পুরনো শহর সল্‌জবুর্গ

সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।সৌন্দর্যের সঙ্গে নান্দনিক সৃষ্টির এমন অসাধারণ সংমিশ্রণ একটা শহরকে যে কত অনিন্দ্য, স্বর্গীয় রূপ দিয়েছে সল্‌জবুর্গে পা দিলেই তা বোঝা যায়। সল্‌জবুর্গ শব্দের অর্থ ‘সল্ট ক্যাসেল’। এই শহরের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে হলিউডের সর্বকালের সেরা ক্লাসিক ছবি ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০০:০০
Share:

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

Advertisement

• ‘রাক্ষস’ শার্কের জীবাশ্মের সন্ধান

সমুদ্রের তলদেশে কত যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তা মানুষের আজও অজানা। নিরন্তর গবেষণায় তার কিছুটা জানতে পেরেছি আমরা। রহস্যের সমুদ্রে তা নেহাত্ই কণামাত্র। তেমনই সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ‘রাক্ষস’ শার্কের সন্ধান পেল দুনিয়া।

Advertisement

ক্যানারি আইল্যান্ডের জলের তলায় দুই মিলিয়ন বছর আগের এক দৈত্যাকৃতি শার্কের জীবাশ্ম আবিষ্কার করলেন স্পেনের সমুদ্রবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা। সমুদ্রের গভীরে সাড়ে ছ’হাজার ফুট লম্বা, দু’হাজার মিটার চওড়া একটি পাহাড়ের পাদদেশে পাওয়া গিয়েছে ওই জীবাশ্ম। লুপ্তপ্রায় বহু প্রাণীর জীবাশ্ম রয়েছে ক্যানারি আইল্যান্ডের জলের তলায়। তার মধ্যে এই দৈত্যাকৃতি শার্কের জীবাশ্ম আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বিজ্ঞানীদের মতে, ৬৫ ফুট লম্বা এই দৈত্যাকৃতি শার্কের ওজন ছিল ১০০ টন। তিমি, ডলফিন, সীল মাছ, সামুদ্রিক ম্যামল, কচ্ছপ প্রভৃতি খেয়ে উদরপূর্তি করত এই ‘রাক্ষস’ শার্ক। দুই মিলিয়ন বছর আগেও সমুদ্রের তলায় যে এত বড় আকারের প্রাণী ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি এর আগে।

• বুলগেরিয়ায় প্রাগৈতিহাসিক খেলনা উদ্ধার

ব্রোঞ্জের একটি ছোট্ট সারস। একটি তেপায়া (ট্রাইপড)-র উপর বসানো সারসটিকে নিয়ে খেলছে এক শিশু। তাকে ঘিরে মুগ্ধ চোখে আরও কয়েকটি শিশু সেই খেলনাটি দেখছে। খেলনা জিনিসটাই এর আগে তারা কেউ দেখেনি যে। সময়টা খ্রিস্টজন্মের হাজার দেড়েক বছর আগের। ব্রোঞ্জ যুগের একেবারে শেষ দিকে। সম্প্রতি বুলগেরিয়ার দক্ষিণে জ্লাটোগ্রাড শহরের কাছে খোঁজ মিলেছে প্রাগৈতিহাসিক এই খেলনাটির। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পর্যন্ত যত খেলনা আবিষ্কার হয়েছে, তার মধ্যে এটিই প্রাচীনতম। ৩০ গ্রামের কাছাকাছি ওজনের ওই খেলনাটির মাথা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরত। সারসটির চোখ এক অত্যন্ত দামী রত্ন দিয়ে তৈরি।

সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরনো প্রাগৈতিহাসিক এই খেলনাটির খোঁজ পান স্থানীয়রাই। দক্ষিণ বুলগেরিয়ার রোহডোপ পর্বতের কাছে এটির খোঁজ পাওয়া যায়। এলাকার এক প্রত্নসংগ্রাহকের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এর পরই শুরু হয় খননের কাজ। ওই এলাকায় প্রাচীন কালে ট্রাকিয়ান আদিবাসীদের বসবাস ছিল। সে কারণেই প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, খেলনাটি হয়তো কোনও ট্রাকিয়ান শিশুর। তবে রহস্যের এখানেই সমাধান হচ্ছে না। পরীক্ষানিরীক্ষা করে প্রাথমিক ভাবে ঐতিহাসিকদের একাংশের অনুমান, ব্রোঞ্জের সারসটি হয়তো সাধারণ খেলনা নয়। চোখের রত্নটি দেখে বিজ্ঞানীদের ধারণা, হয়তো ধর্মীয় কোনও কারণেও এর ব্যবহার হত। রহস্য সমাধানে শুরু হয়েছে বিশদে পরীক্ষা।

• খুঁজে পাওয়া গেল বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো গয়না

নিটোল একটি সবুজ পাথরের বালা। আজ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে সে আলো ছড়াত কোন প্রত্নবালার কবজিতে?

সঠিক বলা যাবে না। যদিও আলতাই পাহাড়ের ডেনিসোভা গুহা থেকে সেটিকে খুঁজে পাওয়ার পর কিছু কিছু ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন রাশিয়ার পুরাতাত্ত্বিকরা। হরেক পরীক্ষানিরীক্ষার পর জোর গলায় তাঁরা বলছেন— এটিই বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো অলঙ্কার। ডেনিসোভার প্রত্নমানুষের হেফাজতে সুরক্ষিত ছিল সেটি।

বালাটা খুঁজে পাওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই ডেনিসোভার প্রত্নমানুষের জীবনযাত্রা অবাক করে তুলেছে বিশ্বকে। যে সময়ে খোদাইয়ের যন্ত্রপাতি ততটাও উন্নত হয়নি, সেই সময়ে তৈরি এই বালার নিটোল গড়ন দেখার মতো! বালার পাথরটাও আবার হেলাফেলার নয়। দিনের বেলায় সূর্যের আলো ঠিকরে ওঠে তাতে, রাতের বেলায় আগুনের আলোয় সবুজ আভা খেলে যায় তার গায়ে। পুরাতাত্ত্বিকরা তাই মনে করছেন, এ কোনও সামান্য বালা নয়। আটপৌরে সাজের জন্য তার ব্যবহারও হত না। হয়তো বিশেষ কোনও উত্সবে সেটিকে ধারণ করা হত সৌভাগ্যের সূচক হিসেবে।

দুঃখের কথা, বালাটা অক্ষত অবস্থায় খুঁজে পাননি পুরাতাত্ত্বিকরা। খুঁজে পেয়েছেন দু’ টুকরো হিসেবে। চওড়ায় এক একটা টুকরো ২.৭ সেন্টিমিটার; ঘনত্ব ০.৯ সেন্টিমিটার। এত বছরে বেশ ভালই ঝড়-জল গিয়েছে বালাটার উপর দিয়ে। স্পষ্ট দেখা গিয়েছে তার গায়ে বয়সের আঁচড়ের দাগ। আর একটা বিশেষত্বও রয়েছে এই বালার। বালাটার উপরে একটা ছোট্ট গোল ফুটো রয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সেই ফুটোর গায়ে রয়েছে চামড়ার দাগ। তার থেকে পুরাতাত্ত্বিকদের অনুমান, হয়তো চামড়ার স্ট্র্যাপ দিয়ে গলাতেও পরা হত সেটা!

কিন্তু হাতের বালা কি গলায় পরার কোনও কারণ আছে?

“আছে বইকী! প্রত্নমানবেরা বেশির ভাগ সময়েই গয়নাগাটি ব্যবহার করত অশুভ শক্তিকে ঠেকানোর জন্য। তারা বিশ্বাস করত, সব গয়নারই কোনও না কোনও যাদুশক্তি আছে।” বলছেন সাইবেরিয়া জাদুঘরের অধ্যক্ষ ইরিনা সালনিকোভা।

ঐতিহ্য

• লখনউয়ের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব বাঁচাতে প্রচার কচিকাঁচাদের

ঊনবিংশ শতকের একটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব বাঁচাতে এগিয়ে এল লখনউয়ে কচিকাঁচারা। ব্রিটিশ আমলে দেশের এলিট ক্লাবগুলিতে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ছিল। এমনকী, ক্লাবের বাইরে নোটিস টাঙানো থাকত— ‘ডগস অ্যান্ড ইন্ডিয়ান্স আর নট অ্যালাউড’। সে আমলেই ভারতীয়দের জন্য জন্ম নেয় ‘রাফা-ই-আম’ ক্লাব। আটের দশকে অবোধের নবাবদের তৈরি সেই অভিজাত ক্লাবটি অবহেলিত হতে হতে ক্রমশই জীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে তা আবর্জনা ফেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে। এ বার ঐতিহ্যশালী সেই ক্লাবের সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে শহরের এক দল কচিকাঁচা। ক্লাব বাঁচাতে প্রচারের পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে দাবিও জানিয়েছে তারা। কচিকাঁচাদের এই উদ্যোগে সামিল হয়েছেন শহরের বড়রাও।

প্রচারের পুর ভাগে থাকা উদ্যোক্তাদের অন্যতম নিদা রিজভির আক্ষেপ, “ফি বছর স্বাধীনতা দিবস এবং প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রচুর অর্থ ব্যয় হলেও এ ধরনের ঐতিহ্যবাহী বাড়ির সংস্কারে প্রশাসন নজরই দেয় না। কচিকাঁচাদের নিয়ে এ ধরনের উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হল প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।” তিনি আরও বলেন, “রাফা-ই-আম ক্লাবের ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত করার পরই ছোটরা উৎসাহের সঙ্গে এই প্রচারে সামিল হয়েছে।”

সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাজুল ক্ষত্রির কথায়: “ক্লাবের সংস্কার হলে আমরা খেলাধুলো করার জায়গা পাব। আর, বিভিন্ন অনুষ্ঠানও এখানে করা যাবে। এ কারণেই আমি এই প্রচারে নেমেছি।”

‘রাফা-ই-আম’ ক্লাবের ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ইতিহাসবিদ যোগেশ পারভীন বলেন, “এখানেই মুন্সী প্রেমচন্দ ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে তাঁর আত্মিক লড়াই শুরু করেছিলেন। ফলে এই প্রচারের মুখ হিসেবে তাঁকে ব্যবহার করাটা খুবই যুক্তিযুক্ত হবে।” তিনি আরও জানান, এখানেই পণ্ডিত নেহেরু তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এমনকী, লখনউ চুক্তিও এখানে স্বাক্ষরিত হয়।

• কুয়ো-চিত্রের প্রদর্শনী

‘ওর্য়াল্ড হেরিটেজ ডে’ উপলক্ষে নয়াদিল্লির রেড ফোর্টে শহরের কুয়ো নিয়ে এক স্থিরচিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেল গত ১৮ এপ্রিল। ঐতিহ্যবাহী ওই কুয়োগুলিকে স্থানীয়েরা বলেন ‘বাউলি’। এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)। ‘ওর্য়াল্ড হেরিটেজ ডে’তে যাঁরা সেই প্রদর্শনীতে এসেছিলেন, তাঁদের কোনও প্রবেশমূল্য দিতে হয়নি। শহরের বাউলিগুলির বিরল চিত্র দিয়ে সাজানো প্রদর্শনীতে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু উৎসাহী।

শুধুমাত্র ছবিগুলির প্রদর্শনীই নয়, এ বিষয়ে সাধারণের আগ্রহও বাড়ানো ছিল এর উদ্দেশ্য। খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার শতকে হরপ্পা সভ্যতার সময়কার আবিষ্কৃত বাউলিগুলি সম্বন্ধে সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এক তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় রয়েছে, উগ্রসেন কি বাউলি, রাজা কি বাউলি, গন্ধক কি বাউলি-সহ বহু কুয়ো।

• প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকর্মের প্রদর্শনী সিঙ্গাপুরে

সপ্তদশ শতকের ভারতীয় শিল্পকর্ম ও স্থাপত্য নিয়ে সিঙ্গাপুরের এক সংগ্রহালয়ে একটি প্রদর্শনী শুরু হল। মে মাসের গোড়ায় সিঙ্গাপুরের ইন্ডিয়ান হেরিটেজ (আইএইচসি) সেন্টারে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনীটি সব অর্থেই অভিনব। ৭ মে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি হিয়েন লুঙ বলেন, ‘‘এ ধরনের প্রদর্শনীর ফলে ভারতীয় সংস্কৃতির বিবিধ দিক জানা যায়।’’

এই প্রদর্শনীতে মালয়েশিয়ার স্থাপত্যকর্ম ছাড়াও দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকের তামিলনাড়ুর চোলা বংশের শিব-পার্বতীর মূর্তি রাখা হয়েছে। মোট ৪৪৩টি প্রদর্শের মধ্যে বেশির ভাগ শিল্পকর্মই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির অবদান। এর মধ্যে বেশির ভাগই আবার সপ্তম শতকে ভারতের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ফলস্বরূপ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিল। সংগ্রহালয়ে প্রদর্শিত হচ্ছে সাইগন চেটিয়ার্স মন্দিরের ট্রাস্টের দান করা গয়না। এর মধ্যে রয়েছে বিংশ শতকের একটি পাগড়িতে বাঁধার গয়না।

আইএইচসি-র ডিরেক্টর গৌরী কৃষ্ণণ বলেন, “এই প্রদর্শনীর ফলে দু’দেশের ঐতিহ্য নিয়ে পারস্পারিক বোঝাপড়া বাড়বে।”

ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সংগ্রহালয় গড়তে সময় লেগেছে সাত বছর। সরকারি সাহায্যে তৈরি চারতলা এই বাড়িটি গড়তে খরচ হয়েছে প্রায় ১১.৮ মিলিয়ন ডলার।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ

• একাধিক প্রজাতি লুপ্ত হওয়ায় মুখে, উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা

বেশ কিছু প্রাণীর অস্তিত্ব লুপ্ত হওয়ার আশঙ্কাই এখন প্রাণী বিজ্ঞানীদের মাথায় ঘুরছে।

কেন?

নেচার জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আফ্রিকান হাতি, মেরু ভল্লুক, সাদা গন্ডার, আমুর লেপার্ড-সহ বেশ কিছু প্রজাতি ধ্বংস হতে চলেছে। পাশাপাশি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রাণী বিজ্ঞানীদের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪১ শতাংশ উভচর, ২৬ শতাংশ স্তন্যপায়ী এবং ১৩ শতাংশ পক্ষী প্রজাতির লুপ্ত হওয়ার বিপদঘণ্টিও বেজে গিয়েছে। লুপ্ত হওয়ার এই ‘রেসে’ এগিয়ে রয়েছে আফ্রিকার হাতি। বিজ্ঞানীদের দাবি, এখনই চোরা শিকারের উপরে নিয়ন্ত্রণ আনা না গেলে ২০২০-র মধ্যে একটিও আফ্রিকার হাতি আর থাকবে না। চোরাশিকারীদের কবলে পড়ে বিশ্বজুড়ে তাদের সংখ্যা ইতিমধ্যেই আজ হাতে গোনা।

স্বভাবতই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবিদেরা। সম্প্রতি আফ্রিকার বটসওয়ানায় আফ্রিকান এলিফ্যান্ট সামিটের আয়োজন করা হয়েছিল। ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে হাজির হয়েছিলেন ২০টি দেশের প্রতিনিধি। বিজ্ঞানীদের দাবি, চোরাশিকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ২০২০-র মধ্যেই আফ্রিকান হাতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। উচ্চতর রাজনৈতিক স্তরে গিয়ে হাতিদের সুরক্ষা দেওয়া এবং চোরাশিকার বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই এই সামিট বলে জানান বটসওয়ানার পরিবেশমন্ত্রী এলিয়াস মাগোসি।

এই সম্মেলনে দাবি করা হয় বিশ্বের মধ্যে হাতির দাঁত-সহ বিভিন্ন অংশ সবথেকে বেশি পাচার করা হয় চিনে। সেখানে হাতির দাঁত ঐতিহ্যবাহী উপহার সামগ্রী তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া হাতির দাঁতের চপস্টিক, চুলের প্রসাধনী এবং মূল্যবান অলঙ্কার চিনে বহুল জনপ্রিয়। বেজিংয়ে ২০১০-এ হাতির সামগ্রীর দাম ছিল ৭৫০ ডলার। ২০১৪-য় তা বেড়ে হয়ে যায় ২ হাজার ১০০ ডলার। সে কারণে আফ্রিকান হাতির চোরাশিকার রুখতে চিনকে অগ্রসর হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন পরিবেশবিদেরা। তবে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহনকারী এই দাঁতের ব্যবহার যে একেবারেই বন্ধ করা যাবে না, তাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সামিটে উপস্থিত চিনের প্রতিনিধি। তাঁর দাবি, চিনের উপরে অহেতুক দোষারোপ করা হচ্ছে। উপরন্তু চোরাশিকার রুখতে চিনের তরফ থেকে আফ্রিকাকে যাবতীয় সাহায্য করা হয়েছে।

‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনসারভেশন অব নেচার’ আফ্রিকান হাতির কমে যাওয়ায় বিষয়ে একটি পরিসংখ্যান দেয়। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৬-এ বিশ্ব জুড়ে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার আফ্রিকার হাতি ছিল। ২০১৩ সালে তা কমে গিয়ে হয়েছে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার। ২০১৪-য় শুধুমাত্র জিম্বাবোয়েতে হিওয়েঞ্জ জাতীয় উদ্যানে ৩০০টিরও বেশি হাতি শিকার করা হয়েছে।

শুধু হাতিই নয়, শিংয়ের ঔষধি অবদান আছে মনে করায় চোরাশিকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি গন্ডারও। ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বরে ৭৩০টি গন্ডার হত্যা করা হয়। শিকারের ফলে পৃথিবীতে আমুর লেপার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০টি। ২১০০ সালের মধ্যে মেরু ভল্লুকের একটিও প্রজাতি বেঁচে থাকবে না বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

• ডগ ফাইটিং

দণ্ডনীয় অপরাধ অথচ আইনকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়েই পৃথিবীর নানা প্রান্তে কুকুরদের এন্টারটেনমেন্টের সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডগ ফাইটিং’।

বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে এখনও ডগ ফাইটিং বিনোদনের মূল আকর্ষণ। কুকুরদের উপরে এই অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হতে আমেরিকার একটি সংস্থা সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেল (এএসপিসিএ) সাধারণ মানুযের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এপ্রিলকে বেছে নিল ন্যাশনাল ডগ ফাইটিং বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার বিষয়ে। গোটা এপ্রিল মাস জুড়ে সচেতনতা প্রসারের কাজ করেছে ওই সংস্থা। তাদের দাবি, ডগ ফাইটিং ইদানীং বহু দেশের বিনোদন এবং একই সঙ্গে উপার্জনের অন্যতম সহজ উপায়। রাস্তাঘাটে কুকরদের একে অপরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিতে দীর্ঘ দিন তাদের না খাইয়ে রাখা হয়। এমনকী, মারধর-সহ নানা ভাবে শারীরিক অত্যাচার করা হয়। ১৪ ফুট দীর্ঘ এবং ১২ ফুট চওড়া একটি ঘেরা জায়গায় মধ্যে কুকুরদের মৃত্যু-যুদ্ধে সামিল করা হয়। সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং উপযুক্ত আইন প্রণনয় করেই একমাত্র কুকুরদের রক্ষা করা সম্ভব বলে ওই সংস্থার দাবি।

আপনি কি ঝকঝকে ত্বকের অধিকারী?

তা হলে আপনি নিশ্চয়ই মনে করেন, আপনার ত্বক এক্কেবারে জীবানুমুক্ত!

কিন্তু আপনার সে ধারণাটি যদি ভুল হয়! অবাক হচ্ছেন?

দেখতে ঝকঝকে হলেও আদ ত্বকে বসবাস করে কয়েক লক্ষ আনুবীক্ষণিক জীব। চোখে দেখা না গেলেও অনেকটা মাকড়সার মতো দেখতে আটপেয়ে এই জীবগুলি কিন্তু আপনার ওই ঝকঝকে ত্বকের উপরেই ঘোরাফেরা করছে। এবং আপনার ত্বক থেকেই তাদের খাদ্যের যোগান হয়। সেখানেই তারা বংশবিস্তার করে ও মারা যায়।

তবে আনুবীক্ষনিক এই জীবেদের মোকাবিলা করতে যারা ইতিমধ্যেই কড়া কোনও ‘ফেস ওয়াশ’ কেনার মনস্থির করেছেন, তাঁদের জেনে রাখা দরকার এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই। আনুবীক্ষনিক এই জীবগুলি সাধারনত ক্ষতিকারক নয়। উল্টে ত্বকের উপরে জমে থাকা মরা কোষ খেয়ে আপনার ত্বককে খানিকটা চনমনে করতেও সাহায্য করে। তবে রাস্তাঘাটে চোখে পড়া ত্বকের অনেক সমস্যার কারণও হতে পারে।

তবে শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীদের দাবি অনুযায়ী দীর্ঘ বছর ধরে একই ভাবে ত্বকে বসবাস করায় আমাদের অভিব্যক্তির ইতিহাসের খোঁজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে এগুলি। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জেনেছে, মানুযের মুখে বসবাস করা এই জীবগুলির সঙ্গে কুকুরের দেহে থাকা এক ধরনের মাইট‌্সের প্রজাতির মিল রয়েছে। যা কি না কুকুরের বন্য প্রজাতি শিয়ালের থেকেই কুকুরের দেহে এসেছে এক সময়ে।

১৮৪২ সালে ফ্রান্সে প্রথম এই জীবগুলি (মাইট‌্স)-র খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা। দেহের অন্যান্য অংশের তুলনায় মুখের ত্বকেই এদের বেশি পাওয়া যায়। এর কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীদের দাবি, মুখের ত্বকেই সবচেয়ে বেশি সিবেসিয়াস গ্রন্থি রয়েছে। এই সিবামই জীবগুলির খাদ্য। তা ছাড়াও ত্বকের মরা কোষ এবং বেশ কিছু ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া কোষ খেয়ে ত্বককে স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখতেও সাহায্য করে থাকে। তবে অনেক সময় অক্ষতিকারক এই জীবগুলি মারা যাওয়ার পরে ত্বকে সেগুলির ‘ডেব্রিস’ জমতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা এই আবর্জনায় ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে। সেখান থেকেই ত্বকের রোগ হয়।

পর্যটন কেন্দ্র

• সুরের শহর সল্‌জবুর্গ

পূর্ব ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার এক সুন্দর পুরনো শহর হল সল্‌জবুর্গ। তবে এই শহরের বেশি পরিচিতি ‘মোত্জার্টের শহর’ হিসাবেই। এ ছাড়াও উত্সবের শহর, সুরের শহর, বারোক স্থাপত্যের শহর, ফোয়ারার শহর-এর শিরেপা রয়েছে সল্‌জবুর্গের ঝুলিতে।

সৌন্দর্যের সঙ্গে নান্দনিক সৃষ্টির এমন অসাধারণ সংমিশ্রণ একটা শহরকে যে কত অনিন্দ্য, স্বর্গীয় রূপ দিয়েছে সল্‌জবুর্গে পা দিলেই তা বোঝা যায়। সল্‌জবুর্গ শব্দের অর্থ ‘সল্ট ক্যাসেল’। এই শহরের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে হলিউডের সর্বকালের সেরা ক্লাসিক ছবি ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’।

আল্পস পর্বতমালার পাদদেশ ছুঁয়ে উত্তর দিক থেকে বয়ে চলেছে শান্ত সুন্দর সালজাক নদী। নদীর দুই তীর বরাবর গড়ে উঠেছে সল্‌জবুর্গ শহর। বাঁ দিকে পুরনো আর ডান দিকে নতুন এলাকা নিয়ে সলজবুর্গ বর্তমানে অস্ট্রিয়ার অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। নতুন এলাকায় গড়ে উঠেছে স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন মিরাবল গার্ডেন। পাহাড়ের উপর বিখ্যাত ঐতিহাসিক হোহেনসলজবুর্গের দুর্গের পাদদেশে এই যথার্থ প্রতীকী প্রমোদ উদ্যান। আর্চবিশপ উল্ফ দিয়েত্রিস প্রেমিকার জন্য সপ্তদশ শতাব্দীতে বানিয়েছিলেন এই মিরাবল প্রাসাদ ও উদ্যান। এর বিশাল ফোয়ারা আর রংবেরঙের গোলাপ বাগিচার আজও পর্যটকদের মোহিত করে। এখানে দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে— সেন্ট সেবাস্তিয়ানের সমাধি, ন্যাশনাল হিস্টরিক প্যালেস অফ লিওপোল্ড স্ক্রোন, পার্ক এবং ক্যাসেলে সাজানো হেলব্রান। আছে ফর্মুলা ওয়ান রেসিং কার মিউজিয়াম এবং শহর থেকে কিছুটা দূরে হিটলারের আবাসস্থল।

পুরনো সলজবুর্গ হল শহরের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। বারোক স্থাপত্যরীতি অনুসারে তৈরি একাধিক টাওয়ার, গির্জা এবং ছাড়াও এখানে আছে গথিক স্থাপত্যের বহু নিদর্শন। এ জন্য সলজবুর্গকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দিয়েছে। সলজবুর্গের অন্য দ্রষ্টব্যগুলি হল— হোহেনসলজবুর্গ দুর্গ, সেন্ট পিটার্স অ্যাবে, সলজবুর্গ ক্যাথিড্রাল, প্রিন্স আর্চ বিশপের বাসস্থান রেসিডেন্স প্যালেস ইত্যাদি। তবে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান মোত্জার্টের বাড়ি। শহরের অন্যতম সুসজ্জিত রাজপথ গেট্রেইডগ্যাসের উপর মোত্জার্টের বাড়িটির অবস্থান। আজ এটি ‘মোত্জার্ট মেমোরিয়াল’ নামে বিশ্বখ্যাত।

ঘরের কাছে এমন এক অসাধারণ আরশিনগর আছে তা কে জানে! সুদূর কোনও দেশ বা রাজ্য নয় পশ্চিমবঙ্গেরই এক কোণে সৌন্দর্যের চাদরে নিজেকে মুড়ে করে রেখেছে এই স্থান। সারা বিশ্বের ভ্রমণপিপাসুদের মানচিত্রে ধীরে ধীরে পাকা জায়গা করে নিয়েছে এক ছোট্ট জনপদ লামাহাটা। উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ৬৫ কিমি দূরে দার্জিলিং-কালিম্পং রাজ্য সড়কের উপরে তিব্বতি লামাদের জনবসতি ‘লামাহাটা’ যেন অপরূপ সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে বসে আছে। কখনও মেঘ, কখনও বৃষ্টি আবার কখনও বা কুয়াশার চাদরে ঘন ঘন এর রূপ বদলায়। এখানে এলেই চোখে পড়বে রংবেরঙের ফুল আর প্রজাপতির মেলা। সব মিলিয়ে লামাহাটা যেন কোনও এক অজানা চিত্রশিল্পীর রঙীন ক্যানভাস। রয়েছে দুষ্প্রাপ্য অর্কিড বাগান, ‘হিল টপ ওল্ড ফোর্ট’। লামাহাটার আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে ‘ডেন্সধূপি প্ল্যান্টেশন’, টাকদহ অর্কিড সেন্টার, চা বাগান আর হেরিটেজ ঝুলন্ত সেতু। আর উপরি পাওনা হিসেবে মিলবে যারা ট্রেকিংয়ের সুযোগ।

• মন্দিরনগরী তিরুচিরাপল্লী

কাবেরি নদীর তীরে প্রায় ২৫০০ বছর পুরনো এই শহর একদা ত্রিরুশিরাপল্লী- তারপর ত্রিচিনপল্লী এবং বর্তমানে তিরুচিরাপল্লী বা সংক্ষেপে ত্রিচি নামে পরিচিত। একসময় চোল রাজাদের সাম্রাজ্য ছিল এখানে। পরে পল্লব এবং পাণ্ডবরা রাজত্ব করেন। তাঁদের আমলে সৃষ্ট স্থাপত্যশিল্প ছড়িয়ে রয়েছে তিরুচিরাপল্লীর আনাচ-কানাচে। তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই থেকে ৩২২ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক শহরে। ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই শহরের প্রধান আকর্ষণগুলি হল—

• রকফোর্ট- শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রাগৈতিহাসিক যুগের ২৭৩ ফুট উঁচু মনোলিথিক পাথর। শহরের সব জায়গা থেকেই দৃশ্যমান এই পাথর। এর উপর একসময় পল্লব রাজাদের দুর্গ ছিল। বর্তমানে দুর্গটি ধ্বংসপ্রাপ্ত। পাহাড়ের উপর রয়েছে গণেশ মন্দির এবং একটি শিব মন্দির।

• শ্রীরঙ্গম মন্দির- ভারতের অন্যতম পবিত্র বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র কাবেরী এবং তার শাখা নদী কোল্লিডামের মধ্যবর্তী এক দ্বীপভূমি। ৭২ মিটার উঁচু এই মন্দির উচ্চতার কারণে সুবিদিত। বিষ্ণু এখানে অনন্ত শয্যায় শায়িত। মন্দিরের গম্বুজটি স্বর্ণখচিত। গোপুরমগুলিও বিস্ময়কর। ২১টি সুদৃশ্য গোপুরম আছে। গোপুরম সহ-মন্দিরের মোট আয়তন দেড় বর্গ কিমি। মন্দিরের ভিতরে গরুড়ের মূর্তিটি অসাধারণ।

• শ্রীজম্বুকেশ্বর মন্দির- শ্রীরঙ্গম থেকে তিরুভনাইক্কালে অবস্থিত মন্দিরটি চোল রাজাদের হাতে নির্মিত। মন্দিরের গঠনশৈলী অসাধারণ। শিব এখানে আরাধ্য দেবতা। এটি দক্ষিণের পঞ্চভূত শিবলিঙ্গের অন্যতম।

• গ্র্যান্ড আনিকেট ব্যারেজ- শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে কাবেরি নদীর এই বাঁধটি দ্বিতীয় শতকে চোল রাজা কারাইকালানের আমলে নির্মিত। বাঁধটির ৩২৯ মিটার লম্বা এবং ২০ মিটার চওড়া। প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই মনোরম।

• কোল্লি হিলস- শহর থেকে ৮০ কিমি দূরে বিভিন্ন মশলা এবং ফলের বাগান ঘেরা সুন্দর শৈলবাস যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। উচ্চতা ১৩০০ মিটার। এটি পূর্বঘাট পর্বতমালার অংশ।

শহরের অন্য দ্রষ্টব্যগুলির মধ্যে প্রাচীন মারিয়াম্মান মন্দির, দশম শতকে নির্মিত নাদির শাহ দরগা, ক্রাইস্ট চার্চ উল্লেখযোগ্য।

• গ্যাংটকের আন্তর্জাতিক পুষ্প উত্সব

ভারতের অতি পরিচিত শৈলশহর গ্যাংটক। প্রতি বছর মে মাসে এখানে আন্তর্জাতিক পুষ্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এক মাস ধরে এই প্রদর্শনী চলে রাজভবনে। দেশ-বিদেশের হরেক রকমের পুষ্প সম্ভারে সাজিয়ে তোলা হয় রাজভবন চত্বর। বাহারি ফুলের পাশাপাশি দেখা মেলে প্রায় ৬০০ বিরল প্রজাতির অর্কিডের। এছাড়াও নানা দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির গুল্ম এবং বৃক্ষের দেখা পাওয়া যাবে এখানে। তাই ওই সময় যাঁরা গ্যাংটকে ঠান্ডার আমেজ নিতে যাবেন, বাড়তি পাওনা হিসাবে এই রং-বাহারি প্রদর্শনীর স্বাদও পাবেন।

বর্ধমানের কালনার একটি অন্যতম আকর্ষণ ভবা পাগলার ভবানী মন্দির। এই মন্দিরের বাৎসরিক উত্সবকে কেন্দ্র করে উত্সবের চেহারা নেয় কালনার জাপট এলাকা। তবে শুধু বর্ধমান বা পশ্চিমবঙ্গই নয়, দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে। প্রতি বছরের মত এ বছরেও বৈশাখের শেষ সপ্তাহে ২৫ বৈশাখ এখানে বাৎসরিক উত্সব শুরু হবে। চলবে তিন দিন ধরে। আয়োজকরা জানান, মন্দির প্রতিষ্ঠা করার পরেই বৈশাখের শেষ শনিবার বিশেষ উৎসব শুরু করেছিলেন ভবা পাগলা। তার পর থেকে প্রতি বছরই বৈশাখ মাসের শেষ শনিবার এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ওই মন্দিরে।

এ বার জেনে নেওয়া যাক কে এই ভবা পাগলা! এ দেশে কালী সাধক হিসেবে যাঁরা অন্যতম ভবা পাগলা তাঁদের মধ্যে একজন। বাংলাদেশের ঢাকায় জন্ম কালী সাধক ভবা পাগলার। বাংলাদেশে জন্ম হলেও তিনি এই বাংলার নানা গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই বাংলার একাধিক স্থানে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে আজও মা কালী বিভিন্ন নামে পূজিত হয়ে চলেছেন। ভবা পাগলার প্রতিষ্ঠিত মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম কালনা শহরের জাপট এলাকার ভবানী মন্দির। জীবনের বেশির ভাগ সময় এবং শেষ জীবন এখানেই কাটিয়েছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৫১ সালে বাংলাদেশ থেকে জাপট গ্রামে এসে ভবানী মন্দির তৈরি করেছিলেন ভবা পাগলা। শুধু সাধন-ভজনই নয়, এই মন্দির ছিল তাঁর সাহিত্য চর্চার জায়গাও। কালী সাধনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অসংখ্য গান ও কবিতাও রচনা করেছেন। তাঁর পরিবার এবং ভক্তদের দাবি, এখনও পর্যন্ত ভবা পাগলার ২৫ হাজার গানের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে।

মন্দিরের বাৎসরিক উত্সবকে কেন্দ্র করে মন্দির প্রাঙ্গণে মেলার আসর বসে। প্রতি বছর উৎসবের আগে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সাধু-সন্তরা ভিড় জমাতে শুরু করেন এখানে। মন্দির প্রাঙ্গনেই তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মন্দিরে ভিড় জমান বাউল, কবিয়াল ও কীর্তনের দল। মন্দির সংলগ্ন মঞ্চে বসে শিল্পীরা ভবা পাগলার গান শোনান। চলে ধর্মসভা। বর্তমানে ভবানী মন্দিরের বাৎসরিক উত্সবের দায়িত্বে রয়েছেন ভবা পাগলার পৌত্ররা। তাঁদের দাবি, গত বছর উৎসব উপলক্ষে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এসেছিলেন কালনার এই মন্দিরে। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে আশা তাঁদের।

বিষ্ণুপ্রিয়া ও মহাপ্রভুর বিবাহের তিথিতে পালিত উত্সব ফুলদোল নামে পরিচিত। বৃন্দাবনে এই উত্সব ফুলবাংলা নামে পরিচিত। নবদ্বীপের ছোট বড় অসংখ্য রাধা-কৃষ্ণ বা মহাপ্রভু মন্দিরে প্রতি বছর বৈশাখের ওই তিথিতে এই ফুলদোল পালিত হয়। ওই দিন মহাপ্রভুকে পরানো হয় গরদের জোড়।

জুঁই, বেল, গন্ধরাজ কুন্দ ফুলের সাজে সজ্জিত করা হয় বিগ্রহকে। ওই সময় প্রতি দিন বিকেলে বিগ্রহকে দেওয়া হয় পাঁচ রকম শরবত। তাতেও বৈচিত্র চোখে পড়ার মত।

মহাপ্রভু মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, বলদেব মন্দির, মদনমোহন মন্দির, জন্মস্থান আশ্রমের মতো প্রাচীন মন্দিরগুলোতে দেবতার জন্য ফল পাঠানোর প্রথা রয়েছে। রাতে দেবতাকে দেওয়া হয় ‘পখাল’। সাদা ধবধবে চালের অন্ন পাক করে সারা দিন সুগন্ধি জলে ভিজিয়ে রাখা হয়। সন্ধ্যায় তার সঙ্গে মেশানো হয় সাদা দই, আদা-কাঁচা লঙ্কা, জিরে গুঁড়ো, গোলমরিচ। সঙ্গে থাকে গন্ধরাজ লেবু। প্রথমেই যা নজরে পড়ে, তা হল ভোগের পরিবর্তন। গুরুপাক পঞ্চব্যাঞ্জনের পরিবর্তে দেওয়া হয় শুক্তো, মরসুমী ফল, নানা রকমের শরবত, ঘোল, দই। এখানেই শেষ নয়। যত বড় মন্দির তার বিগ্রহের পোশাকের জৌলুসও তত বেশি। ভেলভেট, মখমল, জরি-চুমকির পোশাকের বদলে বিগ্রহকে পরানো হয় আদ্দির পোশাক। তাঁর শোওয়ার জায়গায় পাতা হয় শীতল পাটি। বিগ্রহের গায়ে পুরু করে দেওয়া হয় চন্দনের প্রলেপ। গ্রীষ্মের দ্বিপ্রহরে একটি বড় পাত্রে সুগন্ধি মেশানো জলের মধ্যে রাখা হয় বিগ্রহকে। ব্যতিক্রমী এই সেবার পোশাকী নাম ‘জলকেলি’।

পরিষেবা

• ই-টিকিটে বাসে করে কাজিরাঙা

ট্রেনের পরে এ বার বাসের টিকিটও কাটা যাবে ইন্টারনেটে। তবে সব জায়গার নয়। আপাতত শুধু কাজিরাঙা ঘোরার জন্যই মিলছে এই সুবিধে। বাসযাত্রীদের জন্য ই-টিকিট পরিষেবা চালু করছে অসম রাজ্য পরিবহণ নিগম (এএসটিসি)। বাসের টিকিট মিলবে কি না, কোন জায়গা থেকে কখন বাস ছাড়বে— এ সব অনিশ্চয়তায় অনেকের কাজিরাঙা ভ্রমণের ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়। সে দিকে নজর রেখেই ই-টিকিট পরিষেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পরিবহণ মন্ত্রী জানান, দ্রুত অসমে ই-টিকিট ব্যবস্থা চালু করা হবে। এতে পর্যটকদের যেমন সুবিধা হবে, তেমন রাজ্যেরও লাভ হবে। কারণ পর্যটক সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িয়ে থাকে। ই-টিকিট পরিষেবা চালু হলে এএসটিসির টিকিট বিক্রিও বেড়ে যাবে। বাস পাওয়ার সমস্যাও থাকবে না।

দেশের প্রধানমন্ত্রীর দিন কোথায়, কেমন ভাবে কেটেছে— তা নিয়ে কোনও ধারণা আছে কি? প্রধানমন্ত্রীদের আত্মজীবনী এ ব্যাপারে কিছু আলো ফেলতে পারে বটে, তবে সেখানেও মিশে থাকে পাঠকের কল্পনা। সব মিলিয়ে আপনারই বেছে নেওয়া ব্যক্তিটি থেকে যান সে-ই আপনার ধরা-ছোঁওয়ার বাইরে। তবে নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে এ সমস্যা হবে না। হলফ করে বলা যায়। মাত্র ৬০০ টাকা খরচ করলেই আহমেদাবাদ বা গাঁধীনগর থেকে এ বার হাজির হওয়া যাবে মোদীর গ্রামের বাড়ি বদনগরে। পরিষেবাটির সৌজন্যে ‘মোদী ভিলেজ টুর’। সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ুন আহমেদাবাদ বা গাঁধীনগর থেকে। বদনগর পৌঁছে ঘুরে-ফিরে দেখুন প্রধানমন্ত্রীর জন্মস্থল, প্রাথমিক স্কুল। এক ঝলক চোখ রাখুন হাই স্কুলেও; ওখানেই যে জীবনে প্রথম বার মঞ্চে ওঠেন দেশনায়ক। যদিও সেই মঞ্চ রাজনীতির নয়— নাটকের! ভাবছেন, কয়েকটা ঘর-বাড়ি দেখে কী ভাবে চেনা যাবে প্রধানমন্ত্রীকে? চিন্তা নেই, এই সফরে মোদীর ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গেও দেখা হবে আপনার। তাঁদের মুখ থেকেই না হয় শুনবেন প্রধানমন্ত্রীর ছোটবেলার কীর্তি! সব শেষে আপনি এসে দাঁড়াবেন বদনগর রেল স্টেশনের সে-ই চায়ের দোকানে, যেখান থেকে শুরু হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীত্বের দিকে তাঁর পথ হাঁটা। ইচ্ছে হলে সেই দোকানের এক ভাঁড় চায়ের স্বাদ নিন। তা ছাড়া দুপুরের খিদে মেটানোর জন্য সাবেকি গুজরাতি খানার ব্যবস্থাও থাকবে টুরে। সেই সুখাদ্যের স্বাদ নিতে বাড়তি কোনও খরচও লাগবে না। মন্দ কী!

• সচিনের সঙ্গে সফরে

সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে ঘুরতে যেতে আপনার কেমন লাগবে? মাস্টার-ব্লাস্টারের ভক্তরা যে এই সুযোগ পেলে খুব-ই খুশি হবেন, তাতে আর আশ্চর্য কী! তবে যাঁরা সচিনের তেমন ভক্ত নন, তাঁদেরও কি ব্যাপারটা খারাপ লাগার কথা? ভেবেই দেখুন না একবার— সচিন আপনার সঙ্গে এক ফ্লাইটে! এখানেই কিন্তু শেষ নয়। ফ্লাইট থেকে নামার পর তিনি আপনাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবেন বেশ কয়েকটা জায়গা, বেছে নিতে সাহায্য করবেন পছন্দের গন্তব্য। ব্যাপারটার এক বর্ণও কিন্তু মিথ্যা নয়। সত্যি সত্যিই এমনটা এ বার হতে চলেছে। আপনার ভ্রমণকে সুখের করতে এই পরিষেবা দেবেন বিশ্ব-ক্রিকেটের প্রথম সারির এই তারা। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এক ভ্রমণ-সংস্থার সঙ্গে এর জন্য গাঁটছড়াও বেঁধে ফেলেছেন সচিন। প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার আর সচিনের ঘুরতে যাওয়ার গন্তব্য হিসেবে ভ্রমণ-সংস্থা বেছে রেখেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন আর জাপানকে। কী ভাবছেন? রীতিমতো টাকা খরচ করতে পারলে তবেই আপনি ঘুরতে যেতে পারবেন তেন্ডুলকরের সঙ্গে? তা, খরচ তো একটু পড়বেই। হাজার হোক, তারা বলে কথা! তবে ভ্রমণ-সংস্থা এ ব্যাপারেও আশ্বস্ত করছে আগ্রহীদের। সচিনের সঙ্গে যেমন বেড়ানো যাবে ব্যয়বহুল টুরে, তেমনই মাঝারি খরচেও বেরিয়ে পড়া যাবে ‘দুগ্গা দুগ্গা’ বলে! এর পর বাকি থাকে কেবল একটাই প্রশ্ন— খরচটা ঠিক কত? সে খবরও মিলবে পাকাপাকি ভাবে এই সফর শুরু হয়ে গেলে!

সংবাদ সংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন