সংবর্ধনা বুঝিয়ে দিল টিম কলকাতার সমর্থক দল তৈরি

মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে সংবর্ধনা নিয়ে ফেরার পর মহম্মদ রফিকের গলায় উচ্ছ্বাস। “পুরোটাই মনে হচ্ছে স্বপ্নের মতো। জীবনে তো কখনও এত বড় সংবর্ধনা পাইনি!” আটলেটিকো দে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করার গোল যাঁর পা থেকে সোদপুরের সেই বঙ্গসন্তান মঞ্চে আনন্দে একবার নেচেও ফেললেন উষা উত্থুপের গানের সঙ্গে। যেমন নেচেছিলেন ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে গোলের পর। জাঁকজমক, আড়ম্বর, আলো, গান, দেব-প্রসেনজিত-পরমব্রতর মতো টলিউড তারকার উপস্থিতি, জনা কুড়ি প্রাক্তন তারকা ফুটবলারের চেয়ার আলো করে বসে থাকা, অপ্রত্যাশিতভাবে হাজির ময়দানের ধর্নামঞ্চ এড়িয়ে যাওয়া ভাইচুং ভুটিয়াও! একেবারে উপযুক্ত সংবর্ধনার পরিবেশ।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০১
Share:

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টিম আটলেটিকো।

মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে সংবর্ধনা নিয়ে ফেরার পর মহম্মদ রফিকের গলায় উচ্ছ্বাস। “পুরোটাই মনে হচ্ছে স্বপ্নের মতো। জীবনে তো কখনও এত বড় সংবর্ধনা পাইনি!”

Advertisement

আটলেটিকো দে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করার গোল যাঁর পা থেকে সোদপুরের সেই বঙ্গসন্তান মঞ্চে আনন্দে একবার নেচেও ফেললেন উষা উত্থুপের গানের সঙ্গে। যেমন নেচেছিলেন ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে গোলের পর।

জাঁকজমক, আড়ম্বর, আলো, গান, দেব-প্রসেনজিত-পরমব্রতর মতো টলিউড তারকার উপস্থিতি, জনা কুড়ি প্রাক্তন তারকা ফুটবলারের চেয়ার আলো করে বসে থাকা, অপ্রত্যাশিতভাবে হাজির ময়দানের ধর্নামঞ্চ এড়িয়ে যাওয়া ভাইচুং ভুটিয়াও! একেবারে উপযুক্ত সংবর্ধনার পরিবেশ।

Advertisement

কিন্তু যাঁদের নিয়ে উত্‌সব তাঁরাই তো প্রায় নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া রাজ্য সরকারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। ছাব্বিশ ফুটবলার ছিলেন প্রথমবারের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন টিমে।

মঞ্চের পিছনের বিশাল পর্দায় দেখানো হচ্ছিল ফিকরু তেফেরার সমারসল্ট, হাবাস-গার্সিয়াদের উচ্ছ্বাস, কেভিন লোবোর জোড়া গোল। কিন্তু সেই ছবির নায়কদের অর্ধেকেরও বেশি যে সশরীরে ছিলেন না সুসজ্জিত মঞ্চে। কোচ হাবাস-সহ দশ বিদেশি ফুটবলার চলে গিয়েছেন দেশে, ক্রিসমাসের ছুটি কাটাতে। কিন্তু ষোলো জন ভারতীয় ফুটবলারের মধ্যেও তো উপস্থিত মাত্র ন’জন!

ফলে হাজার পাঁচেক দর্শক ময়দানে নিয়মিত দেখা রফিক-অর্ণবদেরই নতুন মোড়কে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। ট্রফি নিয়ে সঞ্জু প্রধান-শুভাশিস রায়চৌধুরী-হোসে ব্যারেটোরা যখন রংবেরঙের কাগজের টুকরোর বৃষ্টির মধ্যে ট্রফি নিয়ে ঢুকছেন, তখন পুরো নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে। যা থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার-- ময়দানের তিন প্রধানের বাইরেও আরও একটা সমর্থককুল তৈরি হয়ে গিয়েছে আটলেটিকো দে কলকাতার জন্য।

বাম-ডান দু’আমলেই এ ধরনের যে সব অনুষ্ঠান হয়েছে তার সবই সংগঠন করত ক্রীড়া দফতর। প্রধান উদ্যোক্তা থাকতেন ক্রীড়ামন্ত্রী। এ বারই সম্ভবত তার ব্যতিক্রম হল। সারদা-কাণ্ডে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র হাজতে। সে জন্য অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। বক্তৃতায় ক্রীড়ামন্ত্রী বা তাঁর দফতর সম্পর্কে একটি শব্দও বলেননি মমতা। তবে মদনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তৈরি ধর্নামঞ্চে যে সব খেলোয়াড় নিয়মিত উপস্থিত হতেন, সেই গৌতম-সমরেশ-শ্যাম-প্রশান্ত-বিদেশদের হাত দিয়ে কলকাতা টিমের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

শোনা গেল, সাতের দশকের ফুটবলারদের একাংশের আপত্তি সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ডেকে নিয়েছিলেন ভাইচুংকে। প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের সঙ্গে ধর্নামঞ্চ সংগঠন করা প্রাক্তন ফুটবলারদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে গত কয়েকদিন ধরে। পরিস্থিতি আন্দাজ করে গৌতম-সমরেশ-শ্যাম-দীপেন্দুরা যে দিকে বসেছিলেন তার উল্টোদিকে এক কোণের চেয়ারে গিয়ে বসেছিলেন ভাইচুং। মমতা আসতেই তাঁর কাছে পৌঁছে যান ভাইচুং। টেনিসের আখতার আলি ছাড়া অন্য খেলার কাউকে দেখা যায়নি অনুষ্ঠানে। যেমন দেখা যায়নি বাংলার খেলাধুলোর যে কোনও বড় অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হয়ে থাকা চুনী গোস্বামী বা পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ছিলেন না কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী থাকার সময় মমতার সুপারিশে ‘দ্রোণাচার্য’ পুরস্কার পাওয়া নইমুদ্দিন বা অর্জুন হওয়া সুব্রত ভট্টাচার্যও। যা ফুটবল-উত্‌সবে চোনা ফেলেছে। যেমন দৃষ্টিকটু লেগেছে রাজ্য ফুটবল সংস্থা (যাদের ছাড়পত্র না পেলে আটলেটিকো খেলতেই পারত না) বা বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোয়িশনের কর্তাদের অনুপস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। গ্রাম থেকে প্রতিভা তুলতে হবে।”

জয়নগরের মোয়া, তুলাইপঞ্জি চাল, দার্জিলিং চা-এর সঙ্গে স্যুটের কাপড়, শাল এবং দু’টো স্মারক দেওয়া হয় কলকাতার সব ফুটবলার ও টিমের সদস্যদের। পুরো টিমের জন্য মমতা নিজে একটি ট্রফিও দেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ধারাভাষ্য দিতে অস্ট্রেলিয়ায়। কলকাতা টিমের বাকি তিন মালিকের হাতেও তুলে দেওয়া হয় খেলোয়াড়দের মতোই পুরস্কার!

ক্রীড়ামন্ত্রী অনুষ্ঠান সংগঠিত করলে কিছু চমক হয়তো রাখতেন। তাঁর অনুপস্থিতিতেও অবশ্য চমক ছিল। ক্রিসমাসের কথা মাথায় রেখে বিশাল ট্রফির আকারে কেক তৈরি করা হয়েছিল। সেই কেক কেটে মঞ্চে সবাইকে নিজে হাতে খাওয়ান মুখ্যমন্ত্রী। যা দেখে হয়তো তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বাড়ি ফিরলেন ববি হাকিম-অরূপ বিশ্বাসরা। এই দুই মন্ত্রীর যে সংবর্ধনা-মঞ্চে দেখানোর ছিল, মদনের ক্রীড়া দফতরের দায়িত্ব পেলে তাঁরা ভালই সামলাবেন!

ছবি: উত্‌পল সরকার

স্টেডিয়ামের জমি দিতে চান মমতা

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

আটলেটিকো দে কলকাতার নিজস্ব স্টেডিয়াম তৈরির জন্য রাজারহাটে জমি দিতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন অযত্নে পড়ে থাকা রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামও লিজে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে দিতে রাজি মুখ্যমন্ত্রী। যা একবার আইএফএ-কে দেওয়ার পরও কেড়ে নিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের জন্য যুবভারতী সংস্কারের কাজও দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হল। বুধবার আইএসএল জয়ী আটলেটিকো দে কলকাতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে এসেছিলেন ফেজারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল। বক্তৃতা দিতে উঠে তিনি বলেন, “কলকাতা ফুটবলের শহর। আইএসএলের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় ফুটবলের যে নবজাগরণ হবে আমি চাই সেটা শুরু হোক কলকাতা থেকে। মমতাজি আপনি রবীন্দ্র সরোবরটা আমাদের লিজ দিন। যুবভারতী সংস্কার করুন। কথা দিচ্ছি এখানে যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল করব।” মঞ্চে বসেই মুখ্যমন্ত্রী অন্য মাইক ধরে বলেন, ‘ঠিক আছে রাজি। রবীন্দ্রসরোবর দিয়ে দেব।” পরে নবান্নে ফেডারেশন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকও করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর নিজের বক্তব্য রাখতে উঠে রাজারাহাটে আরও একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম গড়ার জন্য আটলেটিকো দে কলকাতাকে জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চে তখন উপস্থিত টিমের তিন মালিক সঞ্জীব গোয়েন্‌কা, হর্ষ নেওটিয়া এবং উত্‌সব পারেখ। মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সঞ্জীব গোয়েন্‌কা দাঁড়িয়ে উঠে বলেন, ‘আমরা রাজি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন