যুবরাজই কিন্তু পরের দিকে জেতাতে পারে, বলছেন ধোনি

আশঙ্কাই এখন আশা-ভরসা! অস্বস্তিই এখন স্বস্তি! বিষয়— ধোনির ভারতের বোলিং আক্রমণ। নীল জার্সির ইদানীং যা ছিল শঙ্কার কারণ, আজ সেটারই প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভারত অধিনায়ক।

Advertisement

চেতন নারুলা

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩৬
Share:

রান নেই। ক্যাচও ফেলছেন। তবু যুবরাজে আস্থা অধিনায়কের। ছবি: রয়টার্স।

আশঙ্কাই এখন আশা-ভরসা! অস্বস্তিই এখন স্বস্তি!

Advertisement

বিষয়— ধোনির ভারতের বোলিং আক্রমণ।

নীল জার্সির ইদানীং যা ছিল শঙ্কার কারণ, আজ সেটারই প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভারত অধিনায়ক।

Advertisement

“আমি সত্যিই খুশি, এখানে যে রকম বোলিং হচ্ছে আমাদের,” কুড়ি ওভারে পাকিস্তানকে ১৩০ রানে বেঁধে রাখার আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তার চেয়েও এক রান কমে আটকে পরপর দু’ম্যাচ সহজে জিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রায় পা দিয়েই ফেলা ভারতীয় দলের কান্ডারি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বলছিলেন।

মিরপুরের মাঠে বিশেষ করে তাঁর স্পিনারদের বোলিংয়ে মোহিত ধোনি। “মিথ্যে বলব না যে, অমিত-অশ্বিন-জাডেজা এখানকার উইকেট থেকে খানিকটা সাহায্য পাচ্ছে। ঠিক কথা। কিন্তু তার পাশাপাশি আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, এই ফর্ম্যাটের ক্রিকেটে প্রতিটা বিপক্ষ দলে একগাদা করে বিগ হিটারও রয়েছে। স্পিনারদের মাঠের বাইরে ফেলে দেওয়ার জন্য। সে কারণে স্পিনারদের সঠিক পরিকল্পনা কষে সেই মতো ঠিকঠাক লেংথ-লাইনে বল করাটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লাইট, লুপ এ সব কতটা বোলিংয়ে মেশাবে তা নিয়ে ঠিকঠাক ভাবাও জরুরি। এবং এখনও পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে আমাদের স্পিনাররা সেগুলো সব ঠিকঠাক মতোই করেছে। কিন্তু এখনও গ্রুপেই আমাদের আরও দু’টো ম্যাচ খেলতে হবে। সে জন্য সবার আগে দরকার ধারাবাহিকতা। ভাল করাটা টানা ভাল ভাবে করে যেতে হবে আমাদের।”

পাকিস্তান ম্যাচে অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে দিয়ে বোলিং ওপেন করেছিলেন ধোনি। রবিবার কিন্তু ভুবনেশ্বর-শামি, স্বাভাবিক পেস বোলিং জুটিই বোলিং আক্রমণ শুরু করেন। বিপক্ষে ক্রিস গেইল নামে এক জন বিধ্বংসী বাঁ-হাতি ওপেনার থাকা সত্ত্বেও। এবং আইপিএলে গেইলকে নতুন বলে অশ্বিনের তিনবার আউট করারও নজির আছে। তবু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে ভুবনেশ্বরের ৩-০-৩-০ অনবদ্য বোলিং স্পেলের অন্তরালে আসল নায়ক ধোনিই। যিনি এ দিনের অপ্রত্যাশিত এই প্রারম্ভিক বোলিং আক্রমণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বললেন, “গেইলের বিরুদ্ধে কুড়ি ওভারের ম্যাচে অশ্বিন-ভুবনেশ্বর, দু’জনেরই সাফল্য আছে। কিন্তু আজ পরিবেশ এমনই ছিল যে, আমরা নতুন বলে অশ্বিনের আগে ভুবিকেই ব্যবহার করাটা বেশি ভাল হবে মনে করেছিলাম। আর ভুবি সত্যিই ভাল করেওছে। যদি গেইল শুরুর দিকে ভুবিকে মেরে দিত, তা হলে পরের দিকে ওকে আটকাতে অশ্বিন থাকত। সেটাই আমাদের গেমপ্ল্যান ছিল।”

গেইলদের মাত্র ১২৯-এ আটকে রাখা। বিরাট-রোহিতের হাফসেঞ্চুরি। সাত উইকেটে জয়—এত স্বস্তির মধ্যেও এক গামলা দুধের মধ্যে এক ফোঁটা চোনার মতো হয়ে থাকছে ভারতীদের ফিল্ডিং। গেইলকেই দু’বার ছাড়েন অশ্বিন আর যুবরাজ। যা নিয়ে ধোনির সাফাই, “এমন নয় যে শুধু ভারতীয় দলই ক্যাচ ফস্কেছে। এটাই ঘটনা যে, এখানকার স্টেডিয়ামে ডিপ আউট ফিল্ডে উঁচু ক্যাচ এলে তা ধরতে ফিল্ডারদের সমস্যা হচ্ছে কারণ, বলের গতিপথ মাঝেমধ্যে ফিল্ডারদের দৃষ্টিপথ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। গ্যালারিতে দর্শকদের নানা রঙের পোশাকের ভিড়ে।”

যুবরাজের ঠুকঠুক ব্যাটিংয়েরও সাফাই রয়েছে তাঁর অধিনায়কের কাছে। ধোনি বললেন, “টি-টোয়েন্টিতে যুবরাজ এক জন পোড়খাওয়া ব্যাটসম্যান। ওর বরং এখানে ক্রিজে একটু বেশি সময় কাটানোই দরকার। একবার ও সেট করে গেলে, দেখবেন তার পর একেবারে অন্য ব্যাটসম্যান হয়ে দেখা দেবে এই বিশ্বকাপেই। যুবরাজ কিন্তু টুর্নামেন্টের পরের দিকে আমাদের ম্যাচ উইনার হয়ে উঠতে পারে।”

অমিত মিশ্র পরপর দু’ম্যাচে সুপারহিট। পাকিস্তান ম্যাচের পর ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধেও ম্যাচের সেরা যদিও নিজের কৃতিত্বের থেকেও টিম জয় পাওয়ায় বেশি খুশি। গেইলদের আটকাতে বিশেষ কোনও পরিকল্পনা করে নেমেছিলেন কি না জানতে চাইলে মিশ্র বললেন, “প্রত্যেক টিমের দুর্বলতা অনুযায়ী পরিকল্পনা তো করতেই হয়। আমি সেই অনুযায়ী বল করার চেষ্টা করেছি। নেটে নিজের বোলিংয়ের বৈচিত্র নিয়ে অনেক খেটেছি। সেটা কাজে আসছে দেখে ভাল লাগছে। তবে আমার কাছে টিমের জেতাটাই সবচেয়ে বড়। এই মুহূর্তে নিজের বোলিং খুব উপভোগ করছি এটুকু বলতে পারি।” ধোনি আবার অমিতের পাশাপাশি রোহিতেরও প্রশংসা করতে চান। “স্পিনারদের ক্ষেত্রে জরুরি হল আত্মবিশ্বাসটা। সেটা যেমন বোলারের নিজের থাকবে, তেমনই তার দলের ক্যাপ্টেনকেও দিতে হবে তাকে। আমি অমিতকে দু’দিনই বলেছিলাম, নিজের শক্তি অনুযায়ী বল করো। তার পর দেখা যাবে। ও ঠিক সেটাই করে সফল হচ্ছে। আর রোহিতের এ ভাবে ব্যাট করে যাওয়াটা জরুরি। এ রকম পিচে রোহিত কত ভাল ব্যাটসম্যান আমরা জানি।”

ধোনির শুধু খচখচানি একটা জায়গাতেই। “বিপক্ষের ইনিংসের আঠারো থেকে কুড়ি ওভারে ঠিকঠাক বল করার মতো বোলার নেই আমাদের এখনও। দেখা যাক এই দায়িত্বটা কাকে দেওয়া যায় পরের ম্যাচে!” সতর্ক মন্তব্য ভারত অধিনায়কের।

• ভারত ম্যাচ-২, জয়-২, হার-০, টাই-০, পয়েন্ট ৪, নেট রান রেট ০.৩৬৩

• পাকিস্তান ম্যাচ-২, জয়-১, হার-১, টাই-০, পয়েন্ট ২, নেট রান রেট ০.০৭৭

• ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ-১, জয়-০, হার-১, টাই-০, পয়েন্ট ০, নেট রান রেট -০.১৬০

• অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ-১, জয়-০, হার-১, টাই-০, পয়েন্ট ০, নেট রান রেট -০.৮০০

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন