স্পেনের সঙ্গে বিদায় নিল তিকিতাকাও

বব হাউটনের জমানায় ভারতীয় দলের সঙ্গে যখন যুক্ত ছিলাম, বব রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে দুটো কথা প্রায়ই চিৎকার করে ছেলেদের বলত। এক) ফাইনাল থার্ডে ফাউল করবে না। দুই) ফ্রিকিকের সময় সেকেন্ড বল মানে ফিরতি বলটা ফলো করো।বিশ্বকাপে নিজেদের ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে ঠিক সেই বেসিক ভুলটাই করতে দেখলাম গত বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। আর তাতেই এ বারের বিশ্বকাপ থেকে ছুটি হয়ে গেল ভিসেন্তে দেল বস্কির স্পেনের। আরও একটা ব্যাপার বলব। মনে হচ্ছে, স্পেনের সঙ্গে ফুটবলবিশ্ব থেকে তিকিতাকাও এ বার বিদায় নিল। গত এক বছরে ব্রাজিলের মাঠে শেষ তিন ম্যাচে দশ গোল খেল তিকিতাকা।

Advertisement

প্রদীপ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০৪:০৮
Share:

বিদায় বিশ্বকাপ। খেলা শেষে হতাশ অধিনায়ক। ছবি: এএফপি।

চিলি-২ (ভারগাস, আরাংগুইজ)
স্পেন-০

Advertisement

বব হাউটনের জমানায় ভারতীয় দলের সঙ্গে যখন যুক্ত ছিলাম, বব রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে দুটো কথা প্রায়ই চিৎকার করে ছেলেদের বলত।

এক) ফাইনাল থার্ডে ফাউল করবে না।

Advertisement

দুই) ফ্রিকিকের সময় সেকেন্ড বল মানে ফিরতি বলটা ফলো করো।

বিশ্বকাপে নিজেদের ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে ঠিক সেই বেসিক ভুলটাই করতে দেখলাম গত বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। আর তাতেই এ বারের বিশ্বকাপ থেকে ছুটি হয়ে গেল ভিসেন্তে দেল বস্কির স্পেনের। আরও একটা ব্যাপার বলব। মনে হচ্ছে, স্পেনের সঙ্গে ফুটবলবিশ্ব থেকে তিকিতাকাও এ বার বিদায় নিল। গত এক বছরে ব্রাজিলের মাঠে শেষ তিন ম্যাচে দশ গোল খেল তিকিতাকা। বিশ্বের প্রথম সারির টিমের কোচরা তো বটেই, চিলির মতো মাঝারি টিমের কোচও তিকিতাকার অ্যান্টিডোট বের করে ফেলেছেন।

চ্যাম্পিয়ন টিমের পরের বিশ্বকাপে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। ২০০২-এ ফ্রান্স, আর গত বার দক্ষিণ আফ্রিকায় ইতালি গ্রুপ থেকেই ছিটকে গিয়েছিল। কিন্তু দু’ ম্যাচ পরেই বিশ্বকাপ শেষ! এর আগে কবে এই ঘটনা ঘটেছে তা মনে পড়ছে না। ভারতীয় দলের প্রস্তুতি শিবিরে হাউটনের সঙ্গে স্পেনে গিয়ে দেখেছি, ফুটবল আর নাদাল—এই দু’টো কোহিনুর বুকে অদৃশ্য মাদুলি বানিয়ে ঘোরে জাভি-ইনিয়েস্তাদের দেশের মানুষ। সেটা জানি বলেই ফুটবল পাগল বার্সেলোনা-মাদ্রিদের সেই মুখগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। আগামী একমাস বিশ্বকাপে ওদের দেখতে হবে অন্য দেশের ফুটবল বিক্রম। যা সত্যিই হতাশার।

ম্যাচটা শুরু হওয়ার আগেই জানতাম স্পেন যতই তিকিতাকা-খ্যাত হোক, চিলি কিন্তু ঝামেলায় ফেলবেই। কারণ, লাতিন আমেরিকান ঘরানার স্কিলফুল ফুটবল অ্যালেক্সিস সাঞ্চেজ, ভিদালদের সহজাত। আর ইউরোপে খেলার সুবাদে গতি আর শক্তিটাও ওদের রয়েছে। আর চিলিয়ানদের আক্রমণের পাওয়ার হাউজ অ্যালেক্সিস সাঞ্চেজ বেশ সুযোগসন্ধানী। ওকে আটকানোও খুব একটা সহজ নয়। ম্যাচেও ঠিক সেটাই দেখলাম। প্রথম গোলটার সময় জাভি আলোন্সোর ভুলে ভিদালের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলতে খেলতে স্পেন বক্সে ঢুকে ভারগাসের জন্য মিলিয়ন ডলারের পাসটা বাড়াল। যা থেকে ভারগাস গোল করতে ভুল করেনি। আর দ্বিতীয় গোলের ফ্রিকিকটা তো চিলির ওই সাত নম্বর সাঞ্চেজেরই। যার ফিরতি বল থেকে আরাংগুইজের ২-০ এ গিয়ে দেওয়া। দ্বিতীয় গোলটা যখন হচ্ছে তখন আরাংগুইজের ধারে কাছেই ছিল নয় নয় করে স্পেনের ছ’জন ফুটবলার। কেউ সামান্য তাড়া করার চেষ্টাটাই করল না। এর পরে বিশ্বকাপে স্প্যানিশদের টিকে থাকার আশা করাটাই অন্যায়।

অনেকে বলবেন, ডাচদের বিরুদ্ধে পাঁচ গোল খাওয়া স্পেনের পাঁজরে এমন ধাক্কা দিয়েছে যে, ওরা সেটা থেকে বেরোতে বেরোতেই বিশ্বকাপটা শেষ হয়ে গেল। মানি না। তুমি যখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, এক ম্যাচে পাঁচ গোল খেয়ে কুঁকড়ে যাবে কেন? চুয়ান্নর বিশ্বকাপে পুসকাসের হাঙ্গেরির কাছে জার্মানরা হেরেছিল ৩-৮। কিন্তু ওরাই শেষমেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। সে রকমই ভেবেছিলাম, শুক্রবারের হার অঘটন প্রমাণ করবে স্পেন। কিন্তু সেটা দেখাই গেল না। দ্বিতীয়ার্ধে তো চিলির আক্রমণের সামনে কাঁপতে দেখলাম র্যামোসদের রক্ষণকে।

অথচ স্পেন শুরুটা কিন্তু ৪-৩-৩ ছকে নিজেদের ছন্দেই করেছিল। কিন্তু আর্জেন্তিনার প্রাক্তন কোচ মার্সেলো বিয়েলসার ছাত্র দশ মিনিট পর থেকেই হাই প্রেসিং গেম দিয়ে পেড়ে ফেললেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। চিলি কোচ শুরু করেন ৩-৫-২। চিলির দুই সাইড ব্যাক ইসলা আর মেনা পালা করে ওভারল্যাপে যাওয়ায় স্পেন ডিফেন্সিভ থার্ডে সব সময় একজন বাড়তি চিলিয়ান থাকছিল। এটাই ওদের বাড়তি সুবিধা দিল। সঙ্গে স্পেনের তিকিতাকার উৎসস্থল মিডল করিডরটাও লোক বাড়িয়ে ঘেঁটে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন