সবুজ মখমলে তুষারের তুলো

অমৃতসরে এসেও ওয়াঘা বর্ডার দেখতে না পেয়ে মনটা খচখচ করছিল। আফশোস নিয়েই রওনা দিয়েছিলাম। কিন্তু উপায় ছিল না। আমাদের সারথী, মানে গাড়ির চালক দীপক (পদবিটা জানা হয়নি) জানিয়েছিলেন, দুপুর-দুপুর রওনা হতে না-পারলে ডালহৌসি পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০০
Share:

অমৃতসরে এসেও ওয়াঘা বর্ডার দেখতে না পেয়ে মনটা খচখচ করছিল। আফশোস নিয়েই রওনা দিয়েছিলাম।

Advertisement

কিন্তু উপায় ছিল না। আমাদের সারথী, মানে গাড়ির চালক দীপক (পদবিটা জানা হয়নি) জানিয়েছিলেন, দুপুর-দুপুর রওনা হতে না-পারলে ডালহৌসি পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে। তাতে বিশেষ অসুবিধা ছিল না। কিন্তু, সময়টা ছিল বড্ড গণ্ডগোলের। ফেব্রুয়ারি মাস। এই সময়ে পাহাড়ে বড় একটা কেউ বেড়াতে আসে না। বিশেষ করে হিমাচল প্রদেশে। এখানে বাঙালিরা সাধারণত যা দেখতে আসে, সেই আপেল ফলতে তখন অনেক দেরি। ফলে পাহাড় বলতে গেলে পুরো সুনসান।

স্বর্ণমন্দির ছুঁয়ে রওনা হলাম ডালহৌসির দিকে। পঞ্জাবে শীত তেমন মালুম হয়নি। পাঠানকোট হয়ে গাড়ি ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে শুরু করল। আলো থাকতে পাহাড়ি পাকদণ্ডী বেয়ে দু’এক জনকে তবুও বা চোখে পড়ছিল। ঝুপ করে সন্ধ্যা নামতে মাইলের পর মাইল কাউকে দেখতে পেলাম না। এক-একটা মোড়ে সার-সার বন্ধ দোকান। দু’একটা বাতি অবশ্য জ্বলছে। তবে জমাট কুয়াশায় কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে তার আলো। গাড়ির চালক জানালেন, শীতে সন্ধ্যা ছ’টার পরে কোনও দোকান খোলা থাকে না। চা মিলবে সেই ডালহৌসিতেই।

Advertisement

খাড়া পাহাড়ের নীচে একটা মোড়ে এসে দাঁড়াল গাড়ি। ঘড়ির কাঁটা তখন ৮টা ছুঁয়েছে। দীপক দেখালেন, ওই দূরে ডালহৌসি। দেখলাম, পাহাড়ের গায়ে যেন ফুটে রয়েছে হাজার তারা। এখান থেকে উতরাই রাস্তা। দীপক বললেন, ‘‘সাথমে অউর জ্যাকেট হ্যায় তো পহেন লিজিয়ে।’’ বললাম, জ্যাকেট তো পড়েই রয়েছি! হাসলেন দীপক, ‘‘উসসে বাত নেহি বনেগা। উপর ঠান্ড বহুত জাদা হ্যায়।’’

যত উপরে উঠছি, সরু আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাড়ির হেডলাইটে পাইনের ছায়া সামনে নেচে চলেছে। হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিল। গাড়ি থেকে নামতেই বুঝলাম, কেন দীপক আরও একখানা জ্যাকেট চড়াতে বলছিল। হিম হাওয়া এসে যেন শরীর ফুঁড়ে বেরিয়ে গেল।

সেই ধাক্কা সামলে পাহাড়ি রাস্তা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে হোটেলে পৌঁছে তাজ্জব বনে গেলাম। দুপুরেই ম্যানেজারের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু, এখন কেউ নেই। গেট খোলা। কিন্তু ডাকাডাকি করেও কাউকে পেলাম না। ফোন করলাম। ল্যান্ডলাইন দিব্যি বেজে চলেছে। কেউ ধরছে না। ভুতুড়ে নাকি রে বাবা! উপরে গাড়িতে দীপক আর গিন্নি। ফিরে জানালাম, এখানে থাকা হবে না। আশ্বস্ত করল দীপক— ‘‘নজদিকমে এক বড়িয়া রিসর্ট হ্যায়। আপ চাহ তো উধার রহে সক্তে হো।’’ চাওয়া না-চাওয়ার অবস্থায় ছিলাম না আমরা। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পৌঁছও গেলাম সেখানে।

রিসেপশনে বেশ কয়েক জন আড্ডা দিচ্ছিল। ম্যানেজার খাতির করেই রুম দেখালেন। অফ সিজন বলে লাক্সারি রুমে ফিফটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্টও মিলল। ততক্ষণে ঠান্ডায় গিন্নির অবস্থা কাহিল। দু’টো ব্ল্যাঙ্কেট চড়িয়েও কাঁপুনি থামছে না। রুম হিটার জ্বালিয়ে উষ্ণতার অপেক্ষায় রয়েছি। মিনিট দশেকের মধ্যে বয় এল হাতে ধোঁয়া ওঠা দু’বাটি গরম চিকেন ক্লিয়ার স্যুপ নিয়ে। আমাদের অবস্থা দেখে সে আর অর্ডারের অপেক্ষা করেনি। স্যুপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েই ফেলেছে।

ইন্টারনেট থেকে শুরু করে পাড়ার গোপীদা— পই পই করে বলেছিল, ‘‘হিমাচল যাচ্ছ ব্রাদার। হয় এপ্রিল, নয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর বেস্ট। শীতে যাওয়া মানে ওয়েস্ট অব মানি অ্যান্ড টাইম।’’ কে বলে শীতে পাহাড়ের কোনও সৌন্দর্য্য নেই? ঘন সবুজের উপর তুলোর মতো তুষারের ওড়াউড়ি যে না দেখেছে, সে কী বুঝবে পাহাড়ের সৌন্দর্য্য?

তিন দিন ছিলাম ডালহৌসিতে। বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে সেখানে নেতাজির নামে রয়েছে অনেক কিছুই। লর্ড ডালহৌসির নামে যতই নামকরণ হোক, এই হিল স্টেশনে কিন্তু সুভাষ চক বা নেতাজি টার্মিনাসও ফেমাস জায়গা। অসুস্থ শরীরে এখানে বেশ কিছু দিন কাটিয়েছিলেন নেতাজি। পাহাড়ি ঝর্না ‘সাতধারা’র জল খেয়ে চাঙ্গা হন তিনি। বেলার দিকে দেখে এলাম সেই সাতধারা। জলও খেলাম।

পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে রওনা হলাম খাজিয়ারের উদ্দেশে। মাঝে পড়ল কালাটপ পাহাড়। বন দফতরের অনুমতি নিয়ে সে জঙ্গলে ঢুকতে হয়। ততক্ষণে কুয়াশা সরিয়ে ঝিমমিক করছে আলো। মনেই হচ্ছে না, তুষারপাত দেখে সকাল হয়েছিল। জঙ্গলের মাঝে ছিমছাম নিস্তব্ধ বাংলো যেন রাত কাটানোর নিমন্ত্রণ দিচ্ছিল। সেখান থেকে বরফের রাস্তা দিয়েই পৌঁছলাম খাজিয়ার।

চারদিকে ঘন জঙ্গল। মাঝে ছোট্ট একটা উপত্যকা। তার মাঝে টলটলে একটা দিঘি। সবুজে সবুজ চারদিক। মখমলের মতো ঘাস যেন আমাদেরই অপেক্ষায় ছিল। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে মনে হল, সত্যিই তো, স্বর্গ যদি কোথাও থাকে, তা এখানে, এখানেই।

ছুটিতে কোথায় গেলেন? উট দেখলেন নাকি উটকামন্ড? সিংহ পেলেন গিরে নাকি শ্রীলঙ্কায় খুঁজলেন ধনপতির সিংহল? চেনা ছকের বাইরে সেই বেড়ানোর গল্প লিখুন অনধিক ৫০০ শব্দে আর পাঠিয়ে দিন আমাদের। জানান যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার হালহকিকত। ছবি (নিজেদের ছাড়া) দিন। পাঠান এই ঠিকানায়:

সম্পাদক (‌সেন্ট্রাল বেঙ্গল)

আনন্দবাজার পত্রিকা

৬, প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলিকাতা — ৭০০০০০১

অথবা, করুন ই-মেল:

abpnm15@gmail.com

(*সম্পাদকের নির্বাচনই চূড়ান্ত। লেখা ও ছবি ফেরতযোগ্য নয়।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন