রান আপ বদলেই সাফল্য: শামি

তিন ম্যাচে পঁচিশ ওভারে ন’উইকেট। ব্যাটসম্যান শিকারে সাউদি, টেলর, স্টার্ক, বোল্টরা তাঁর চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকলেও আগ্রাসনে এঁদের সঙ্গে যে গা ঘেঁষাঘেষি করতে পারেন মহম্মদ শামি, তা এ দিন হাড়ে হাড়ে টের পেলেন ক্রিস গেইলরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৪:০৭
Share:

বাউন্স-সুইং পেলে আমি কিন্তু বিপজ্জনক।

তিন ম্যাচে পঁচিশ ওভারে ন’উইকেট।

Advertisement

ব্যাটসম্যান শিকারে সাউদি, টেলর, স্টার্ক, বোল্টরা তাঁর চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকলেও আগ্রাসনে এঁদের সঙ্গে যে গা ঘেঁষাঘেষি করতে পারেন মহম্মদ শামি, তা এ দিন হাড়ে হাড়ে টের পেলেন ক্রিস গেইলরা।

শুক্রবার ওয়াকায় ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট যুদ্ধে শুরু থেকেই যে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন ভারতীয় পেসাররা, বিশেষ করে শামি, তা আগের কোনও ম্যাচে দেখেননি বলেই মন্তব্য বিশেষজ্ঞ ধারাভাষ্যকারদের।

Advertisement

সমানে ১৪০ থেকে ১৪৫ কিমির গতিতে বল করছিলেন। সঙ্গে নিখুঁত লাইন-লেংথ। যেন বোলিং-সন্ত্রাস। ম্যাচ শেষের পর ভারতীয় দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পেসার বলেন, “আমি যদি বাউন্স ও সুইং একসঙ্গে পাই, তা হলে এ রকমই হবে, ব্যাটসম্যানরা বিপদে পড়বেই। আজ ওয়াকায় দুটোই একসঙ্গে পেয়েছি।”

টিভি ক্যামেরার সামনে কিংবদন্তি সুনীল গাওস্কর ও তিনি পাশাপাশি। সঙ্গে সঞ্জয় মঞ্জরেকরও। গাওস্কর বলছিলেন, “অসাধারণ বোলিং করেছে ভারতীয় পেসাররা। বিশেষ করে শামি। এ রকম উইকেটে ঠিক যে রকম লেংথে বল করা উচিত, ও সেটাই করল।” কিংবদন্তির মুখে নিজের প্রশংসা শুনে রীতিমতো উত্তেজিত দু’দিন পরই পঁচিশ পূর্ণ করতে চলা তরুণ। এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজে কিন্তু অন্য শামিকে দেখা গিয়েছিল। সেখানে তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তাও শুরু হয়েছিল। সেই শামি আর এই শামির মধ্যে কী তফাত! এই পরিবর্তনের রহস্য কী? সঞ্জয় মঞ্জরেকরের প্রশ্নের উত্তরে রহস্যটা ফাঁস করলেন শামি, “রান আপে কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। আগে যে রকম বড় স্টেপে রান আপ নিতাম, মাহি ভাইয়ের পরামর্শে সেটা এখন কিছুটা ছোট স্টেপে নিচ্ছি। ফলে অনেক ছন্দে বল করতে পারছি। ব্যস এটুকুই। বড় কিছু বদল আনতে চাইও না।”

এর পর শোয়েব আখতারের প্রসঙ্গ টেনে গাওস্করও বলেন, “হ্যাঁ, এই ব্যাপারটা টেস্ট সিরিজের সময় শোয়েবও আমাকে বলেছিল। ও বলেছিল যে, শামি যদি একটু ছোট স্টেপে রান-আপ নেয়, তা হলে ও আরও ভাল বল করতে পারবে। এখন দেখছি, সত্যিই তা হচ্ছে।”

শুক্রবারের ম্যাচে শুরু থেকেই বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে শামি পরে বিসিসিআই-এর ওয়েবসাইটে বলেন, “স্মিথ ও গেইল দু’জনেই স্ট্রোক প্লেয়ার। ওরা শুরু থেকেই চালিয়ে খেলে। সে জন্যই শুরু থেকে ওদের চাপে রাখার পরিকল্পনা ছিল। আর চাপটা ধরে রাখাও সমান জরুরি ছিল। যেটা পেরেছি।”

একে ওয়াকার বাইশ গজে বাউন্স। তার উপর প্রথম ওভারেই বুঝে যান সুইং করানোর পরিবেশও রয়েছে। “যখন বুঝতে পারি যে, সুইংও করানো যাবে, তখনই আত্মবিশ্বাসটা চলে আসে যে, আজ ভাল কিছু করা যাবে। আর যখন বলে সুইং হচ্ছিল না, তখন ক্রস সিম ডেলিভারি করছিলাম”, বলছিলেন শামি। পারথে যে এমনটা করা যাবে, তা ত্রিদেশীয় সিরিজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচেই আন্দাজ করেছিলেন বলে জানান ধোনির দলের এক নম্বর পেসার। বলেন, “এখানকার উইকেট আমার স্টাইলের বোলিংয়ে সাহায্য করে। ইনিংসের শুরুতে ও ডেথ বোলিং, দুই ক্ষেত্রেই ভাল বল করা যায়। সেই সময় থেকেই এই ম্যাচের বোলিংয়ের পরিকল্পনা শুরু করে দিই। পরিকল্পনা অনুযায়ী যে বল করতে পেরেছি, এটাই ভাল। সত্যি বলতে, এই ধরনের উইকেটে বল করে খুব আনন্দ পাই।”

এর পর বল করতে হবে নিউজিল্যান্ডে। যেখানে পরিবেশ অন্য রকম। সেখানকার পরিকল্পনা নিয়ে মঞ্জরেকরের প্রশ্নের উত্তরে শামি বললেন, “বেসিকটা তো একই থাকবে। আশা করি ওখানকার উইকেটে বাউন্স ও সুইং দুইই পাব। বাকি ফোকসাটা থাকবে লাইন ও লেংথে। এগুলো ঠিকঠাক থাকলে ওখানেও ভাল বল করব। যেমন এ দিন করলাম।” নিজের চোট নিয়ে শামির বক্তব্য, “গুরুতর চোট কিছু ছিল না। আসলে টানা খেলার জন্য ক্লান্তিটা সমস্যা হয়ে উঠেছিল। কয়েক দিন বিশ্রাম নিয়ে সেটা কাটিয়ে উঠি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের আগে তাজা হয়ে ওঠাটা খুব জরুরি ছিল। আর জানেনই তো, আত্মবিশ্বাস সব সময়ই আমার সঙ্গে থাকে।”

বোঝাই গেল, এই পারফরম্যান্সই তাঁর মধ্যে বিশ্বযুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় বারুদটুকু ভরে দিয়েছে।

স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

স্মিথ ক ধোনি বো শামি ৬

গেইল ক মোহিত বো শামি ২১

স্যামুয়েলস রান আউট ২

কার্টার ক শামি বো অশ্বিন ২১

রামদিন বো উমেশ ০

সিমন্স ক উমেশ বো মোহিত ৯

স্যামি ক ধোনি বো শামি ২৬

রাসেল ক কোহলি বো জাডেজা ৮

হোল্ডার ক কোহলি বো জাডেজা ৫৭

টেলর ক ও বো উমেশ ১১

রোচ ন.আ. ০।

অতিরিক্ত ২১।

মোট ৪৪.২ ওভারে ১৮২।

পতন: ৮, ১৫, ৩৫, ৩৫, ৬৭, ৭১, ৮৫, ১২৪, ১৭৫, ১৮২।

বোলিং: শামি ৮-২-৩৫-৩, উমেশ ১০-১-৪২-২, অশ্বিন ৯-০-৩৮-১,

মোহিত ৯-২-৩৫-১, জাডেজা ৮.২-০-২৭-২।

ভারত

রোহিত ক রামদিন বো টেলর ৭

ধবন ক স্যামি বো টেলর ৯

বিরাট ক স্যামুয়েলস বো রাসেল ৩৩

রাহানে ক রামদিন বো রোচ ১৪

রায়না ক রামদিন বো স্মিথ ২২

ধোনি ন.আ. ৪৫

জাডেজা ক স্যামুয়েলস বো রাসেল ১৩

অশ্বিন ন.আ. ১৬

অতিরিক্ত ২৬।

মোট ৩৯.১ ওভারে ১৮৫-৬।

পতন: ১১, ২০, ৬৩, ৭৮, ১০৭, ১৩৪।

বোলিং: টেলর ৮-০-৩৩-২, হোল্ডার ৭-০-২৯-০, রোচ ৮-১-৪৪-১,

রাসেল ৮-০-৪৩-২, স্মিথ ৫-০-২২-১, স্যামুয়েলস ৩.১-০-১০-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন