শীতে ছুটি কাটাতে সপরিবারে কোথায় ঘুরে আসা যায়? ছবি: শাটারস্টক।
কলকাতায় শীত তেমন জাঁকিয়ে পড়েনি। তবে হালকা ঠান্ডা, মিঠে রোদ মনে বেড়ানোর ইচ্ছাকে উসকে দেয়। শীত মানেই হইহই করে বেরিয়ে পড়া, চড়ুইভাতি, মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়ানো। এমন দিনে কি ঘরে থাকলে চলে! একদিনে ঘুরে আসার পরিকল্পনা যদি থাকে তা হলে বেছে নিতে পারেন শহরতলির ৫ জায়গা।চাইলে রান্না করে নিয়ে গিয়ে রোদে পিঠ দিয়ে মনের সুখে লুচি-মাংসও খেতে পারবেন সেখানে। না হলে রেস্তরাঁ মিলবে হাতের কাছেই।
বেনাপুর চর
বাগনানের কাছে বেনাপুর চর শীতে ঘোরার জন্য আদর্শ। ছবি: সংগৃহীত।
কলকাতা থেকে ঘণ্টা দুয়েকের দূরত্বে হাওড়ার বাগনানে রূপনারায়ণের পাড়ে বেনাপুরের চর। এ যেন সবুজ গালিচা ঢাকা প্রান্তর। ছোট ছোট গাছ সেখানে ছাউনি হয়ে দাঁড়িয়ে। শীতের দিনে চাদর পেতে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটানো যায় এখানে। রূপনারায়ণের রূপ দর্শনে ক্লান্তি আসে না মোটেই। বর্ষায় বেনাপুরের চর বেশি সবুজ। শীতে শ্যামলিমা কমলেও, দিনভর ঘোরার জন্য আদর্শ। এখানে স্থানীয় লোকেরা পিকনিকেও আসেন। গ্রাম্য পরিবেশ আশপাশে। কোনও আগাম পরিকল্পনা ছাড়া একটা দিন বেরিয়ে পড়তে পারেন এই রূপ দর্শনে। বেনাপুরের চরে ঘাসজমিতে বসে পছন্দের খাবার খেতে খেতে জমিয়ে আড্ডা দিতে পারেন দিনভর। সূর্যাস্ত দেখে ফিরতে ভুলবেন না। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন দেউলটি। সেখানেই রয়েছে সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবন এবং প্রদর্শনশালা।
কী ভাবে যাবেন
গাড়িতে গেলে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আসতে হবে বাগনান। তার পর আন্টিলা বা নুনটিয়ার রাস্তা ধরে বেনাপুর চর। বাসেও বাগনান এসে টোটো বা অটো করে এখানে আসা যায়। ট্রেনে এলে নামতে হবে বাগনান স্টেশনে। তার পর অটো বা টোটো বুক করে যেতে হবে বেনাপুর চরে।
সবুজ দ্বীপ
হুগলি নদীর বুকে তৈরি হয়েছে একটি চর। গাছগাছালি ভরা সেই স্থানই সবুজ দ্বীপ নামে পরিচিত। স্থানীয়দের কাছে এটি পিকনিকের স্থান। তবে নদী-প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে মাঝেমধ্যেই পর্যটকেরা সেখানে ভিড় করেন।
হুগলির বলাগড়ের সবুজদ্বীপে ঘুরে আসা যায় এক দিনেই। পানকৌড়ির শিকার ধরা, গাছগাছালিতে পাখির উঁকিঝুকি দেখতে দেখতেই পৌঁছোনো যায় সবুজ দ্বীপ। হাওড়া-কাটোয়া লাইনের সোমড়াবাজার স্টেশনের অদূরেই রয়েছে ফেরিঘাট। সেখান থেকে নৌকোয় ২০ মিনিটের পথ।
শীতের মরসুমে এখানে ভিড় জমান স্থানীয় মানুষ, আশপাশ থেকে পিকনিকের জন্য আসা লোকজন। তবে এই দ্বীপের একটি অংশ সাজিয়ে গুছিয়ে কটেজ তৈরি করে থাকার ব্যবস্থা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতর (ডব্লুবিটিডিসিএল)। পায়ে হেঁটেই ঘুরে নিতে পারেন দ্বীপটি। চাইলে নৌকা ভাড়া করে ভেসেও পড়তে পারেন নদীবক্ষে। সময় থাকলে ঘুরে নিতে পারেন কালনার ১০৮ শিব মন্দিরও। বলাগড় থেকে কালনার দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে কাটোয়া লাইনের ট্রেন ধরে নামতে হবে সোমড়াবাজার স্টেশনে। সেখান থেকে টোটোয় ফেরিঘাট। তার পর ২০ মিনিট নৌকায় করে সবুজদ্বীপ। কলকাতা থেকে দিল্লি রোড হয়ে বলাগড় বা সোমড়াবাজার আসতে সময় লাগবে আড়াই ঘণ্টা। দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার।
হংসেশ্বরী মন্দির
বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দিরটিও শীত-ভ্রমণের জন্য দারুণ। ছবি: সংগৃহীত।
মন্দির তবে আর পাঁচটা মন্দিরের মতো নয়। এর গঠনশৈলীই আলাদা করেছে হুগলির বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দিরকে। ৫ তলা এই মন্দিরে রয়েছে ১৩টি চূড়া। চূড়ার মাথায় পদ্মের কুঁড়ি।
মন্দিরে আরাধ্যা দেবী হংসেশ্বরী। কার্যত তিনি মা কালীরই এক রূপ। পদ্মের উপর দেবী অধিষ্ঠিতা। চতুর্ভুজা মূর্তির গাত্রবর্ণ নীল। উপরের বাম হাতে তরবারি, নীচের বাম হাতে কাটা মুণ্ড, উপরের ডান হাতে অভয় মুদ্রা, নীচের ডান হাতে আশীর্বাদের ভঙ্গিমা। হংসেশ্বরী মন্দিরের নির্মাণশৈলীতে তন্ত্রের নানা বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। মন্দির ঘিরে রয়েছে সাজানো বাগান। বাঁশবেড়িয়া থেকে ঘুরে নিতে পারেন ত্রিবেণীর কাছে জাফর খাঁ গাজির দরগা। হংসেশ্বরী মন্দিরের মতো এই স্থানটিও ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণ করে। বাংলায় ইসলামিক স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এটি। ঘুরে নিতে পারেন ব্যান্ডেল চার্চ ও বড় ইমামবাড়া।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া-কাটোয়া লাইনে বাঁশবেড়িয়া স্টেশনে নেমে হংসেশ্বরী মন্দিরে আসতে পারেন। ব্যান্ডেল স্টেশনে নেমে অটো বুক করেও এখানে আসতে পারেন। কলকাতা থেকে দিল্লি রোড ধরেও গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন। দূরত্ব মোটমুটি ৫০ কিলোমিটার।
মাইথন এবং কল্যাণেশ্বরী মন্দির
মাইথনও পিকনিক এবং ঘোরার জন্য ভাল জায়গা। ছবি:সংগৃহীত।
আসানসোল থেকে যেতে হয় মাইথন। তবে জলাধারটি পড়ে ঝাড়খণ্ডে। জায়গাটি বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী। সকালে বেরোলে ২-৩ ঘণ্টাতেই পৌঁছনো যায় মাইথনে। ছোট ছোট টিলা বের দিয়ে রেখেছে জলাধারটিকে। সৌন্দর্য অসাধারণ। জলক্রীড়ার নানা রকম ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে ভেসে পড়তে পারেন শিকারার ধাঁচে তৈরি নৌকোয়। আবার রোমাঞ্চ চাইলে আছে স্পিডবোটও। মাইথনের অদূরে খুব পুরনো কল্যাণেশ্বরী মন্দির। লোকমুখে শোনা যায়, ‘মাই কা থান’ থেকে এই জায়গায় নাম হয়ে গিয়েছে মাইথন। একটি গাড়ি ভাড়া করলে ডিয়ার পার্ক, পাঞ্চেৎ জলাধার-সহ আশপাশে বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে নেওয়া যায়। চাইলে থাকতেও পারেন। রাতেও থাকার সুব্যবস্থা আছে। দুপুরে খাওয়ার জন্য মাইথনের আশপাশে প্রচুর ভাল হোটেল আছে।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে ট্রেনে আসানসোল, কুমারডুবি বা বরাকর গিয়ে অটো বা গাড়িতে মাইথন। কুমারডুবি স্টেশনটি মাইথনের সবচেয়ে কাছে। আসানসোল দিয়ে গেলে মাইথন এবং কল্যাণেশ্বরী যাওয়ার বাস মিলবে।
ক্ষীরাই
পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষীরাইয়ের নাম কিছু দিন আগেও লোকমুখে ঘুরত। এখানে দোকান্ডা গ্রামটি এক সময় এই বঙ্গের ফুলের উপত্যকা বলে পরিচিতি পেয়েছিল। এই জায়গাটি শীতে ঘুরে আসাই যায়। সকালের ট্রেন ধরলে দুপুরে ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে হাওড়া ফিরতে পারবেন। এখানে ফুলের চাষ হয়। দোকান্ডায় গেলে দেখতে পাবেন ফুলের রঙেই চারপাশ যেন রঙিন। কে যেন রঙিন গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে রেললাইন। সেখান দিয়ে ট্রেন যাওয়ার দৃশ্যও মনোরম লাগে। জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি রকমারি ফুলের চাষ হয় এখানে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফুল পাবেন এখানে।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে মেদিনীপুর লাইনের ট্রেন ধরে নামতে পারেন পাঁশকুড়া বা তার পরের স্টেশন ক্ষীরাই। ক্ষীরাই থেকে হাঁটা পথ। তবে রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটতে হয়। ঝুঁকি এড়াতে পাঁশকুড়ায় নেমে অটো বা টোটা ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে