আজ এই দৃশ্য দেখতে চায় না নাইটরা
বরাবাটি স্টেডিয়াম, বিকেল পাঁচটা, কেকেআর ঢুকছে...
আর পাঁচটা দিনের মতো মুখটা আজ আর বাংলার পাঁচ নয়, বরং ড্রেসিংরুমে ঢোকার সময় ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি যেন! কটকের বীভৎস গরমে দরদরিয়ে ঘামতে ঘামতেও নেট সেশনে বেশ ফুরফুরে দেখাচ্ছে। ভক্তদের ছবি তোলার আবদার আসছে দেদার, কেকেআর ক্যাপ্টেনের এতটুকুও আপত্তি নেই। ঘন্টা তিনেক পর টিম বাসে উঠে পড়ে মাঠ ছাড়লেন যখন, মুখে হাসিটা তখনও দৃশ্যমান।
গৌতম আর গম্ভীর নন, টিমও টেনশন-বর্জিত। স্থানীয় কয়েক জন শিশুর সঙ্গে ছবি তোলা থেকে উপহার-প্রদানে যে ভাবে মেতে থাকলেন মর্কেল-কালিসরা, মেজাজ দেখে মনে হবে না চব্বিশ ঘণ্টা পর মুম্বই ম্যাচ ঘিরে কোনও দুশ্চিন্তা আছে বলে।
মরাঠিদের বিরুদ্ধে ৩-১০ হারের রেকর্ড নাইটদের পরিবর্তিত সংসারে আপাতত অপ্রাসঙ্গিক। কলঙ্কের ইতিহাস ঢাকা পড়েছে ঘোর বাস্তবে!
হোটেল মেফেয়ার রেসিডেন্সি, রাত আটটা, মুম্বই ঢুকল...
“নারিন নিয়ে আমরা কী ভাবছি? যত দূর মনে পড়ছে আমরা বোধহয় নারিন সমেত ওদের খেলে ১০-৩ এগিয়ে, তাই না?” ফোনে রীতিমতো তির্যক শোনাচ্ছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্যের গলা। শোনা গেল, টিমটা ফুটছে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারিয়ে ওঠার পর টগবগে আত্মবিশ্বাসে ভাসছে। টিমে নাকি এখন প্রচুর পজিটিভ এনার্জি। মুম্বই বলে দিচ্ছে, কেকেআরে সুনীল নারিন আছে তারা জানে। কিন্তু নারিনের অ্যান্টিডোট কী, সেটাও তারা জানে। কারণ আইপিএলে আজ পর্যন্ত কেকেআরের বিরুদ্ধে ১০-৩ জয়ের রেকর্ড নারিনকে বাদ দিয়ে নয়, নারিনকে খেলে।
অর্থাৎ, মরাঠা সংসারে ইতিহাস ভাল রকম প্রাসঙ্গিক। বাস্তবকে উপেক্ষা করে!
কেকেআর লজ্জার রেকর্ড মনে না রাখতে পারে, কিন্তু মুম্বইয়ের শক্তি, আইপিএলের শেষ ল্যাপের প্রেক্ষাপটকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। এ দিন বরাবাটিতে গিয়ে দেখা গেল, লাল-সাদা আভরণ ছেড়ে স্টেডিয়াম ভীষণ ভাবে সোনালি-বেগুনি। ম্যাক্সওয়েল-মিলার-জনসন উধাও। স্টেডিয়ামের দেওয়াল জুড়ে এখন কলকাতা নাইট রাইডার্সের উল্লাসের ছবি। কিংস-রাজত্ব শেষ। বরাবাটিতে এখন গম্ভীর-রাজ। কিন্তু কটকে নাইট অধিনায়কের সাম্রাজ্য-জয় তখনই সমাধা হবে, যখন কিংসের পর মুম্বইকেও ধরাশায়ী করা যাবে। যে কাঁটা আরও কঠিন কাঁটা। কারণ কিংস ইলেভেনের মতো ব্যাটিং-সর্বস্ব নয়, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অনেক ব্যালান্সড টিম। অনেক উঁচু হার্ডল। কেকেআরের কেউ কেউ সেটা মেনেও নিলেন। বলেও দিলেন যে, পঞ্জাবের প্লে-অফ নিশ্চিত ছিল কেকেআরের বিরুদ্ধে নামার আগে। মুম্বইয়ের সেটা নয়। তাই তারা গত রবিবারের পঞ্জাবের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষুধার্ত থাকবে। আর মুম্বইও জানে যে, বুধবার জিতে গেলে প্লে অফে ওঠার সম্ভাবনা যতটা থাকবে কেকেআরের, ততটা থাকবে মুম্বইয়েরও। কেকেআরের সহকারী কোচ বিজয় দাহিয়ার গলাও কিছুটা চিন্তিত শোনাল যখন বললেন, “আইপিএল টেবল এখন খুব ক্লোজ হয়ে গিয়েছে। তবে কোয়ালিফাই করাটা এখন আমাদেরই হাতে। তাই বিপক্ষ টিম কী ভাবছে না ভাবছে, সে সব চিন্তায় না গিয়ে আমরা নিজেদের শক্তির উপর ফোকাস করছি।” আরও যেটা মুশকিলের, কেকেআরের প্রধান শক্তি সুনীল নারিনের পাল্টা আছে মুম্বই টিমে লাসিথ মালিঙ্গা।
যাঁকে নিয়ে নাইটদের স্ট্র্যাটেজি জলবৎ তরলং। মালিঙ্গার চারটে ওভারে কিছুতেই উইকেট দেওয়া চলবে না। ওর চব্বিশটা বলে রান না উঠলেও ঠিক আছে। কিন্তু শুরুতে উইকেট দিলে চলবে না। শুরুতেই গম্ভীর বা রবিন উথাপ্পা (যাঁর এ দিন নেটে পায়ে লাগল, যদিও আশা করা হচ্ছে খেলবেন) শ্রীলঙ্কান পেসারের ফাঁদে পা দিয়ে দিলে নাইটদের মিডল অর্ডার চাপে পড়ে যেতে পারে। কেকেআর মিডল অর্ডার শেষ দুটো ম্যাচে সে ভাবে পরীক্ষার সামনে পড়েনি। বুধবারের প্রেশার কুকার ম্যাচের চাপ হঠাৎ ঘাড়ে পড়ে গেলে তারা কতটা মাথা ঠান্ডা রাখতে পারবে, সেটা নিয়ে সামান্য হলেও সন্দিহান নাইট শিবির। উইকেট দেখেও মালিঙ্গার হাসি চওড়া হওয়া উচিত। বুধবার ম্যাচ হবে নতুন উইকেটে, রবিবারের উইকেটে নয়। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির জেরে যে উইকেট কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে। কিউরেটরের কথায়, বৃষ্টি আর না হলে পিচে ভাল বাউন্স থাকবে। অল্প ঘাসও নাকি থাকবে। পিচে ‘হিট’ করাতে পারেন যে সব বোলার, তাঁদের সুবিধে আছে। মুম্বই বনাম কেকেআর এক্ষেত্রে সমান সমান। ও দিকে মালিঙ্গা-হরভজন। এ দিকে মর্কেল-নারিন।
শুধু ধারাবাহিকতার বিচারে আইপিএল সেভেনে রোহিত শর্মা অনেক পিছিয়ে দিল্লিওয়ালার চেয়ে। ভাগ্যদেবতাও আজকাল গম্ভীরের প্রতি তো একটু বেশিই সদয়!