ডুডুকে সই করাল কলকাতা

হারের হ্যাটট্রিক সত্ত্বেও কর্তাদের আস্থা হাবাসে

দৃশ্য এক: প্রথম ছয় ম্যাচের চারটে হারায় দিন দুই আগেই চাকরি গিয়েছে কেরল ব্লাস্টার্স কোচ পিটার টেলরের। দৃশ্য দুই: ছয় ম্যাচের তিনটিতে টানা হার। তা সত্ত্বেও আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের উপরই আস্থা রাখছে আটলেটিকো দে কলকাতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৩
Share:

দৃশ্য এক: প্রথম ছয় ম্যাচের চারটে হারায় দিন দুই আগেই চাকরি গিয়েছে কেরল ব্লাস্টার্স কোচ পিটার টেলরের।

Advertisement

দৃশ্য দুই: ছয় ম্যাচের তিনটিতে টানা হার। তা সত্ত্বেও আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের উপরই আস্থা রাখছে আটলেটিকো দে কলকাতা।

একই আইএসএলে দুই ভিন্ন ছবি গতবারের চ্যাম্পিয়ন আর রার্নাস ফ্র্যাঞ্চাইজি শিবিরে!

Advertisement

উল্টে আটলেটিকো কলকাতার কর্তারা মনে করছেন, লিগের বাকি আট ম্যাচে প্রয়োজনীয় পয়েন্ট তুলে নিয়ে টিমকে সেমিফাইনালে পৌঁছে দেবেন তাঁদের স্প্যানিশ কোচ। এটিকের এক প্রভাবশালী কর্তা এ দিন সন্ধ্যায় বললেন, ‘‘হাবাস প্রথম ম্যাচের পর আর কোনও ম্যাচে তো পুরো টিমই পাননি। প্রথম দলের অন্তত তিন-চার জন ফুটবলারকে সব ম্যাচেই পাওয়া যায়নি। চোট-আঘাত কিংবা কার্ড সমস্যায়। কোচকে দোষ দিয়ে লাভ কী!’’

যদিও হারের হ্যাটট্রিকের পর প্রথম অনুশীলনে এ দিন বিকেলে ডাকাবুকো হাবাস অবশ্য ছিলেন রীতিমতো মনমরা। তার মধ্যেই অর্ণব বোরহা, হিউমদের তিনি বারবার শুধু বলেছেন, ‘‘আগের সব হারের কথা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো। পরের সব ম্যাচ নক আউট ভেবে খেলো।’’

রবিবারই আটলেটিকোর পরের ম্যাচ দুরন্ত ফর্মে থাকা সুনীল ছেত্রী, সনি নর্ডিদের মুম্বই সিটি এসি-র বিরুদ্ধে। দু’দিন আগেই নিকোলাস আনেলকার টিম পাঁচ গোল মেরেছে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডকে। গোলের মধ্যে রয়েছেন সুনীল। সনি অসাধারণ সব সেট পিস তৈরি করছেন। যা থেকে প্রায় নিয়মিত গোল পাচ্ছে মুম্বই। সনি নিজেও গোল পাচ্ছেন।

এ রকম এক টগবগে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নড়বড়ে কলকাতা কতটা লড়তে পারবে তা নিয়ে হাবাসের টিমের কর্তাদের মনে অবশ্য যথেষ্ট সংশয়। মার্কি ফুটবলার পস্টিগা তো এ দেশেই নেই। জোসেমি, আরাতা, লারা, ভালদো, নাদং ভুটিয়া-ও চোটের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা আগে যুবভারতীর ম্যাচে খেলেননি। এঁদের মধ্যে ভালদো শনিবার সকালের বিমানে মুম্বইগামী উড়ানে দলের সঙ্গে উঠছেন। কিন্তু ভালদোর প্রত্যাবর্তনের ফেরার দিনই আবার বলজিৎ সিংহ সাইনি চলে গেলেন মাঠের বাইরে। এ দিন অনুশীলন করেননি তিনি। টিমের সঙ্গে মুম্বই যাচ্ছেন না। ফলে খাতায়-কলমে হাবাসের টিমের শক্তি অন্তত বাড়ল না।

এ সবের মধ্যেই শুক্রবার ছিল ইয়ান হিউমের জন্মদিন। তিনি সপরিবার রাজারহাটের টিম হোটেলে আছেন। তাঁর জন্মদিনে কেক কাটা হলেও দলের পরপর হারের ধাক্কায় তেমন কোনও উৎসব হয়নি। তবে টিমকে চাঙ্গা করে তুলতে এ দিন অনুশীলনের মাঝেই সব ফুটবলারকে জড়ো করে হিউমের জন্মদিনের জন্য তাঁকে টিমের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান এটিকে-র কড়া হেডমাস্টার।

মুম্বইতে শনিবার সন্ধ্যায় ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে অনুশীলন করবেন নাতো, রিনো অ্যান্টোরা। তবে পুণে ম্যাচের আগে যেমন সাংবাদিকদের এড়িয়ে গিয়েছিলেন হাবাস, মুম্বইতেও সেই খুব সম্ভবত ধারা বজায় রাখছেন। আটলেটিকো শিবির সূত্রের খবর, মুম্বইয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে স্পোর্টস ডিরেক্টর আলবার্তো মোরেরো এবং সহকারী কোচ বাস্তব রায় উপস্থিত থাকবেন। হাবাস নাকি কর্তাদের বলেছেন, ‘‘যে ভাবে আমার টিমের সমালোচনা হচ্ছে, তাতে আমার এখন না কথা বলাই ভাল।’’

আরও জানা যাচ্ছে, হারের হ্যাটট্রিকের জন্য হাবাস মূলত দায়ী করছেন তাঁর টিমের লাগাতার চোট-আঘাতকে। কর্তাদের একান্তে তিনি সে কথা জানিয়েছেনও। তবে ঘরের মাঠে দিল্লির কাছে শেষ মুহূর্তের গোলে হারের পর বোরহা, অর্ণবদের মধ্যে যে ‘গৃহযুদ্ধ’ শুরু হয়েছিল, তা এ দিন অন্তত প্রকাশ্যে মিটে গিয়েছে। অনুশীলনের সময় দেখা গিয়েছে, দু’পক্ষই হাত মেলানোর পর নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলেছেন। ‘গৃহযুদ্ধ’ থামলেও হাবাস তাঁর দলের দায়বদ্ধতা নিয়ে চিন্তিত। টিমের অনেকেরই ধারণা, হিউম যতটা ওয়ার্কলোড নিতে পারেন, ততটা নিচ্ছেন না।

কলকাতা টিমের অন্ধকারে চলে যাওয়ার মধ্যেও একটা আশার আলোর সন্ধান এসেছে হাবাসের জন্য। চোট পেয়ে সারা মরসুমের জন্য মাঠের বাইরে চলে যাওয়া জোসেমির পরিবর্ত নেওয়ার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে আইএসএল কমিটি। আর সেই সঙ্কেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য মোহনবাগান-বাতিল ডুডু ওমাগবেমিকে সই করিয়ে নিল আটলেটিকো কলকাতা। মুম্বই ম্যাচ খেলে টিম শহরে ফিরলেই অনুশীলনে যোগ দেবেন ডুডু। ৭ নভেম্বর নর্থ-ইস্টের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে খেলবেনও। চট্টগ্রাম থেকে ইস্টবেঙ্গল টিমের সঙ্গে কলকাতা ফিরলে গত বারের ফাইনালে এটিকে-র একমাত্র গোলদাতা মহম্মদ রফিককেও সই করানো হবে বলে আটলেটিকো সূত্রের খবর।

অবশ্য ডুডু, রফিকদের সংযোজনেও কলকাতার ভাগ্য ফিরবে কি না এখনই বলা মুশকিল। কারণ পরপর হারের ধাক্কায় পুরো টিমের মনোবলই এখন তলানিতে। একমাত্র মুম্বই-জয়ই উঠে দাঁড় করাতে পারে হাবাসের টিমকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন