লক্ষ্মী-ঋদ্ধির ১৪৪ ধারায় রক্ষা

ঘরের মাঠে মুখ থুবড়ে পড়ার আর এক নির্লজ্জ নিদর্শন দেখতে চলেছে বাংলা! দিনের প্রথম সেশনেই ৬৮-৪ হয়ে যাওয়ার পর যখন ফের এ রকমই আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল ইডেনে, তখনই বাংলার ডুবন্ত জাহাজকে ভাসিয়ে তুলল ঋদ্ধি-লক্ষ্মী জুটির ১৪৪-এর পার্টনারশিপ। তাঁদের লড়াইয়েই দিনের শেষে বাংলা ৩১২-৭। এক জন সদ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে টেস্ট খেলে ফিরেছেন। অন্য জন ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘অ্যাসিড টেস্ট’ দিতে দিতে বিধ্বস্ত। এই দু’জনের লড়াইয়ে আপাতত বাঁচল বাংলার সম্মান। আরও এক বার। দুই তারকার জারি করা এই ১৪৪ ধারাতেই টিম কাশ্মীরের হাত থেকে আপাতত রক্ষা পেল বাংলা।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪১
Share:

জুটিতে লুটি। মঙ্গলবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

ঘরের মাঠে মুখ থুবড়ে পড়ার আর এক নির্লজ্জ নিদর্শন দেখতে চলেছে বাংলা! দিনের প্রথম সেশনেই ৬৮-৪ হয়ে যাওয়ার পর যখন ফের এ রকমই আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল ইডেনে, তখনই বাংলার ডুবন্ত জাহাজকে ভাসিয়ে তুলল ঋদ্ধি-লক্ষ্মী জুটির ১৪৪-এর পার্টনারশিপ। তাঁদের লড়াইয়েই দিনের শেষে বাংলা ৩১২-৭।

Advertisement

এক জন সদ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে টেস্ট খেলে ফিরেছেন। অন্য জন ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘অ্যাসিড টেস্ট’ দিতে দিতে বিধ্বস্ত। এই দু’জনের লড়াইয়ে আপাতত বাঁচল বাংলার সম্মান। আরও এক বার। দুই তারকার জারি করা এই ১৪৪ ধারাতেই টিম কাশ্মীরের হাত থেকে আপাতত রক্ষা পেল বাংলা। রসুলরা বুঝে নিলেন, জবাব ব্যাটে দিতে হবে।

ঘূর্ণি উইকেট চাই বলে গত কয়েক দিন ধরে যে ভাবে বায়না জুড়েছিলেন দিন্দা-মনোজরা, তার পর তাঁদের ইডেনে একটা ঘাসহীন উইকেট দেওয়া হয়েছে বটে, তবে তা টার্নার কি না, মঙ্গলবার প্রথম দিনের খেলায় তা বুঝে উঠতে পারলেন না কেউ। বাংলার এগারোয় অবশ্য তিন স্পিনার। সৌরাশিস লাহিড়ীর সঙ্গে প্রথম রঞ্জি খেলতে নামা অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইরেশ সাক্সেনা।

Advertisement

কিন্তু প্রথম দিনের খেলার পরও কেউ বলতে পারছেন না উইকেটে স্পিন ধরছে কি না। দিনের শেষে দেড় ডজন বাউন্ডারি ও একটা ওভার বাউন্ডারি মেরে ১২৯-এ অপরাজিত ঋদ্ধিমান বলছিলেন, “স্লো-লো-ব্যাটিং উইকেট এটা।” দ্বিতীয় দিনেও ভাঙবে কি না, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারলেন না বাংলার কোচ অশোক মলহোত্রও। এ ছেলে ভোলানো ঘূর্ণি উইকেট নয় তো? মঙ্গলবার বিকেলে মনে এই প্রশ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরলেন লক্ষ্মীরা।

সকালে দুই ওপেনার মিলে ৪৯ রান তোলার পর পরভেজ রসুলের পরপর দু’বলে অরিন্দম দাস (৩০) ও সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (০) যথাক্রমে লেগ বিফোর ও বোল্ড হয়ে ফিরে যান। মনোজ তিওয়ারির দিকেই ওই সময় তাকিয়ে ছিলেন সবাই। কিন্তু বিশ্বকাপের সম্ভাব্য দলে থাকা মনোজ (৯) যে অফ স্টাম্পের বেশ খানিকটা বাইরের বলের নাগাল পেতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যাবেন, তা আর কে ভেবেছিল?

চার ওভার আগেই পেসার রাম দয়ালের বলে নিজের স্টাম্প সামলাতে না পেরে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা মারেন গত ম্যাচের অন্যতম নায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরন (২১)। আপাতত ঋদ্ধির সঙ্গে ক্রিজে লড়ে যাচ্ছেন অশোক দিন্দা। নিজেকে চাঙ্গা রাখতেই যেন তিনি শেষ বেলায় একটি ছয়ও হাঁকান।

তিন পয়েন্ট সুরক্ষিত? মনে করেন না ঋদ্ধিমান। বলছেন, “এ যা উইকেট, তাতে আরও রান দরকার। তার পর ওদেরও আটকাতে হবে।” তাই তিন পয়েন্টের ইঙ্গিত পেতেই বুধবার নামবে বাংলা। পরেরটুকু পরে ভাবা যাবে। শোনা গেল, বাংলা শিবিরে নাকি তেমনই পরিকল্পনা।


সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ৩১২-৭ (ঋদ্ধিমান ১২৯ নঃআঃ, লক্ষ্মী ৭২, রসুল ২-৫৭, রামদয়াল ২-৮৮)।

‘ধোনি বলল এ বার তৈরি হ’
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

টেস্ট থেকে অবসর ঘোষণার রেশ তখনও কাটেনি। ঋদ্ধিমান সাহার জন্য অপেক্ষা করেছিল আরও একটা বিস্ময়। সিরিজের শেষ টেস্টের আগে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এসে তাঁকে বললেন, “এ বার তৈরি হ।” শুধু সিডনি টেস্টে গ্লাভস বদলের ইঙ্গিত? না বাংলার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের ক্রিকেট জীবনে যে বড় লড়াই আসতে চলেছে, তার? বোধহয় ঠিক বুঝতে পারেননি ঋদ্ধি। তবে এর পর থেকে তাঁকে যে ভারতীয় দলে ধোনির জায়গা নেওয়ার প্রস্তুতিই নিতে হবে, সেই সংকল্প নিয়েই ফেলেছেন। এ দিন তিনি বললেন, “সিডনি টেস্টের আগে এক দিন এমএস বলল, ‘এ বার তৈরি হ’। ও অবশ্য আগেও আমাকে অনেক টিপস দিয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়েই ওর জায়গা নেওয়ার লড়াই শুরু করব। জানি না, টেস্টে পাকাপাকি ভাবে ধোনির জায়গা নিতে পারব কি না। এই জায়গাটা পাওয়ার জন্য অনেকেই লড়ছে। আমাকে আরও খাটতে হবে।” ধোনির অবসর ঘোষণা নিয়ে ঋদ্ধি বললেন, “প্রেস কনফারেন্স সেরে ড্রেসিংরুমে সবাইকে ডেকে এমএস যা বলল, তা শুনে সবাই চুপ। আমরা কেউ ভাবতেই পারিনি, এমন একটা ঘোষণা শুনব। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর ক্যাপ্টেনই বলল, ‘চলো, যে যার ব্যাগ গুছিয়ে নাও’। তার পর আমরা সবাই হোটেলে ফিরে গেলাম। পুরো সন্ধ্যাটা কেমন ঘোরের মধ্যে কাটল!” অ্যাডিলেডে জয়ের নায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েও ঋদ্ধি তা কাজে লাগাতে পারেননি। বাংলা কিপারের বক্তব্য, “সে দিন রানটা করে ফেললে হয়তো নায়ক হয়ে যেতাম। কিন্তু স্পিনের সঙ্গে বাউন্সও পাচ্ছিল লিয়ঁ। সেটা সামলাতে পারিনি। তবে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলেছি। এটাই এ বারের সফরের বাড়তি প্রাপ্তি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন