ঘুরে আসতে পারেন বাঁকুড়ার বিসিন্দা পাহাড় থেকে। ছবি: সংগৃহীত।
ঠান্ডার দাপট নেই। তবে সকাল-সন্ধ্যার শিরশিরানিটুকু মন্দ লাগে না। ঝকঝকে রোদ এমন সময় বাড়াবাড়ি মনে হয় না। বরং হিমেল পরশটুকু লাগলেই মন নেচে ওঠে বেড়াতে যাওয়ার জন্য।
শীত জাঁকিয়ে পড়েনি। আবহাওয়াও মনোরম। এমন সময় দু’-তিন দিনের জন্য বেরিয়ে পড়তে মন চাইছে? দূরে নয়, এই বঙ্গেই রয়েছে এমন অনেক জায়গা যেখানে পাহাড়-জঙ্গল সঙ্গ দেবে আপনাকে। যদি সবখানে পাহাড় না-ও থাকবে, মন ভোলাবে অরণ্যের ভিতরে বয়ে যাওয়া নদী।
বিসিন্দা পাহাড়
বাঁকুড়া শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বিসিন্দা পাহাড়। তার মাথা থেকে তাকালে যত দূর চোখ যায়, শুধু চাষজমি, টিলা, গাছপালা। দেখলে মনে হবে, প্রকৃতি যেন সযত্নে তার শ্যামল আঁচল বিছিয়ে দিয়েছে। পাহাড়েই রয়েছে দেবী নাচনচণ্ডীর থান। দিন তিনেকের ছুটিতে ঘুরে নিতে পারেন বিসিন্দা পাহাড়, দুর্গাডিহি, কোরো পাহাড়-সহ বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গা। সড়কপথে গেলে দুর্গাপুর হয়ে গঙ্গাজলঘাটি পার করে বিসিন্দা পাহাড়। শীতের এই মরসুমে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো জেলার আবহাওয়া থাকে বেশ মনোরম। চড়া রোদে খানিক গরম লাগলেও, ছায়ায় গেলেই মেলে শীতল পরশ।
বিসিন্দাকে পাহাড় না বলে টিলা বলাই ভাল। পাহাড় বেয়ে সিঁড়ি উঠেছে ধাপে ধাপে। সিঁড়ি বেয়ে উঠলে প্রথমে পড়বে হনুমানের মূর্তি, তার পর দেখা মিলবে শিবলিঙ্গের। আরও খানিক উপরে উঠলে দর্শন পাওয়া যাবে নাচনচণ্ডীর। তেঁতুলগাছের নীচে দেবীর ছোট্ট পাথুরে মূর্তি। তার চারপাশে রয়েছে সিঁদুর লেপা অসংখ্য মাটির ঘোড়া। দেবস্থান পর্যন্তই সিঁড়ি। তার পর জঙ্গলের মধ্যে পায়ে চলা পথ। সেই পথ ধরেই পৌঁছনো যায় পাহাড়চূড়ায়। উপর থেকে চারপাশের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে বিসিন্দা পাহাড়ের দূরত্ব ২০৪ কিলোমিটার। গাড়িতে গেলে সময় লাগবে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। ট্রেনে বা বাসে করে বাঁকুড়া স্টেশনে এসে গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছনো যায়।
কোথায় থাকবেন?
বিসিন্দা পাহাড়ে থাকার একটি জায়গা। পাহাড়ের নীচের অতি সাধারণ অতিথি নিবাস। আগাম বুকিং করে না এলে ঘর পাওয়া কঠিন।
তুলিন
তুলিনের কাছ দিয়ে বয়ে গিয়েছে সুবর্ণরেখা নদী। ছব: সংগৃহীত।
পুরুলিয়ার প্রতিটি প্রান্তই যেন রূপের ডালি নিয়ে সেজে থাকে। বর্ষা, শীত, বসন্ত— ঋতুভেদে তার রূপ বদলায়। অযোধ্য পাহাড়, গড়পঞ্চকোট সার্কিট নিয়েই পর্যটকদের উৎসাহ বেশি। তবে পুরুলিয়ার ঝালদা মহকুমাটিও কম সুন্দর নয়। ঝালদা সফর শুরু করতে পারেন তুলিন দিয়েও। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী ছোট্ট গ্রাম তুলিন। বয়ে গিয়েছে সুবর্ণরেখা। মুরী জংশন থেকে গাড়িতে পৌঁছোনো যায় সেখানে। তুলিন রেল স্টেশনও আছে অবশ্য। এখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় একাধিক বাঁধ, ঝর্না। তবে যদি কোথাও যেতে ইচ্ছা না করে তা হলে অলসযাপনেও প্রকৃতির সান্নিধ্য মন্দ লাগবে না। গাছগাছালি ঘেরা শান্ত স্থান ভুলিয়ে দেবে শহুরে জীবনের ক্লান্তি।
আর যদি মন চায় বেরিয়ে পড়তে পারেন গাড়ি নিয়ে। বাইক নিয়েও অনেকে পুরুলিয়ার আনাচকানাচ উপভোগ করেন। তুলিন থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে মুরুগুমা জলাধার। পাহাড় ঘেরা মুরুগুমা দেখতে আর পাঁচটি জলাধারের চেয়ে আলাদা লাগে। মনে হয়, পাহাড়ের অংশবিশেষের ফাঁক দিয়ে যেন এঁকেবেঁকে গিয়েছে জলাধারটি। অরণ্যঘেরা স্থানটি অত্যন্ত মনোরম।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেনে গেলে নামতে হবে মুরী জংশনে। হাওড়া থেকে রাতের ক্রিয়াযোগ এক্সপ্রেস ধরলে ভোর চারটে নাগাদ পৌঁছবেন মুরী জংশন। এ ছাড়াও রাঁচী শতাব্দী, রাঁচী ইন্টারসিটি, রাঁচী বন্দে ভারত–সহ একাধিক ট্রেন আছে মুরী যাওয়ার জন্য। মুরী থেকে তুলিনের দূরত্ব সড়কপথে ৫ কিলোমিটারের মতো।
কোথায় থাকবেন?
তুলিনে থাকার সুবন্দোবস্ত রয়েছে। হোম স্টে, হোটেল দুই-ই মিলবে।
হাতিবাড়ি
হাতিবাড়ির অরণ্য। ছবি: শাটারস্টক।
হাতিবাড়ি নামের সঙ্গেই জড়িয়ে এই স্থানের গুরুত্ব। হাতির করিডর রয়েছে কাছাকাছি। নিরালা পরিবেশে, সবুজের সান্নিধ্যে এক বা দু’টি দিন কাটাতে চাইলে ঝাড়গ্রামের এই স্থান আদর্শ। হাতিবাড়িতে শাল গাছের ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে সুবর্ণরেখা। গভীর রাতে হাতির ডাকও এখানে শোনা যেতে পারে। জঙ্গল এবং নদীর রূপ দেখেই কাটিয়ে দিতে পারেন এক থেকে দু’টি দিন। ঘুরে নিতে পারেন ঝিল্লি পাখিরালয়। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, কনকদুর্গা মন্দিরও বেড়ানোর তালিকায় জুড়ে নিতে পারেন।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেনে যেতে হলে, হাওড়া থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন আছে। ট্রেনে কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রামে পৌঁছতে সময় লাগে কম পক্ষে আড়াই ঘণ্টা। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে গোপীবল্লভপুর হয়ে যেতে হবে হাতিবাড়ি।
কোথায় থাকবেন?
পশ্চিমবঙ্গ বনোন্নয়ন নিগমের অতিথি আবাস রয়েছে। অরণ্যের ভিতরে সেটাই সবচেয়ে সুন্দর থাকার জায়গা।