মাস দেড়েক আগেই বাংলা ক্রিকেটের প্রশাসনে এসেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সিএবি যুগ্মসচিব।
শনিবার কলকাতার আর এক মহাতারকা ক্রীড়াবিদের ভারতীয় টেনিস প্রশাসনে আসার প্রথম ধাপ রচিত হল! বেঙ্গালুরুতে এআইটিএ-র বার্ষিক সভায় আজ যে ক’টি সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, কার্যকরী কমিটিতে দু’জন টেনিস প্লেয়ারকে রাখার।
প্রশাসনে আসার যোগ্যতামান, সংশ্লিষ্ট প্লেয়ারের দেশের হয়ে ডেভিস কাপ/ফেড কাপ, এশিয়ান গেমস এবং অলিম্পিকে খেলা চাই। যোগ্যতামান অনুযায়ী লিয়েন্ডার পেজ প্লেয়ার্স কোটায় এআইটিএ কার্যকরী কমিটিতে আসার প্রধান দাবিদার। যেহেতু দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ডেভিস কাপ ম্যাচ, অলিম্পিক এবং এশিয়াড খেলার রেকর্ড তাঁরই রয়েছে।
তবে এখনই এআইটিএ-তে লিয়েন্ডারের ঢোকায় একটা বাধা রয়েছে। এ দিন ফেডারেশনের এক প্রভাবশালী কর্তা ব্যাখ্যা দিলেন, শুধু কার্যকরী কমিটিতে দু’জন প্লেয়ারকে এনে বসিয়ে রাখা হবে না। তাঁদের নির্বাচন কমিটিতেও রাখা হবে। সেটাই হবে দুই প্লেয়ারের বিশাল আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে এআইটিএ তথা ভারতীয় টেনিসের প্রাপ্তি। জাতীয় দলের নির্বাচক হিসাবে ওই দু’জন অভিজ্ঞ চোখে সেরা টিম গড়বেন। কিন্তু সেই প্লেয়ার যদি নিজেই জাতীয় দলে ঢোকার দাবিদার হন, সোজা কথায় এখনও আন্তর্জাতিক টেনিস থেকে অবসর না নেন, তা হলে তাঁকে কী ভাবে জাতীয় নির্বাচন কমিটিতে রাখা হবে? তাঁকে এআইটিএ কার্যকরী কমিটিতে রাখতেও তখন অতটা উৎসাহী হবে না ফেডারেশন।
লিয়েন্ডার পেজের টেনিস প্রশাসনে আসার পথে আপাতত এটুকুই যা সমস্যা।
লিয়েন্ডার ঘনিষ্ঠ মহলে বলে রেখেছেন, ২০১৬ রিও অলিম্পিক খেলে অবসর নেবেন। তা হলে কি তার পরে ভারতীয় টেনিস প্রশাসনে আসবেন? না কি আপাতত তাঁকে শুধু কার্যকরী কমিটিতে রেখে রিও-র পর নির্বাচন কমিটিতে আনা হবে? এআইটিএ-র প্রভাবশালী কর্তাটি শুধু বললেন, “দেখা যাক। পরের মিটিংয়ে সব চূড়ান্ত হবে।” তবে লিয়েন্ডার যে অদূর ভবিষ্যতেই দেশের টেনিস প্রশাসনে ঢুকছেন, সেটা প্রায় নিশ্চিত।
সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্লেয়ারটি কে? মহেশ ভূপতির নাম সবচেয়ে বেশি উড়ছে এআইটিএ মহলে। কার্যত অবসর নিয়ে ফেলা (বছর শেষেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন বলে খবর) মহেশের সঙ্গে ইদানীং অনিল খন্না প্রশাসনের সম্পর্ক খুব ভাল। সৌজন্যে মহেশের আইপিটিএল। যে প্রিমিয়ার টেনিস লিগের মাধ্যমে এআইটিএ-র কোষাগার ভরারও সমূহ সম্ভাবনা। সানিয়া মির্জারও যোগ্যতামান রয়েছে। কিন্তু আগামী বেশ কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর অবসরের প্রশ্ন নেই।
এ ছাড়া উইম্বলডনের সঙ্গে গাঁটছড়ায় এআইটিএ-র যে ‘রোড টু উইম্বলডন’ ট্রেনিং স্কিম চালু আছে, ২০১৫-এ তার কোচিং পর্ব কলকাতায় হবে। এ সবের মধ্যেই এআইটিএ-র অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্তি চিদম্বরমকে টেকনিক্যাল কারণে পদ থেকে সরিয়ে দিল ফেডারেশন। যদিও আসল কারণ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম-পুত্র এআইটিএ-তে অনিল খন্না-প্রশাসনের তীব্র সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন। এমনকী ফেডারেশনের বিরুদ্ধে সোমদেব দেববর্মনদের ‘বিদ্রোহে’-ও অন্যতম মন্ত্রণাদাতা ছিলেন বলে খন্না গোষ্ঠীর অভিযোগ। এআইটিএ-র সরকারি বিবৃতি হল, কার্তি টেনপিন বোলিং ফেডারেশনেরও (টিবিএফ) প্রেসিডেন্ট। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী, একইসঙ্গে দু’টো ভিন্ন ক্রীড়া প্রশাসনে পদ আঁকড়ে থাকতে পারবেন না কোনও কর্তা। তাই কার্তিকে এআইটিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানো হল।
যার বিরুদ্ধে কোর্টে যাচ্ছেন বলে আজই জানিয়ে রাখলেন তামিলনাড়ু টেনিস কর্তা কার্তি। তাঁর দাবি, ক্রীড়া মন্ত্রকের এই গাইডলাইন শুধু বিভিন্ন খেলার ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষেত্রেই। কিন্তু তিনি টিবিএফের প্রেসিডেন্ট হলেও এআইটিএ-র ভাইস প্রেসিডেন্ট। ফলে ক্রীড়া মন্ত্রকের নির্দেশের দোহাই দিয়ে এআইটিএ তাঁকে ছেঁটে ফেলতে পারে না।
প্লেয়ারদের কার্যকরী কমিটিতে আনার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিনই কিন্তু টেনিস ফেডারেশন চটিয়ে রাখল বেশির ভাগ প্লেয়ারের পছন্দের অন্যতম শীর্ষকর্তাকে!