Jagannath Temples in Odisha

জগন্নাথ মন্দির শুধু পুরীতে নয়, রয়েছে ওড়িশার নানা প্রান্তে, ভ্রমণ তালিকায় থাকুক সে সবও

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে জনপ্রিয়তা সর্বাগ্রে। তবে পুরী ছাড়াও রথযাত্রা নিয়ে ধূমধাম হয় ওড়িশার বিভিন্ন প্রান্তে। এ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানেই রয়েছে পুরনো জগন্নাথ মন্দির। সুযোগ করে ঘুরে নিতে পারেন সেখানেও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ ১০:০১
Share:

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে নিয়ে আলাদা আবেগ কাজ করে অনেকের মনেই। তবে ওড়িশার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক পুরনো জগন্নাথ মন্দির। সেখানেও যেতে পারেন জগন্নাথ দর্শনে। ছবিটি অঙ্গুলের জগন্নাথ মন্দিরের। ছবি: সংগৃহীত।

সৈকত শহর পুরীতে জগন্নাথ শুধু উপাস্য দেবতা নন, তিনি যেন এক আবেগের নাম। দোকান থেকে হোটেল, রেস্তরাঁ— সর্বত্রই তাঁর ছবি, মূর্তি। সুপারির খোলে আঁকা চিত্র হোক বা পটের শিল্পকলা, জগন্নাথ সর্বত্র। সেই পুরীর জগন্নাথ মন্দির দর্শনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন ভক্তেরা। রথযাত্রা উপলক্ষে শ্রীক্ষেত্র হয়ে ওঠে মিলনমেলা। সে এক দেখার মতোই দৃশ্য বটে! জগন্নাথের নামে মাতোয়ারা সকলে। এমন উৎসব প্রত্যক্ষ করতে আসেন বিদেশিরাও।

Advertisement

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বয়স ঠিক কত, নির্দিষ্ট ভাবে কেউ বলতে পারেন না। এই মন্দিরের উৎস, ইতিহাস নিয়েও নানা মত। তবে তাতে ভক্তের ভক্তিতে প্রভাব পড়ে না। ভারতে জগন্নাথ মন্দিরের কথা বললে, সকলেই একবাক্যে পুরীকেই স্মরণ করেন।

তবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিশেষ মাহাত্ম্য থাকলেও ওড়িশার অন্যত্রও তিনি উপাস্য। এ রাজ্যের নানা প্রান্তে রয়েছে জগন্নাথ মন্দির। তার মধ্যে কয়েকটি অত্যন্ত পুরনোও। সময় সুযোগ করে ঘুরে নিতে পারেন সেগুলিও।

Advertisement

খাল্লিকোটের জগন্নাথ মন্দির

খাল্লিকোটের জগন্নাথ মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

ওড়িশার গঞ্জাম জেলার খাল্লিকোটে রয়েছে জগন্নাথের মন্দির। পাহাড় ঘেরা স্থান আর সারি সারি নারকেল গাছ মন্দিরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে অনেকাংশে। মূল প্রবেশদ্বার থেকে মন্দিরের ব্যপ্তি কতটা বুঝে ওঠে যায় না। উৎসব-অনুষ্ঠান ছা়ড়া সেখানে ভক্তদের ভিড়ও ততটা হয় না। তবে এই মন্দিরের শান্ত পরিবেশ, উন্মুক্ত অঙ্গনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক মণ্ডপ বিশেষ ভাবে নজর কাড়ে। অনেকে বলেন, ওড়িশার দ্বিতীয় বৃহত্তম জগন্নাথ মন্দির এটি। এর স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে পুরীর মন্দিরের মিলও আছে। মর্দরাজ বংশের রাজত্বে এটির নির্মাণ। ‘কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত’ নামে রাজা অনিরুদ্ধ ছোটরায়ের একটি লেখা থেকে জানা যায় ১৬৭০ সালে রাজা প্রথম জগন্নাথ মর্দরাজের আমলে উন্মুক্ত মণ্ডপে জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা এবং সুদর্শনের কাঠের মূর্তি পূজিত হত। আবার ‘বৈশখা পূরণ’ নামে পাণ্ডুলিপিতে উল্লেখ, দ্বিতীয় জগন্নাথ মর্দরাজ খাল্লিকোটের বর্তমান মন্দিরে নির্মাণ করেন। এই মন্দিরের গাঢ় লাল মণ্ডপ, পাথুরে কারুকাজ বিশেষ নজর কাড়ে।

নীলগিরির জগন্নাথ মন্দির

নীলগিরির জগন্নাথ মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

বালেশ্বর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে নীলগিরির স্বর্ণচূড়ায় রয়েছে সাদা রঙের জগন্নাথ মন্দির। নীলগিরির রাজা হরিচন্দন মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রা মূল উপাস্য। এ ছাড়াও মন্দির চত্বরে রয়েছে বিমলা মাতা, গণেশ এবং শিবের মূর্তিও। প্রতি বছর ধূমধান করে বিশাল রথযাত্রাও হয় নীলগিরির জগন্নাথ মন্দিরে। মন্দিরের অদূরেই রয়েছে নীলগিরি রাজবাড়ি। নীলগিরি পাহাড়, তারই অদূরে এই দুই স্থানই জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র।

ইমামি জগন্নাথ মন্দির

ইমামি জগন্নাথ মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

বালেশ্বরের বালগোপালপুরে রয়েছে আরও একটি জগন্নাথ মন্দির। বাগদা সৈকত থেকে জায়গাটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি মন্দিরটি ৭৮ ফুট উঁচু। মূল মন্দির ছাড়াও ৩ একর বিস্তৃত জায়গায় রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য মন্দির। দেওয়ালের কারুকাজও নিখুঁত। এর স্থাপত্যশৈলী দর্শকদের মুগ্ধ করে।

খুরদার জগন্নাথ মন্দির

ওড়িশার খুরদাতেও রয়েছে জগন্নাথ মন্দির। রথযাত্রায় ঘুরে আসতে পারেন সেখানেও। ছবি:সংগৃহীত।

ওড়িশার খুরদা জেলায় লবণগিরি পাহাড়ে রয়েছে জগন্নাথ মন্দির। সাদা রঙের মন্দিরটি খুব বেশি প্রশস্ত নয়। ভুবনেশ্বর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরের মন্দিরে একই সঙ্গে পূজিত হন জগন্নাথ এবং লবণেশ্বর অর্থাৎ মহাদেব। স্থানীয় মানুষজনের অনেকেই মনে করেন, এই মন্দির হাজার বছরের পুরনো। রথযাত্রা উপলক্ষে বিশেষ ধূমধাম হয় এখানেও।

বারিপদার জগন্নাথ মন্দির

বারিপদার জগন্নাথ মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

ময়ূরভঞ্জ জেলার বারিপদায় রয়েছে সুবিশাল মন্দির। ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজা বৈদ্যনাথ ভঞ্জের আমলে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল। ওড়িশার মন্দিরগুলির বিশেষত্ব হল, প্রবেশদ্বার থেকে এর বিস্তৃতি বোঝা যায় না। ভিতরে গেলে দেখা যায় প্রশস্ত স্থানে বিভিন্ন ভাগে সেগুলি নির্মিত। ল্যাটেরাইট পাথরের কারুকাজ ফুটে উঠেছে মন্দিরের দেওয়ালে। মন্দির প্রাকার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অনুকরণেই তৈরি। বিমান, জগমোহন এবং নাটমন্দির—তিন অংশে এটি নির্মিত। মূল মন্দিরের আশপাশে ছোট ছোট একাধিক মন্দির রয়েছে। খুব বড় করে রথযাত্রা পালিত হয় এখানেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement