Jiaganj

পাঁচ মিনিটে তিনজনকে কি একাই খুন করেছিল উৎপল? এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ

পুলিশ নিশ্চিত, বিরল ধরনের এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে খুব বেশি হলে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে। বিজয়া দশমীর দিন, অর্থাত্ গত ৮ অক্টোবর দুপুরে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানে, নিজেদের বাড়িতে খুন হন প্রাথমিক শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি এবং পাঁচ বছরের ছেলে অঙ্গন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:২৩
Share:

পুলিশের জালে উৎপল বেহরা। নিজস্ব ছবি

পাঁচ মিনিটে তিনজন খুন! তা-ও আবার রোগা পাতলা চেহারার এক যুবকের হাতে? কী ভাবে ওই তিন জনকে খুন করল বছর কুড়ির যুবক উৎপল বেহরা? সত্যিই কি একা হাতে খুন করেছে? নাকি আরও কেউ তার সঙ্গে ছিল? জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের কিনারার পরেও, এখনও এই প্রশ্নগুলো ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

Advertisement

পুলিশ নিশ্চিত, বিরল ধরনের এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে খুব বেশি হলে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে। বিজয়া দশমীর দিন, অর্থাত্ গত ৮ অক্টোবর দুপুরে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানে, নিজেদের বাড়িতে খুন হন প্রাথমিক শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি এবং পাঁচ বছরের ছেলে অঙ্গন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে— দুপুর ১২টা ৬ পর্যন্ত বিউটি একটি ভিডিয়ো কলে ছিলেন। আর তার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে দুধ বিক্রেতা এসে ওই বাড়িতে কলিং বেল বাজান। কেউ এসে দরজা না খোলায়, তিনি বিউটিকে ফোন করেন। কিন্তু ফোন বেজে যায়।

এই ফোন কলটির সময় দুপুর ১২টা বেজে ১১ মিনিট। এর পরেই জানলা দিয়ে বাইরের ঘরে কারও একটা দেহ পড়ে আছে দেখে, আশপাশের লোকজনকে খবর দেন দুধবিক্রেতা। সামনে আসে এ রাজ্যে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সবচেয়ে সাড়া ফেলা হত্যাকাণ্ডটি। নানা কারণে, রাজনৈতিক রং-ও লাগে এই খুনের ঘটনায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: জিয়াগঞ্জ কাণ্ডের কিনারা, ২৪ হাজার টাকার জন্য খুন, আততায়ী গ্রেফতার সাগরদিঘি থেকে

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পুলিশ নানান সম্ভাবনার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদেরও কেউ কেউ সন্দেহের তালিকায় ছিলেন। এর মধ্যেই বন্ধুপ্রকাশের বাড়িতে পাওয়া একটি রক্তমাখা বিমার কাগজের সূত্রে পুলিশ ডেকে পাঠায় সাগরদিঘির বাসিন্দা উত্পলকে। দফায় দফায় জেরা করা হয়। শেষ পর্যন্ত সেই উত্পলকেই খুনের দায়ে গ্রেফতার করা হল।

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, উত্পল এই খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। ২৪ হাজার টাকা নিয়ে গোলমালের জেরেই এই খুন।

পেশায় দিনমজুর উত্পল পুলিশকে জানিয়েছে, বন্ধুপ্রকাশের মাধ্যমে সে একটা বিমা করিয়েছিল। বাত্সরিক প্রিমিয়াম ২৪ হাজার টাকার একটু বেশি। প্রথম বারের কিস্তির টাকার রসিদ দিলেও, দ্বিতীয় বার দেওয়া টাকার কোনও রসিদ দিচ্ছিল না বন্ধুপ্রকাশ। এই নিয়ে টানাপড়েন, তর্কাতর্কি চলছিল বেশ কিছু দিন। উত্পলের সন্দেহ হয়, এই ২৪ হাজার টাকা বন্ধুপ্রকাশ জমাই দেননি। বার বার রসিদ চাওয়াতে, বন্ধুপ্রকাশ তার সঙ্গে যথেচ্ছ দুর্ব্যবহার করে বলেও পুলিশকে জানিয়েছে ধৃত উত্পল। পুলিশ জানতে পেরেছে, শুধু উত্পলই নয়, আরও অনেকেরই বিমার বা অন্য কোনও অর্থলগ্নি সংস্থার কিস্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে নিহত স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে। উত্পল স্বীকার করেছে, প্রবল আক্রোশ থেকে এবং প্রতিশোধ নিতে সে বন্ধুপ্রকাশকে খুন করে ফেলার পরিকল্পনা করে।

আরও পড়ুন:জিয়াগঞ্জ তদন্ত: নানান সন্দেহে ঘুরপাক খেতে খেতে কী ভাবে উৎপলকে ধরতে পারল পুলিশ

কিন্তু মিনিট পাঁচেকের মধ্যে তিন-তিনটে খুন কি একা উত্পলই করেছে? না কি তার এক বা একাধিক সঙ্গী ছিল। রোগাটে চেহারার এই বছর কুড়ির তরুণের পক্ষে, এত অল্প সময়ে পর পর দুজন প্রাপ্তবয়স্ক-সহ তিন জনকে খুন করে ফেলাটা সোজা বিষয় নয় বলেই মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। তা হলে কি উত্পলের সঙ্গে আরও কেউ ছিল? তাকে বা তাদের কি আড়াল করছে উত্পল? সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। মুর্শিদাবাদের এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “জেলা পুলিশ এবং সিআইডি যৌথ ভাবে এই তদন্ত চালিয়ে যাবে। আরও তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টাও চলবে। এই অপরাধকাণ্ডে ধৃতের ভূমিকার পাশাপাশি, অন্য কারও যোগাযোগ থাকার সম্ভাবনার দিকটাও মাথায় রাখছি আমরা।”

দিনের বেলায় তিন জনকে পর পর কুপিয়ে খুন করা হল, কিন্তু কেউ কোনও চিৎকার শুনতে পেলেন না কেন, এটাও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। বন্ধুপ্রকাশকে গলায় হাঁসুয়া চালিয়ে খুনের সময় বিউটি কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন, সেটাও এ বার জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। বিউটি কি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি? চিত্কার করেননি? না করলে কেন? পাঁচ বছরের ছেলে স্বাভাবিক ভাবেই কেঁদে ওটার কথা। কিন্তু প্রতিবেশীরা কোনও আওয়াজই শুনতে পাননি। কেন? এই ধরনের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর এখনও অস্পষ্ট হয়ে রয়েছে পুলিশের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন