হাসিদের হাসি মিলিয়ে দিতে প্রার্থনা।
এ বছরের আইপিএলে অনেকেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের উপর আশা ছেড়ে দিয়েছে। ওদের সবচেয়ে ভোগাচ্ছে ব্যাটিং। ওপেনার নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। রোহিত শর্মাও ব্যাটিং অর্ডারে ওঠানামা করছে। ব্যাটিং লিস্টে কোরি অ্যান্ডারসন আর কায়রন পোলার্ডকে আলাদা আলাদা রাখা হয়েছে। তবু কিছুতেই কিছু কাজ হয়নি। যথেষ্ট রান ডিফেন্ড করতে পারছে না বলে মুম্বই বোলারদের দেখে মনে হচ্ছে ওদের কেউ ফাঁসির শাস্তি দিয়েছে।
খড়কুটো আঁকড়ে থাকা বলতে যা বোঝায়, মুম্বইয়ের অবস্থা এখন ঠিক সে রকম। আগের বারের কয়েকটা আইপিএলে মুম্বই সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়েছে ঘরের মাঠের ম্যাচে। এক বার তো ঘরের মাঠে টানা আটটা ম্যাচও জিতেছিল মুম্বই। তা, শনিবার থেকে ঘরের মাঠে ওদের পরপর তিনটে ম্যাচ আছে। যে তিনটে ম্যাচ থেকে ওদের সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট তুলতেই হবে। না হলে ওদের ঘিরে যে অন্ধকারটা তৈরি হয়েছে, সেটা আরও বেড়ে যাবে।
মুম্বই টিমে কিন্তু প্রতিভার অভাব নেই। মাঠেও, মাঠের বাইরেও। ওদের বেঞ্চেই তো একটা আস্ত ক্রিকেট-গ্রহ! সচিন তেন্ডুলকর, রিকি পন্টিং, অনিল কুম্বলে, জন্টি রোড্স, জন রাইট ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় কয়েকটা নাম। তবে ঘটনা হল, কিছু কিছু জিনিস নিজেকেই ম্যানেজ করতে হয়। অন্য কারও পরামর্শ কিছুটা সাহায্য করতে পারে। কিন্তু আসল কাজটা নিজেকেই করতে হবে।
এ বছর তিন ব্যাটিং-রত্নকে ছেড়ে দিল মুম্বই— দীনেশ কার্তিক, ডোয়েন স্মিথ আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এই তিন নামের ভিড়ে সূর্যকুমার যাদবের চলে যাওয়াটা কিন্তু বিশেষ কারও নজরে পড়েনি। তেন্ডুলকরের অবসর নিয়েও বেশি কেউ কথা বলে না। তবে মুম্বই এ বার মাইকেল হাসিকে নিয়েছে, যে কিনা গত বছর আইপিএলের সর্বোচ্চ রান স্কোরার। নিলামের পর বলা হচ্ছিল, কোরি অ্যান্ডারসনকে কেনাও ওদের পক্ষে ভাল একটা সিদ্ধান্ত। তখন মনে হচ্ছিল যারা যারা চলে গিয়েছে, তাদের পরিবর্তে সঠিক সব বদলি ক্রিকেটার নিয়ে এসেছে মুম্বই।
বারাণসীর মন্দিরে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের মালকিন প্রীতি জিন্টা। ছবি: পিটিআই।
হাসির ব্যর্থতা মুম্বইয়ের কাছে খুব বড় একটা ধাক্কা। অ্যান্ডারসন এখনও ছন্দ খুঁজে পায়নি। আর সত্যি বলতে কী, অচেনা পরিবেশে এসেই নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশাটা এক জন তরুণ ক্রিকেটারের কাছ থেকে করাটা উচিত নয়। বেন ডাঙ্কের পরিস্থিতিটাও একইরকম। এখন ওরা লেন্ডল সিমন্স-কে নিয়ে এসেছে, যার কাছ থেকে সবাই অনেক কিছু আশা করছে।
আমি হলে কিন্তু এখনই হাসির উপর আস্থা হারিয়ে ফেলতাম না। ওর মধ্যে উঁচু মানের ক্রিকেট আর নিজের খেলার উপর গর্ব আছে, তাই সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার লোক হাসি নয়। মরচে-পড়া হলেও হাসিই মুম্বইয়ের সেরা বাজি। আমার তো মনে হয়, মুম্বইয়ের যাবতীয় আশা ওর সঙ্গেই ডুববে বা ভেসে উঠবে। হাসি আর মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দুইয়ের ভাগ্য একই সুতোয় গাঁথা।
আগেই বললাম যে, হোম ম্যাচ জিততে পারলে মুম্বই টিমের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। হাসি, রোহিত আর অম্বাতি রায়ডু— এই তিন জনের উপর থাকবে ইনিংস গড়ার দায়িত্ব। এই তিন জন ব্যর্থ হলে পোলার্ড আর অ্যান্ডারসন কিন্তু বিশেষ কিছু করতে পারবে না।
‘দুর্গের’ রেকর্ড ধরে রাখতে মরিয়া রোহিত
সংবাদ সংস্থা • মুম্বই
পাঁচটার মধ্যে পাঁচটা ম্যাচ হেরেও আশা ছাড়ছেন না মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা। ঘরের মাঠে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ম্যাচের আগের দিন তিনি বলেছেন, “কিছু জিনিস আমরা ঠিক করতে পারিনি। কলকাতার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ থেকেই প্রচুর ভুল করে গিয়েছি। তবে এখন আমরা ঘরের মাঠে খেলব। যে মাঠটা আমাদের টিমের কাছে দুর্গের মতো। চেষ্টা করব এখানে জয়ের রেকর্ড ধরে রাখার।”
আইপিএল সেভেন টেবিলের এক নম্বর টিমের বিরুদ্ধে নামার আগে তাঁর সতীর্থদের কাছে রোহিতের আবেদন, “শেষ পাঁচটা ম্যাচে যে ভুলগুলো আমরা করেছি, সেগুলো যেন আর না হয়। আমাদের টিম কম্বিনেশন দারুণ। শুধু নিজেদের প্ল্যানটা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারছি না। পঞ্জাব ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জিততেই হবে।” সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, “শেষ চারে উঠতে গেলে বাকি ন’টার মধ্যে আটটা ম্যাচ জিততেই হবে আমাদের। কাজটা কঠিন, কিন্তু এখনই অত দূরের ব্যাপার নিয়ে ভাবছি না।”