ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যাবতীয় ক্রিকেট সম্পর্ক ছিন্ন করতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড? উত্তরটা হয়তো পাওয়া যাবে মঙ্গলবার। তবে শনিবার বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল যা বললেন, তাতে এ রকমই ইঙ্গিত স্পষ্ট। এমনকী ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের আইপিএল-ভবিষ্যত্ও ঘোর অন্ধকারে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে এই বেনজির বিদ্রোহের প্রভাব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, এমনকী বিশ্বকাপেও পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না ওয়াকিবহাল মহল। আগামী মঙ্গলবারই ছবিটা অনেক পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে বলে শনিবার জানালেন বোর্ডসচিব সঞ্জয় পটেল। এ দিন সন্ধ্যায় তিনি বলেন, “মঙ্গলবার জরুরি ওয়ার্কিং কমিটির সভায় পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
কিন্তু সেটা কী হতে পারে?
বোর্ড সচিব বলে দিলেন, “সিরিজটা না হওয়ায় আমাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর ক্ষতিপূরণ তো চাইতেই হবে। তা ছাড়া ওদের সঙ্গে আমরা আর ক্রিকেট সম্পর্ক রাখব কি না, সেই ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
২০১৬-য় ভারতের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রসঙ্গ তুলতে পটেল সাফ জানিয়ে দেন, “সেটা হওয়ার সম্ভাবনা বোধহয় কম। আইসিসি-র কাছে তেমনই বার্তা পাঠাব বলে ভাবছি।” পটেল নিজে বলতে না চাইলেও বোর্ডের অপর এক সূত্র মারফত্ জানা গেল মঙ্গলবার হায়দরাবাদের সভায় দাবি উঠতে পারে, ক্ষতিপূরণ না দিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে অন্তত পাঁচ বছরের জন্য ক্রিকেট সম্পর্ক ছিন্ন করা হোক।
অন্য দিকে, মঙ্গলবার জরুরি সভা ডেকেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডও। বার্বেডোজের এই সভায় ঠিক হবে বিদ্রোহী ক্রিকেটারদের ভবিষ্যত্। ভারতীয় বোর্ড আইপিএল থেকে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের ব্যান করতে পারে কি না, এই নিয়ে বিসিসিআই-এর অন্দরমহলেই প্রশ্ন উঠলেও ও দেশের বোর্ড যে ব্র্যাভোদের সব রকমের ক্রিকেট থেকে নির্বাসন দিয়ে আইপিএলে খেলার রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে, এই নিয়ে সন্দেহ নেই ওয়াকিবহাল মহলের। এক বোর্ড কর্তা তো এ দিন বলেই দিলেন, “ব্র্যাভোদের আইপিএলে খেলা আমাদের বন্ধ করতে হবে না। ওদের দেশের বোর্ডই তা করে দেবে।” কারণ আইপিএলে খেলতে হলে বিদেশি ক্রিকেটারদের নিজের দেশের বোর্ডের অনুমতি নিয়ে আসতে হয়। যে ভাবে বাংলাদেশ বোর্ড সাকিব আল হাসানের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কেকেআরের হয়ে খেলা বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই মডেলই অনুসরণ করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডও। সেক্ষেত্রে অবশ্য সুনীল নারিন, ক্রিস গেইলদের উপর কোপ পড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ তাঁরা এই বিদ্রোহী টিমে ছিলেন না।
সময়ের অনেক ফারাকের জন্য মঙ্গলবার ভারতীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত জেনে নেওয়ার পরই সভা শুরু করতে পারবেন ক্যারিবিয়ান কর্তারা। সঞ্জয় পটেলদের সিদ্ধান্তের উপর যে ক্যারিবিয়ান বোর্ডের সিদ্ধান্তও অনেকাংশে নির্ভর করবে, তা বলাই বাহুল্য। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে এই পরিস্থিতির জন্য যে শুধু ভারতীয় বোর্ডেরই ক্ষতি হল, তা নয়। তাদের আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড সফর, এমনকী বিশ্বকাপেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল পাঠাতে পারবে কি না, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শনিবার বিকেলে ধর্মশালা থেকে চার্টার্ড বিমানে দিল্লির পথে রওনা হয়ে যাওয়ার পর ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের দেখভালের কোনও দায়িত্ব নেয়নি বোর্ড। দিল্লিতে ব্র্যাভোরা কোন হোটেলে রয়েছেন, সেটা পর্যন্ত জানা ছিল না দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের। অবশেষে রাতে জানা যায়, তাঁরা দিল্লি বিমানবন্দরের কাছে একটি পাঁচতারা হোটেলে রয়েছেন নিজেদের খরচে। এবং দেশে ফেরার ব্যবস্থাও করছেন নিজেরাই। বিমানবন্দরে ক্যারিবিয়ান টিমকে বিদায় জানাতে আসা হিমাচল ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তা বললেন, “ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের দেখে মনেই হচ্ছিল, ওঁরা বেশ ভেঙে পড়েছেন। নিজেদের ক্রিকেট ভবিষ্যত্ প্রায় শেষ হতে বসেছে, তা বুঝতে পেরেই বোধহয় এই অবস্থা। রওনা হওয়ার সময় কারও মুখে কথা নেই!”
ব্র্যাভোদের পাশে নেই তাঁদের দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ক্লাইভ লয়েডও। শনিবার দিল্লিতে এক ক্রিকেট সম্মেলনে তিনি বলেন, “দলের কয়েকজন সফর বন্ধ করতে চেয়েছিল। এটা ওদের ভুল। সে জন্য সবার কাছে ক্ষমা চাইছি। তবে এ জন্য দু’দেশের বোর্ডের দূরত্ব বাড়তে দেওয়া উচিত নয়।” কমেন্ট্রি করতে আসা মাইকেল হোল্ডিং অবশ্য তাঁর দেশের ক্রিকেটারদেরই পাশে। শনিবার ধর্মশালায় তিনি বলেন, “আমাদের বোর্ডে সঠিক প্রশাসন নেই বলে এই অবস্থা। ক্রিকেটারদের জন্যই ক্রিকেট। তাদের মতামতকে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু তা হচ্ছে কই?” ভারতীয় বোর্ডেরও ধারণা, ক্যারিবিয়ান বোর্ডই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এই ধরণা নিয়েই তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চান বলে সাফ জানিয়ে দিলেন বোর্ড সচিব। বললেন, “এর দায় ওদের বোর্ডকেই নিতে হবে। আমরা ক্রিকেটারদের চিনি না। বোর্ডকে চিনি।”