ব্যর্থ যুবরাজ ফিরছেন ড্রেসিংরুমে।
টস যার, ম্যাচ তার পঞ্জাব ১০৫ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ইডেনে এখন সাফল্য পাওয়ার প্রধান মন্ত্র এটাই।
যুবরাজ, হরভজনদের দেখার আশায় ইডেনের সামনে যাঁরা ভিড় করে দাঁড়িয়েছিলেন বুধবার রাতে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বলাবলি শুরু করে দিলেন, শুক্রবার এই ইডেনেই যদি পরে ব্যাট করতে নামে বাংলা, তা হলে বেহাল কিছু হয়ে যাবে না তো?
সিএবি-র এক কর্তা খারাপ ব্যাপারটা ভাবতেই চান না, “বালাই ষাট। আমরা টসে জিতে আগেই ব্যাট করব।” সন্ধ্যা নামলে, ফ্লাড লাইটের আলো জ্বলে উঠলেই যে সাদা কোকাবুরা ইডেনের উইকেটে পড়ে ঘা খাওয়া বিষধর সাপের মতো ছটফট করছে, তা শেষ তিনটে ম্যাচেই দেখা গেল। দ্বিতীয় ইনিংসে যেমন বরোদার ব্যাটসম্যানরা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন, মঙ্গলবার তেমনই তামিলনাড়ু ও বুধবার পঞ্জাবের ব্যাটিং লাইন-আপও গুঁড়িয়ে গেল। প্রশ্ন উঠছে, কেন এমন হচ্ছে।
এ দিন রেলওয়েজ প্রথমে ২৪২ তুলে যে ভাবে পঞ্জাবকে ১০৫ রানে শেষ করে দিয়ে বিজয় হাজারে ট্রফির শেষ চারে উঠে পড়ল, তাতে বাকরুদ্ধ হরভজন শিবিরই। ভাজ্জিদের ড্রেসিংরুমে থাকা এক ব্যক্তি জানালেন, “খেলা শেষের পর ড্রেসিংরুমে পিন পড়লেও আওয়াজও শোনা যেত।” হতাশ হরভজন ইডেন ছেড়ে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “দ্বিতীয়ার্ধে বল এত সুইং করবে ভাবতে পারিনি। তবে এটা অজুহাত নয়। আমাদের আরও ভাল ব্যাটিং করা উচিত ছিল।” সাত ওভার বল করে একটিও উইকেট না পাওয়ায় তিনি বোধহয় অন্যদের চেয়ে আরও বেশি হতাশ।
যিনি দু’দিন পর ভারতীয় দলের সঙ্গে বাংলাদেশ উড়ে যাবেন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, সেই যুবরাজ সিংহ এ দিন ৩৪ বলে ১৫ করে ফিরে গেলেন। যদিও রান আউট হলেন, কিন্তু যে ৪৮ মিনিট ক্রিজে ছিলেন, তাতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ হতে পারেননি। বললেন, “যখন নতুন বলে ধাতস্ত হওয়ার চেষ্টা করছিলাম, তখনই আউট হয়ে গেলাম। আমার দুর্ভাগ্য। ক্রিজে অনেকক্ষণ থাকার পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশে যাওয়ার আগে ভাল ম্যাচ প্র্যাকটিস পাব ভেবেছিলাম। তা আর হল না।” এ দিন ম্যাচের পর ডোপ পরীক্ষা হল যুবরাজ, মহেশ রাওয়াতের।
হরভজনের মাথায় হাত। বুধবার ইডেনে।
রেলের পেসার অনুরিত সিংহর যে ইনসুইঙ্গারে পঞ্জাব ব্যাটসম্যান মনদীপ সিংহর স্টাম্প ছিটকে গেল, তা ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রমদের মনে করিয়ে দেওয়ার মতো। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেলের অধিনায়ক মহেশ রাওয়াত যে রানটা করলেন (১০৮ বলে ১০৮), পাল্টা ব্যাট করতে নেমে গোটা পঞ্জাব দলটা মিলেও তা তুলতে পারল না। এর পর প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, সূর্য ডোবার পরই উইকেটের এমন অস্বাভাবিক চরিত্র বদল কেন?
ইডেনের কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “সন্ধ্যায় আর্দ্রতা বাড়ছে। পরিবেশ ভারী হয়ে যাচ্ছে বলেই তো বলের মুভমেন্ট এত বাড়ছে। এটাই তো স্বাভাবিক।” বোর্ডের পূর্বাঞ্চলীয় কিউরেটর আশিস ভৌমিকের বক্তব্য, “দুপুর, বিকেলের তাপমাত্রার সঙ্গে সন্ধ্যার তাপমাত্রার দশ ডিগ্রিরও বেশি তফাৎ হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে কুয়াশা। আর্দ্রতাও বাড়ছে হু হু করে। সে জন্যই বলের সুইং ও মুভমেন্ট এত বেশি।” তবে ইডেনের উইকেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক ব্যক্তি অবশ্য আর এক তথ্য দিলেন। বললেন, “দিনরাতের ম্যাচের জন্য উইকেট যতটা শুকনো হওয়া উচিত ছিল, ইডেনের উইকেট ততটা শুকনো নয় বলেই এই সমস্যা হচ্ছে। পিচের নীচে একটা স্যাঁতস্যাঁতে ভাব থাকছে যেটা দিন-রাতের ম্যাচের পক্ষে এতই বেশি যে সন্ধ্যার পর অসম্ভব আর্দ্র হয়ে যাচ্ছে উইকেট। আর্দ্রতা যদি কম হত, তা হলে বলের মুভমেন্টে এতটা তফাৎ হত বলে মনে হয় না।”
বাংলার অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লও যে ব্যাপারটা লক্ষ্য করেননি, তা নয়। পঞ্জাবের এমন অসহায় আত্মসমর্পণ দেখার পর তিনিও চিন্তায়। শুক্রবার রেলের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে টস যে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে, তা মেনে নিয়েই বললেন, “টস তো কারও হাতে নয়। এই অবস্থাতেও পরে ব্যাট করে যাতে রান তোলা যায়, তার প্রস্তুতি নিয়ে নামতে হবে আমাদের।” রেলের প্রধান স্ট্রাইক বোলার অনুরিত সিংহ বলছিলেন, “পরিবেশের এই হঠাৎ পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন। কিন্তু এখানে এসে সেটা রপ্ত করে ফেলেছি আমরা। শুক্রবারও এই বিদ্যেটা কাজে লাগবে আমাদের।” রেলের কোচ অভয় শর্মা অবশ্য আগে থেকে স্ট্র্যাটেজি বলতে রাজি নন। শুক্রবার টস জিতলে তো ব্যাটিং? জিজ্ঞাসা করায় বললেন, “এখনও তো দু’দিন বাকি। দেখা যাক।”
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রেলওয়েজ ২৪২ (মহেশ রাওয়াত ১০৮, জোনাথন ৫৮, সিদ্ধার্থ কউল ৫-৪৭)
পঞ্জাব ১০৫ (আশিস যাদব ৩-১২, উপাধ্যায় ২-১৪, অনুরিত ২-২৬)।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
সেমিফাইনালে ঝাড়খণ্ড
রাহুল শুক্লর (৫-৬১) পেসের উপর ভর করে সার্ভিসেসকে ২৫ রানে হারিয়ে বিজয় হাজারে সেমিফাইনালে উঠল ঝাড়খণ্ড। সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে প্রথমে ব্যাট করে এ দিন ২১৪ অল আউট হয়ে যায় ঝাড়খণ্ড। রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৮৯ রানে শেষ হয়ে যায় সার্ভিসেস ইনিংস।
বিজয় হাজারে সেমিফাইনালে
ঝাড়খণ্ড : কর্নাটক
বাংলা : রেলওয়েজ
(দুটো ম্যাচই ১৪ মার্চ)