মারাকানায় মেসি।
আর্জেন্তিনা-২ (কোলাসিনেক-নিজগোল, মেসি)
বসনিয়া-১ (ইবিসেভিচ)
বাড়ি থেকে সাউথ ক্লাবে আসার পথে দেখলাম আর্জেন্তিনার পতাকায় ছেয়ে গিয়েছে কলকাতার রাস্তা। ব্রাজিল পতাকার চেয়ে মনে হল একটু বেশিই। রবিবার রাতের ম্যাচের পর নীল-সাদা জার্সির দাপট কি এই শহরে আরও বেড়ে গেল?
ফুটবলপ্রমীদের ভাবনা যে পথেই চালিত হোক, বসনিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটা দেখার পর কিন্তু আমার মনে হচ্ছে লিওনেল মেসির আর্জেন্তিনা এ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার। ব্রাজিল, জার্মানির মতোই।
আর মেসি? আট বছর পর বিশ্বকাপে ওর করা দুর্দান্ত গোলটা দেখে আমি নিশ্চিত, আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা মেসি এ বার ‘বেস্ট প্লেয়ার অব দ্য প্ল্যানেট’ হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচে নেইমারের বাঁ-পায়ের শটের গোলটা দেখেছিলাম। দারুণ লেগেছিল। মেসির গোলটা আরও সুন্দর। ওকে আটকানোর জন্য তিন জনকে রেখেছিল বসনিয়া কোচ। তবু কি আটকানো গেল? ইগুআইনের কাছ থেকে বল পেয়ে গতি বাড়িয়ে বাঁ পায়ের আউট স্টেপ দিয়ে ড্রিবল করে তিন জনকে বোকা বানিয়ে গোলটা করল মেসি। যেটা মেসি বলেই সম্ভব!
স্কোরিং ক্ষমতার জন্য মেসিকে আমি বরাবর মারাদোনার চেয়ে এগিয়ে রাখি। মেসি খেলা তৈরি করতে পারে। বল কন্ট্রোল খুব ভাল। মুহূর্তে জায়গা বদল করে বিপক্ষককে বোকা বানাতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, ওর মাথাটা খুব ঠান্ডা। যেটা যে কোনও স্ট্রাইকারের সম্পদ। বিপক্ষ ডিফেন্স স্ট্রাইকারকে মারবেই। তবু তার মধ্যেই তাকে গোল করতে হবে। মেসির ডান পা-ও যদি ওর বাঁ পায়ের মতো ‘ছুরি’ হত, তা হলে ওকে আমি কমপ্লিট ফুটবলার হিসেবে মারাদোনার চেয়ে এগিয়ে রাখতাম। ম্যাচের শেষ দিকে মেসির ডান পায়ে বলটা না পড়লে সেটা থেকেও গোল হয়। জালের বাইরে লাগে না।
আর্জেন্তিনা ফ্যানের।
ব্রাজিল বিশ্বকাপ কি তা হলে মেসির বিশ্বকাপ হতে চলেছে? সেটা একটা ম্যাচ দেখেই বলব না। তবে এটুকু বলতে পারি, মেসি কিন্তু এই গোলটার পর চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। আরও ভয়ঙ্কর হবে। নিজে ফরোয়ার্ড ছিলাম বলে জানি, একটা দুর্দান্ত গোল কী ভাবে এক জন ফরোয়ার্ডের মানসিকতা পাল্টে দেয়। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। গোলটা করার পর মেসির উচ্ছ্বাস দেখে মনে হল, ও কিছু প্রমাণ করার জন্যই এই বিশ্বকাপে এসেছে। হয়তো যেটা বিশ্ব জুড়ে চালু আছে, ‘মেসি বার্সেলোনায় সুন্দর, আর্জেন্তিনার জার্সিতে নয়’ সেই অপবাদটা ও মুছে ফেলতে চায়। মেসির সবচেয়ে বড় সুবিধে ওর পাশে আগেরো আর অ্যাঞ্জেল দি’মারিয়ার মতো দু’জন দুর্দান্ত ফুটবলার রয়েছে। দি’মারিয়া খুব উঁচু জাতের ফুটবলার। মেসির মতোই পারফর্মার। স্পিড, বল কন্ট্রোল, ড্রিবলিং দারুণ। আমার মনে হচ্ছে, এ বার যে বত্রিশটা দেশ ব্রাজিলে খেলছে তাদের মধ্যে আর্জেন্তিনার ফরোয়ার্ড লাইন-ই সেরা। ইগুআইন পরে নামল, গোল করাল সে-ও তো দারুণ।
আর্জেন্তিনা কোচ সাবেয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধে ডিফেন্সটা গুছিয়ে নিয়েছে। গ্যারে আর ফার্নান্দেজের সামনে জাবালেতা আর মাসচেরানো দারুণ। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে আর্জেন্তিনা খেললেও মেসিকে ওর কোচ ব্যবহার করল ফ্রি প্লেয়ার হিসেবে।
যুগোস্লাভিয়া ভেঙে সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া হয়েছে। ফলে ফুটবলের মূল ঘরানাটা বেশ মজবুত। যুগোস্লাভিয়াকে এক সময় বলা হত ইউরোপের ব্রাজিল। সেটা দেশটা ভেঙে টুকরো হওয়ার পরেও খেলাটা বদলায়নি। বসনিয়ার দুর্ভাগ্য শুরুতে একটা আত্মঘাতী গোল খেয়ে গেল। আবার আর্জেন্তিনা যে গোলটা খেল সেটা বাঁচানো উচিত ছিল কিপার রোমেরোর। এই পর্যায়ের ফুটবলে পায়ের ফাঁক নিয়ে গোল খাওয়া কিন্তু অপরাধ।
ছবি: উৎপল সরকার।