Coronavirus

এক দিনে আক্রান্ত ১০, করোনায় বঙ্গে মৃত আরও ২

রবি-সোমবার আক্রান্ত আট জনের মধ্যে দুই মহিলার মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ১০:১৬
Share:

বালুরঘাটে জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন দমকলকর্মীরা। ছবি: পিটিআই।

রাজ্যে সোমবার পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুতে এক ও একাধিক দিনের ব্যবধান ছিল। মঙ্গলবার এক দিনেই বঙ্গে দু’জনের প্রাণ কাড়ল করোনা। নীলরতন সরকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক প্রৌঢ় এবং হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অন্য এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে। এ দিন আক্রান্ত হয়েছেন ন’জন। এই নিয়ে রাজ্যে ভয়াল ভাইরাসের থাবায় প্রাণ হারালেন পাঁচ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩২। মৃত ও সংক্রমিতের এই পরিসংখ্যানে স্বাস্থ্য দফতর উদ্বিগ্ন।

Advertisement

এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক জায়গা থেকে অন্যত্র ঘুরে বেড়ানোটা ফ্যাক্টর হয়ে যাচ্ছে। কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা।’’

ডায়াবিটিসে ভোগা এক প্রৌঢ় সোমবার এনআরএসে ভর্তি হন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে ওই শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এক প্রৌঢ়ও মারা যান। তাঁর রাজস্থান-যোগের প্রমাণ মিলেছে। দুই প্রৌঢ়েরই মৃত্যু হয় করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগে।

Advertisement

এ দিন বেলঘরিয়ার ৫৭ বছরের এক প্রৌঢ়ের দেহে করোনা ধরা পড়ে। কিডনির অসুখে ভোগা ওই ব্যক্তি চেন্নাইয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরেন ১৬ মার্চ। আক্রান্তের শ্যালক কিছু দিন আগে মুম্বই থেকে ফিরেছেন। ২৬ মার্চ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রৌঢ়কে ভর্তি করানো হয় রথতলার একটি নার্সিংহোমে। ডায়ালিসিস চলছিল। এসএসকেএম হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ে। রথতলায় তাঁর চাউমিন-এগরোলের দোকান আছে। অসুস্থতার জন্য তিনি দোকানে যেতেন না। সেটি চালাতেন স্ত্রী।

সেনা হাসপাতালের আক্রান্ত চিকিৎসকের সংস্পর্শে তাঁর স্ত্রী-ছেলেমেয়েও আক্রান্ত। ইটালি-ফেরত এক মহিলার করোনা ধরা পড়েছে। নাগেরবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আছেন তিনি। আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি একটি মেয়ের করোনা ধরা পড়ায় তাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দু’জনের করোনা ধরা পড়েছে শেওড়াফুলি ওয়ালশ হাসপাতালে। নাগেরবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইটালি-ফেরত এক প্রৌঢ়ার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। টালিগঞ্জের ওই মহিলার স্বামীও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এগরা-কাণ্ডে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধের ভায়রার ভগিনীপতির করোনা ধরা পড়ায় তাঁকেও আইডি-তে আনা হচ্ছে।

রবি-সোমবার আক্রান্ত আট জনের মধ্যে দুই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের ৪৪ বছরের মহিলার পরে সোমবার হাওড়ার এক শিক্ষিকা (৪৮) মারা যান। সেই মৃত্যু হাওড়া জেলা হাসপাতালের ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ওই মহিলার ছেলে জানান, ডুয়ার্স থেকে ফেরার পরে ২৬ মার্চ তাঁর মায়ের জ্বর ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। নিয়ে যাওয়া হয় সত্যবালা আইডি, টিএল জয়সওয়াল হাসপাতালে। ওই দুই হাসপাতালে ভেন্টিলেশন না-থাকায় রবিবার তাঁকে ভর্তি করানো হয় জেলা হাসপাতালে। সেখানে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁকে বসিয়ে রাখা হয় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে। পরে আইসিইউ ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের সঙ্গে একই ঘরে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়।

মুম্বইয়ে সোনার কাজে যুক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের এক যুবকের করোনা ধরা পড়েছে। সল্টলেকের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৫১ বছরের এক ব্যক্তির সালকিয়ায় ব্যবসা রয়েছে। করোনা-আক্রান্ত ওই ব্যক্তির ছেলে, গাড়িচালক, সর্বক্ষণের পরিচারককে কোয়রান্টিন বা নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে। স্ত্রী-মেয়ে রয়েছেন গৃহ-পর্যবেক্ষণে। টালিগঞ্জের বাসিন্দা, অন্য এক আক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। কাজের সূত্রেই কলকাতা চষে বেড়াতেন তিনি।

কলকাতার তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ছ’জন করোনা-আক্রান্ত চিকিৎসাধীন। পঞ্চসায়রের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নয়াবাদের বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তা সিঞ্চন ভট্টাচার্য জানান, ভেন্টিলেশনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রোগীকে রাখা হয়েছে। শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রাও বেশি।

নাইসেড সূত্রের খবর, উপসর্গ না-থাকলেও এখন আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা লোকদেরও নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এ দিন একটি বুলেটিনে জানিয়েছে, নতুন করে ১,০৩,৩৯১ জনকে গৃহ-পর্যবেক্ষণে পাঠানো হয়েছে। এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭ জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন