মেসির প্রতিশোধের মঞ্চ হতে পারে ব্রাজিল, সতর্ক করছেন মারাদোনা

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৯:২৬
Share:

ব্যালন ডি’অর-এর লড়াইয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর কাছে লিয়নেল মেসি হারায় যিনি ‘উচ্ছ্বসিত’, তাঁর নাম দিয়েগো মারাদোনা!

Advertisement

কারণ ফুটবল কিংবদন্তির বিশ্বাস, বর্ষসেরা হতে না পারার অতৃপ্তিটাই ব্রাজিল বিশ্বকাপে যজ্ঞের আগুনে ঘি হয়ে মেসিকে ট্রফি জেতার জন্য মরিয়া করে তুলবে।

মারাদোনার কথায়, “ওরা যখন বর্ষসেরার ট্রফিটা ক্রিশ্চিয়ানোকে দিল, আমি ভীষণ খুশি হই। জানতাম, এই হার লিওকে ব্রাজিলে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে তাতাবে। আর নিজের সঙ্গে পুরো আর্জেন্তিনা দলকেও অনুপ্রাণিত করবে ও।”

Advertisement

তবে শুধু এই পাল্টা দেওয়ার জেদটুকুই নয়, মরাদোনার হিসাব মতো, এর বাইরেও একেবারে নিখাদ ফুটবলোচিত কারণেই এ বারের বিশ্বকাপটা মেসির কেরিয়ারের সেরা সময়ে আসছে। তিনি নিজে যখন আর্জেন্তিনাকে ফুটবলের সর্বোচ্চ ট্রফি দিয়েছিলেন, মারাদোনার বয়স ছিল ছাব্বিশ। বার্সেলোনা মহাতারকাও এই মুহূর্তে জীবনের ছাব্বিশতম বছরে এবং উত্তরসূরি সম্পর্কে পূর্বসূরি বলছেন, “লিওর এখন যা বয়স আর গত চার বছরে অভিজ্ঞতার দিক থেকে ও যতটা এগিয়েছে, তাতে আমার মনে হয় এটাই ওর জীবনের সেরা বিশ্বকাপ হতে চলেছে।”

এমনকী, গত নভেম্বরে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ার পর প্রায় দু’মাস বিশ্রাম নিতে বাধ্য হওয়াও মেসির পক্ষে গিয়েছে বলে মনে করেন মারাদোনা। বিশ্রামটা বিশ্বকাপের আগে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে মেসিকে আরও তরতাজা করে তুলেছে। “চোটের কারণে বাইরে থাকাটা ব্রাজিলে ওকে সাহায্য করবে। আসলে বিশ্বকাপ সে-ই জিতবে, যে ব্রাজিলে সবচেয়ে ভাল মানিয়ে নিতে পারবে। আর লিও এই মানিয়ে নেওয়ার কাজটা ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে,” এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন মারাদোনা।

কাপটা মেসিদের হাতে দেখা শুরু করে ফেলেছেন বোঝালেও মারাদোনা কিন্তু সাফ বলে রাখছেন, যদি আর্জেন্তিনাকে মেসি জেতাতে না-ও পারেন, তাতেও বিশ্বের সেরা ফুটবলার হিসাবে তাঁর গরিমায় এতটুকু কালির ছিটে পড়বে না।

মারাদোনা নামক রূপকথার অন্যতম আকর্ষণ কী ভাবে ১৯৮৬-তে আর্জেন্তিনাকে তিনি প্রায় একার চেষ্টায় বিশ্বসেরা করেছিলেন। তাই বলে মেসিকেও নিজের শ্রেষ্টত্ব প্রমাণে সেই এক রাস্তায় হাঁটতে হবে, এমন জবরদস্তিতে বিশ্বাসী নন খোদ মারাদোনা। চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ যুদ্ধে মেসির কোচ থাকা সর্বকালের অন্যতম সেরা বলেছেন, “ও যে বিশ্বের সেরা ফুটবলার এটা প্রমাণ করার জন্য লিওর বিশ্বকাপ জেতা মোটেই জরুরি নয়। ওর প্রতিভার সঙ্গে বিশ্বকাপ জেতা বা না জেতার কোনও সম্পর্ক নেই। এমন শর্ত যারা চাপাতে চাইছে তাদের বলব, মোটা হওয়ার সঙ্গে ভুঁড়িকে গুলিয়ে ফেলো না! ব্রাজিলের মাটিতে বিশ্বকাপ জিততে পারলে সেটা আর্জেন্তিনার জন্য, আমাদের সমর্থকদের জন্য এবং অবশ্যই লিওর জন্য দৈত্যকায় কীর্তি হবে! কিন্তু লিও বিশ্বকাপ জিততে পারুক বা না পারুক ফুটবল মাঠে ও এত দিন যা করেছে, যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, সেই বিশাল অবদানের মূল্য এতটুকু কমবে না।”

বিশ্বকাপে মেসির কোচ ছিলেন বলেই জানেন, মেসিকে ঘিরে যে ক্লাব বনাম দেশ বিতর্ক রয়েছে, সেটা কতটা ফাঁকা। ২০১০-এ জার্মানির কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে ৪-০ হারটা যে তাঁর মতোই মেসিকেও এখনও কুরে খায়, সেটাও বলেছেন। মারাদোনার কথায়, “জার্মানির কাছে হেরে ছিটকে যাওয়ার পর মাঠে মেসির মাথা নিচু করে কান্নাটা আমি চোখ বুজলেই শুনতে পাই। ওটা আমি কোনও দিনও ভুলব না।” বাকিরা যখন দেশে ফেরার টিকিট নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলেন, তখনও ওই হারের যন্ত্রণা মেসিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল জানিয়ে মারাদোনা যোগ করেছেন, “কাঁদতে কাঁদতে ও যখন আমার কাছে এসেছিল, লিওকে বলেছিলাম, মন খারাপ কোরো না। তুমি আরও অনেক ক’টা বিশ্বকাপ পাবে এর বদলা নেওয়ার জন্য।” সেই মেসি আর্জেন্তিনা জার্সির কদর করেন না বা জাতীয় সঙ্গীতের লাইন জানেন না বলে যাঁরা অভিযোগ করে থাকেন, তাঁদের জন্য মারাদোনা একটা বিশেষণই বরাদ্দ রাখছেন‘‘মূর্খ!’’

আর বাকিদের সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, “লিওর জন্য এই বিশ্বকাপ কঠিন পরীক্ষা। ওর হৃদয়ের গভীরে যত অপমান আর কষ্ট বাসা করে আছে সেই সবের হিসাবনিকাশ করে ফেলার মঞ্চ এটা। ব্রাজিল ২০১৪ কিন্তু লিওনেল মেসির সবথেকে বড় প্রতিশোধের মঞ্চ হতে পারে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন