Coronavirus in West Bengal

আক্রান্ত এবং মৃত্যুর রেকর্ডের মধ্যে রাজ্যে দ্বিতীয় বার করোনা সংক্রমণে উদ্বেগ

কোভিড হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার মাসকয়েক পরে উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২০ ০২:৩১
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

সংক্রমণ এবং মৃত্যুর রেকর্ডের মধ্যে বুধবার স্বাস্থ্য দফতরের কাছে উদ্বেগের বার্তা বয়ে আনল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার এবং নার্সিং স্টাফের দ্বিতীয় বার সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘এখনই কিছু বলার মতো সময় আসেনি। কেন এমন হচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণা হবে।’’

Advertisement

এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২৮১৬ জন। তার চেয়েও উদ্বেগজনক তথ্য, এক দিনে মৃতের সংখ্যা ৫৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬১। এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে এর আগে কলকাতাকে পিছনে ফেলে দু’বার শীর্ষ স্থান দখল করেছে উত্তর ২৪ পরগনা। এ দিন আক্রান্তের নিরিখেও ২৩টি জেলার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা শুধু শীর্ষেই উঠে এল না, ব্যবধানও অনেকটাই বেশি। ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় যেখানে ৬৬৫ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে, উত্তর ২৪ পরগনার ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০৯ জন। মৃত্যুর ক্ষেত্রে অবশ্য শীর্ষে কলকাতা (২৫)। পরবর্তী দু’টি জেলা উত্তর ২৪ পরগনা (১৩) এবং হাওড়া (৯)। আক্রান্তের মাপকাঠিতে অন্য উল্লেখযোগ্য জেলা— হাওড়া (২৯৩), হুগলি (১৪৬), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১৩১) পূর্ব মেদিনীপুর (১১২), মালদহ (১৪৪), দক্ষিণ দিনাজপুর (১০২), পূর্ব বর্ধমান (৯০)।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

Advertisement

এ ছাড়া, দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। দফতর সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ির ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। জলপাইগুড়ি শহরের এক বাসিন্দা জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি সংক্রমণের শিকার হন। কিন্তু কোভিড হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার মাসকয়েক পরে উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। এ দিকে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ১৬ জুন ভর্তি হন হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার। তাঁর স্ত্রীও আক্রান্ত হয়েছিলেন। দিন দশেক পরে কোনও উপসর্গ না থাকায় দু’জনকে ছুটি দেওয়া হয়। সাত দিন আইসোলেশনে থাকার পরে ফের পরীক্ষায় ৭ জুলাই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কাজে যোগও দেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার। গত সপ্তাহে রাতে ডিউটি করার সময় শারীরিক অস্বস্তি শুরু হয় ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের। পেটের সমস্যা দেখা দেয় তাঁর স্ত্রীরও। ফের পরীক্ষায়, ২৫ দিনের ব্যবধানে রবিবার স্বামীর রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। স্ত্রীর দেহে ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি। কোভিড হাসপাতালের এক নার্সিং স্টাফও দ্বিতীয় বার সংক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে খবর।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘এত তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় বার সংক্রমণ হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দ্বিতীয় বার সংক্রমণ হচ্ছে কি না তা জানতে সম্প্রতি চিনে বাঁদরের উপরে গবেষণা করা হয়েছিল। তাতে ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার নজির মিলেছে। তবে মানুষের ক্ষেত্রেও সেই সম্ভাবনা কতটা, তা নিশ্চিত করে এখনই বলা সম্ভব নয়।’’ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের আজ র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, টেস্টে আইজিএম পজ়িটিভ হলে বুঝতে হবে দেহে নতুন করে ভাইরাস হানা দিয়েছে। আর নেগেটিভ হলে দেহে ভাইরাসের উপস্থিতির সম্ভাবনা জোরালো হবে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আর এক অ্যাসিস্টান্ট সুপার আক্রান্ত হয়েছেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন