Puja Trip from Kolkata

রাজবাড়ির ঠাকুর দেখা হবে, দেখতে পাবেন মাটির পুতুলও, কলকাতা ছাড়িয়ে কোথায় যাবেন এক দিনে?

পুজোর দিনগুলি কলকাতার বাইরে কোথাও যেতে চান? চারচাকাকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়ুন। কলকাতার কাছে কোন গন্তব্যে গেলে পুজো-প্রকৃতি, দুই-ই উপভোগ্য হবে?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৩৯
Share:

কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দুর্গামূর্তি। —ফাইল চিত্র।

কলকাতার ঠাকুর তো দেখাই হয়। তবে যদি কলকাতা ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়েন, ঘুরে নিতে পারেন গ্রামবাংলার পুজোও। ঘোরা, বেড়ানো, খাওয়া— সব মিলিয়ে একটি দিন দারুণ উপভোগ্য হতে পারে।

Advertisement

পুজোয় চলুন কৃষ্ণনগর। সেই কৃষ্ণনগর, যার পরিচয় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নামে। যার নামের সঙ্গে জুড়ে গোপাল ভাঁড়ের গল্প। যেখানে গেলে সরপুরিয়া, সরভাজার আসল স্বাদ এখনও পাবেন। আর আছে মাটির পুতুলপট্টি ঘূর্ণি। ঘুরে নিতে পারেন ফুলিয়া আর বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যও। পুজোয় যে কোনও দিন একটু সকাল সকাল চারচাকাকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়লেই হল।

কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগরের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটারের মতো। কোন রাস্তা ধরে এগোবেন, তার উপর নির্ভর করে দূরত্ব কম-বেশি হতে পারে। তবে বেড়ানোই যখন উদ্দেশ্য, তখন ঘুরতে ঘুরতেই পৌঁছন সেখানে।

Advertisement

যাওয়ার পথেই পড়বে ফুলিয়া। শাড়ির জন্য এই জায়গার নাম। কলকাতা থেকে দূরত্ব ৯২ কিলোমিটারের মতো। জাতীয় সড়কের ধারেই কৃত্তিবাস স্মৃতিতোরণ। সেই তোরণ থেকেই দেড় কিলোমিটার দূরে কবি কৃত্তিবাস ওঝার গ্রাম বয়রা, এখনকার নাম ‘কৃত্তিবাস’। কৃত্তিবাসের বাস্তুভিটেয় রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ – ১১০ বছর আগে যার শিলান্যাস করেছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। পাশেই কৃত্তিবাস কূপ। স্মৃতিস্তম্ভের পিছনে এক বিশাল বটগাছ, যার ছায়ায় বসে রামায়ণ লিখতেন কবি। এখানেও রয়েছে একটি প্রস্তরফলক। পাশেই কৃত্তিবাস মন্দির, বয়সে তরুণ।

খানিক দূরে কৃত্তিবাস স্মৃতি গ্রন্থাগার এবং সংগ্রহশালা। রয়েছে বিভিন্ন ভাষায় লেখা রামায়ণের বহু সংস্করণ এবং ৩৬টি তৈলচিত্রে রামায়ণ আখ্যান। নীলাচল যাওয়ার পথে শ্রীচৈতন্য এখানেই হরিদাসের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। হরিদাস ঠাকুরের মন্দিরের পাশেই কৃত্তিবাসের অস্থিসমাধি। কিছুটা দূরে বয়ে চলেছে গঙ্গা। এখনকার টাঙ্গাইল শাড়ির জন্য বিখ্যাত ফুলিয়া তাঁতকেন্দ্র দেখতে ভুলবেন না।

কৃত্তিবাস দেখে চলুন বাবলা গ্রামে

দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। এখানে রয়েছে বৈষ্ণবাচার্য শ্রীঅদ্বৈতের সাধনপীঠ। এখানেই মহামিলন হয়েছিল নিমাই, নিতাই আর অদ্বৈতাচার্যের। সন্ন্যাস গ্রহণের পর এখানেই নিমাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল শচীমায়ের। অদ্বৈতাচার্যের বংশেই জন্ম শ্রীরামকৃষ্ণের স্নেহধন্য, ব্রাহ্ম সমাজ সংস্কারক কেশবচন্দ্র সেনের সহযোগী এবং নব্যবৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর। এই বাবলা গ্রামেই রয়েছে তাঁরও স্মৃতিমন্দির।

চলুন কৃষ্ণনগর

বাবলা থেকে কৃষ্ণনগরের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নামেই এখানকার নাম। রয়েছে রাজবাড়ি। জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিখ্যাত এই স্থান। তবে দুর্গাপুজোও হয় রাজবাড়িতে। বছরভর সেখানে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও, পুজোয় দ্বার অবারিত।

ঘূর্ণিতে তৈরি দুর্গা মূর্তি। দেওয়াল সজ্জায় ব্যবহার করা যায়। ছবি :সংগৃহীত।

কৃষ্ণনগরের সঙ্গে আর এক নাম জড়িয়ে, ঘূর্ণি। জগদ্বিখ্যাত মৃৎশিল্পের বসত। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি দোকান। ছোট-বড় মূর্তি থরে থরে সাজানো। দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও এখানকার মৃৎশিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন পুতুলে নিপুণ ভাবে। দুর্গা, জগদ্ধাত্রীর শৌখিন মূর্তি থেকে মাটির নানা রকম পুতুল, মানুষের জীবনযাত্রা নিখুঁত মডেলে ফুটিয়ে তোলেন শিল্পীরা। কেনাও যায়, দেখাও যায় সেই সব।

এমন নানা ধরনের পুতুল রয়েছে এখানে। ছবি: সংগৃহীত।

তা ছাড়া কৃষ্ণনগরে দেখে নিন দুর্গামন্দির, রোমান ক্যাথলিক চার্চ (২৭টি তৈলচিত্রে যিশুর জীবন কাহিনি), সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী তথা বীরবলের বসতবাড়ি রানিকুটির, রামতনু লাহিড়ীর ভিটেতে কৃষ্ণনগর অ্যাকাডেমি।

কৃষ্ণনগর থেকে চলুন বেথুয়াডহরি

দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। ৬৭ হেক্টরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল – জাতীয় সড়কের ধারেই। ফটক দিয়ে ঢুকেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নামে নামাঙ্কিত প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র। ঘূর্ণির মৃৎশিল্পীদের অতুলনীয় সৃষ্টির মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে। ইটবাঁধানো পথে কিছুটা গেলে তিন পথের মোড়। বাঁ দিকে ঘড়িয়াল পুকুর আর ডান দিকে কচ্ছপ ভরা পুকুর। বেথুয়ার এই জঙ্গলে রয়েছে চিতল হরিণ, সজারু, মেছোবিড়াল, বনবিড়াল, বুনো খরগোশ, বেজি, ভাম ইত্যাদি। মাঝে মাঝে বিচিত্র সব আওয়াজ, পাখির কলতান।

বেথুয়াডহরির ভিতরে সাক্ষাৎ হতে পারে হরিণের সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীত।

বেথুয়ার জঙ্গল দেখে চলে আসুন বেথুয়া বাজারে। সেখান থেকে পাটুলি রোড ধরে বাঁ দিকে কিছুটা এগোলেই বিল্বগ্রাম – ‘পাখি সব করে রব’-এর স্রষ্টা মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জন্মভূমি। বেথুয়ার জঙ্গল ফটক থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার।

কী ভাবে যাবেন?

একাধিক রাস্তা রয়েছে। একটি রাস্তা গিয়েছে চন্দননগর, কাঁচরাপাড়া, কল্যাণী, রানাঘাট হয়ে ফুলিয়া। আর একটি রাস্তা গিয়েছে জাগুলি, হরিণঘাটা, চাকদহ, রানাঘাট হয়ে। কলকাতা থেকে দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার।

কোথায় থাকবেন?

এক দিনে ঘুরে এলে থাকার প্রশ্ন নেই। তবে কৃষ্ণনগর, বেথুয়াডহরি— দুই জায়গাতেই থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

কী খাবেন?

কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত মিষ্টি সরপুরিয়া এবং সরভাজা। এখানকার সাদা নিখুঁতিও চেখে দেখতে পারেন। একাধিক ভাল রেস্তরাঁ রয়েছে। খাওয়ার অসুবিধা হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement