়েছেন ব্রিটিশ কোচ। এ দিন অবশ্য দেখা গেল রহিম নবি-দীপক মণ্ডলদের নিয়ে সিচুয়েশন অনুশীলন করাতে। তবে ক্লোজড ডোর ঘোষণা করা হলেও পরে তা বাতিল করে দেন মুম্বই কোচ। যদিও নিজের টিম সাংবাদিকদের সামনে দেখাননি তিনি।
হাতের তাস কে-ই বা দেখায়!